রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৫...
একটা[ভয়]কষ্টলজ্জা
মি সহনাগরিকদের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল। বিশেষত, নেড়িগণের ক্ষেত্রে তো বটেই। তেনাদের মতিগতি বিশেষ বুঝতে পারি না। সকালের দিকে খুব উদ্বিগ্ন কিংবা বিরক্ত হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি-নিরীক্ষণ করে, দুপুর থেকে উদাসীন এবং রেলাবান ভাবভঙ্গি, আর রাত্রে হঠাত্‌ কঠোর অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে নেয়। আমি একটু বেশিই ভয়ে থাকি, তাই তেনাদের এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বহু বহু কাল। কিন্তু বছর দুয়েক আগে জানতে পারলাম, সিদ্ধান্তটা নিতান্তই একতরফা।
রাতের শো’য় সিনেমা দেখে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম দুজন। বাড়ির কাছেই মাল্টিপ্লেক্স, তাই আর গাড়িঘোড়ার ঝামেলায় যাইনি। হঠাত্‌ একটা গলির মোড় ঘুরতেই দেখি দুটো নেড়ি কুকুর সোজাসুজি আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মানে একদম আমার চোখের দিকে। তীব্র তিরস্কারওলা দৃষ্টি। তাতে আবার শিকারের হ্যাবিটের প্রাচীন ছায়াও রয়েছে! আমি ভয়ে প্রায় হিপনোটাইজ্ড। হাঁটার স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছি না। সেই জন্যেই কি না কে জানে, ওদের গলা থেকে হঠাত্‌ চাপা গর্র্র্ গর্র্র্ শব্দ বেরোতে লাগল, আর তাই শুনেই বোধহয়, কোত্থেকে কোত্থেকে সব বসে-থাকা শুয়ে-থাকা নেড়িরা অন্ধকার ফুঁড়ে উঠে আসতে লাগল দলে দলে। এসেছিল অবশ্য মোট ছ’জন, কিন্তু তখন আমার মনে হয়েছিল এক পাল নেকড়ে। তারা এসেই আমাদের একটা নিখুঁত সার্কল করে ঘিরে দাঁড়াল। যাতে কিছুতেই পালাতে না পারি। তার পর ঠোঁট উঁচিয়ে দাঁত বার করে গর্জন করে তেড়ে তেড়ে আসতে শুরু করল। আমার সঙ্গী তখন চেঁচাচ্ছে, ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না! আমার এক থাবড়া মেরে বলতে ইচ্ছে করছে, ভয় পাব না তো কি কত্তাল বাজাব? এক্ষুনি কামড় খেতে চলেছি! তার মানেই তো চোদ্দোটা ইঞ্জেকশন। অবশ্য এতগুলো কুকুর কামড়ালে চুরাশিটাও হতে পারে!
ওদের গর্জনে কিছু একটা আছে, রক্ত হিম হয়ে যায়। আমার বসে পড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। হঠাত্‌ মনে পড়ে গেল, কে যেন বলেছিল, ওদের দিকে রে-রে করে ফিরতি-তেড়ে গেলে নাকি ওরা পালিয়ে যায়। যা থাকে কপালে বলে তেড়ে গেলাম। ওরেব্বাবা, ফল পুরো উল্টে গেল। সাংঘাতিক ফেরোশাস হয়ে গেল। আর ক্ষমা করবেই না। আমার সঙ্গীও কারও কারও দিকে তেড়ে যাচ্ছে, তখন সেই কুকুরটা বা কুকুর-দুটো পিছিয়েও যাচ্ছে, কিন্তু তক্ষুনি সেই সুযোগে পেছনের ক্যান্ডিডেটরা আরও গোড়ালির কাছটায় চলে আসছে। দুজন মিলে তো আর একটা গোটা বৃত্তকে কভার করা যাবে না, অন্তত সেই ব্রুস-লি-খ্যামতা আমাদের নেই। আমি বুঝে গেলাম, নিস্তার নেই, আজ হয়ে গেল।
হঠাত্‌ই সামনের বস্তি থেকে কয়েক জন এগিয়ে এলেন। বস্তির লোকেরা কুকুরদের একটুও ভয় পান না, এমন হ্যাট-হ্যাট করে সাংঘাতিক বকলেন এবং একটা লাঠি নিয়ে এক জন এমন তাড়া দিলেন, সবক’টা ঘেউঘেউ করতে করতে পিঠটান। তখনও আমার হৃত্‌পিণ্ড আমার গলার কাছে। থরথর করে কাঁপছি।
কিন্তু কুকুরগুলোই জিতে গেল শেষ অবধি। আর কক্ষনও নাইট শো-তে ছবি দেখতে যাইনি। কোনও কাজের ঠেলায় রাত্রে বাড়ি ফিরতে হলে, কিছুতেই হেঁটে ফিরিনি। আর কোনও দিন, কোনও নেড়ির সঙ্গে দেখা হলে, কিছুতেই তার চোখের দিকে তাকাইনি। স্ট্রেট ল্যাজের দিকে তাকিয়ে থেকেছি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.