আমেরিকার টিএলসি চ্যানেলে ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল এই ডকুমেন্টারি টেলি-সিরিজ। এখানে প্রতি এপিসোডে দুজন মানুষের আজব নেশা দেখানো হয়। নেশা না বলে মুদ্রাদোষ বললে অবশ্য আরও ভাল করে বোঝা যাবে। পাইলট এপিসোডে দেখানো হয়েছিল লোরি আর কেশা নামের দুই মহিলাকে। লোরির বয়স ৩২। আট বছর বয়স থেকে ব্লো-ড্রায়ারকে শয্যাসঙ্গী করে ঘুমোন। তাঁর ব্লো-ড্রায়ারের ওই তাত আর ঘর্র্র্ আওয়াজ নইলে কিছুতেই ঘুম আসে না। তার জন্য ত্বকের ক্ষতি, আগুন লেগে যাওয়া, সব রকমের উত্পাতের সম্ভাবনাকে দিব্যি মেনে নিয়েছেন। কেশা আবার টয়লেট পেপার না খেয়ে থাকতেই পারেন না। গাড়ি, সিনেমা হল, রেস্তরাঁ যেখানেই থাকুন, সামান্য সুযোগ ও সময় পেলেই টয়লেট পেপার চিবুতে শুরু করেন।
যত এপিসোড এগোতে লাগল, তত দর্শকদের চক্ষু ছানাবড়া করে দেওয়ার মতো সমস্ত মুদ্রাদোষী খুঁজে পেতে লাগল চ্যানেল। ২৮ বছরের ইভান। কোনও সোশাল ফাংশানেই যান না। কারণ, গেলেই নাকি বাথরুমে যাওয়া থেকে নিজেকে কিছুতে নিরস্ত করতে পারেন না। বাথরুমের দরজা বন্ধ করে, সেখানকার ঝাঁঝরিতে আটকে থাকা অন্যের চুল খুঁটে খুঁটে তুলতে পারলে, তবে তাঁর শরীর-মনের অদ্ভুত অস্বস্তি ঠিক হয়। একই এপিসোডে দেখা গিয়েছিল নিকোলকে। তিনি বাড়ির দেওয়াল খুঁটে খুঁটে খান। তাই তাঁর গোটা বাড়ির দেওয়াল পলস্তারা-খসা, ফুটো ফুটো।
ক’দিন পরেই আলাপ করানো হল ২৩ বছরের বার্থা’র সঙ্গে। তাঁর পরিবার দুশ্চিন্তায় অর্ধেক। কারণ, তাঁদের বাড়ির মেয়েটি দিনে পাঁচ বোতল নেলপলিশ খাচ্ছেন। তাঁদের দেখেই লজ্জা ভেঙে চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আর এক নিকোল। তিনি তো গত দু’বছর ধরে ডিয়ো-স্টিক ভেঙে ভেঙে খাচ্ছেন, কই কিছু তো হচ্ছে না। ডিটারজেন্ট, ক্লেন্জার, সোফার কুশন রসিয়ে রসিয়ে খাওয়া লোকদের দেখানো হল। এক জন তো শ্যাম্পেনের কাচের গ্লাসটাকেই কড়মড়িয়ে খেয়ে ভারী আনন্দ পান।
|
বেলিন্দা নামের এক মহিলা রাস্তায় বেরিয়ে খালি পাথর সংগ্রহ করেন। যে-সে পাথর হলে চলবে না, একটা নির্দিষ্ট আকৃতির পাথর চাই তাঁর। এক ভদ্রলোক সব পার্টিতে ফার-স্যুট পরে যান। আর তাই, যত ক্ষণ জেগে থাকেন শুধু ফার-স্যুট সেলাই করেন ও পর ক্ষণেই খুঁতখুঁত করে খুলে ফেলেন, তার পর আবার নতুন ডিজাইন নিয়ে সারা রাত যুদ্ধ করেন।
এক পূর্ণবয়স্কা যুবতী নিজেকে মনে করেন জাম্বো সাইজের একটা বাচ্চা! তিনি বেবি-বট্ল থেকে জল খান, দোলনায় ঘুমোন এবং ২৪ ঘণ্টাই ডায়পার পরে থাকেন। এক জন ব্যাগে মথ-বল নিয়ে ঘোরেন আর বার বার শোঁকেন। কেউ একটা মানুষ-সমান পুতুলকে নিজের স্ত্রী মনে করেন, কেউ আবার বেলুনের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করেন। কেউ নিজের গাড়ির প্রতি অনুরক্ত, একান্তে সময় কাটান তার সঙ্গে। এক জন আবার সারা দিন ধরে নিজের গায়ে মৌমাছির হুল ফুটিয়ে যান।
এক বার এক ভদ্রমহিলা স্বামীর মৃত্যুতে এমন শোক পেলেন যে তাঁর ভস্মাধার ব্যাগে পুরে সব জায়গায় ঘুরতে লাগলেন। যখন চ্যানেলে তাঁকে দেখানো হল, তত দিনে হালত আরও খারাপ। তিনি ঢাকনা খুলে ছাই খাচ্ছেন। শীলা নামের একটি যুবতী ২২ বার ব্রেস্ট এনহ্যান্সমেন্ট সার্জারি করিয়েছেন। তাঁর স্তনের পরিমাপ এখন ‘থার্টি এইট কেকেকে’। শুধু দেখতেই আজব লাগে না, তিনি ভয়ানক সংক্রমণে মর-মর। এমন অনেকেরই খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যাঁরা হাত- পায়ের নখ কোনও দিন কাটেন না।
প্রতিটি শোয়ের পর অবশ্য ডাক্তার ও মনোবিদরা এসে সে দিনের তারকাকে পরীক্ষা করেন, এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কী কী করণীয় সে সবও বলে দেন। তবু ভীষণ তর্ক-বিতর্ক-চেচামেচিঁ, ঘেন্নাভরা সমালোচনা চলল এই রিয়েলিটি শো-কে নিয়ে। টিভি- পণ্ডিতরা জঘন্য রেটিং দিলেন। চিকিত্সকরা বললেন, এই অনুষ্ঠানে যাঁদের দেখানো হয় তাঁদের বেশির ভাগেরই সমস্যার জায়গাটা মুদ্রাদোষ নয়। এঁরা প্রত্যেকেই গুরুতর অসুস্থ। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজর্ডার, স্কিট্সোফ্রিনিয়া, সাইকোসিস, অবজেক্টাম সেক্শুয়ালিটি ইত্যাদি রোগের শিকার।
শো কিন্তু বন্ধ হল না। বরং চার সিজন ধরে দৌড়চ্ছে, ২০১৪-য় পঞ্চম সিরিজও শুরু হল বলে। কয়েক মাস আগেই এক মহিলাকে দেখানো হয়েছে, তিনি গত পনেরো বছর ধরে শুয়োর ও মানুষের রক্ত চামচে করে খাচ্ছেন। |