অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করছিল পাড়ারই এক তরুণ। সেটা দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন ওই ছাত্রীর গৃহশিক্ষক। আর সেই ‘অপরাধে’ শিক্ষককে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করল প্রতিবেশী ওই তরুণ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। শুক্রবার রাতে বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় ওই ঘটনার পর গৃহশিক্ষক মনোজকুমার সাহা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরপরেও রেহাই মেলেনি মনোজবাবুর। অভিযোগ, রাত একটা নাগাদ হাসপাতালে এসে ওই দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুনের হুমকি দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোজবাবুর মাথা ফেটে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে বাঁ হাত। মাথার ক্ষতে ৫টি সেলাই দিতে হয়েছে। সিটি স্ক্যান, এক্স-রে ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মাথা ও বুকের আঘাত কতটা গুরুতর সেটা জানা যাবে। ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই শিক্ষক ও ছাত্রীর বাড়ির লোকজন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, “অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হলে ওদের বিরুদ্ধে এমন তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা হবে যাতে আদালত থেকে ওরা কোনওভাবেই শাস্তি এড়াতে না পারে।” যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান অভিযুক্ত শুভ মণ্ডল বহরমপুরের একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। |
পুলিশ সুপার নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও ওই ছাত্রীর পরিবার কিন্তু পুলিশের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। ঘটনার পর ভয়ে ইন্দ্রপ্রস্থের ওই পাড়া ছেড়ে দিতে চান ছাত্রীর মা। তিনি বলেন, “বছর খানেক আগে ওই পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে এসেছি। স্বামী বস্ত্র ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার প্রয়োজনে বছরের বেশ কয়েক মাস রাজ্যের বাইরে থাকেন। মেয়েকে নিয়ে একা থাকি। মাস তিনেক ধরে শুভ নামের ছেলেটি মেয়েকে উত্যক্ত করলেও ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। এখন তো আর এ পাড়াতেই থাকতে পারব না।’’
অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর কথায়, “ঘটনার পরেই রাত এগারোটা নাগাদ বহরমপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে সব জানিয়েছি। মাস তিনেক ধরে প্রতিবেশী শুভ মণ্ডল আমাকে অশ্লীল প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করছে। প্রতিবাদ করায় আমার গৃহশিক্ষককে ওরা আট-দশ জন মিলে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেদম মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়। বাধা দিলে মাকেও ওরা মারধর করে। রাত তিনটে নাগাদ পাড়ায় পুলিশ গিয়েছিল। পুলিশ বলছে তারা কাউকে পায়নি। শনিবার দুপুরে কিন্তু শুভদের দলের কয়েক জনকে আমি হাসপাতাল চত্বরে দেখেছি। তাই সব সময় ভয়ে ভয়ে আছি।”
পেশায় গৃহশিক্ষক মনোজবাবুর বাড়ি বহরমপুর শহরের পুরনো হাসপাতালের পিছনে দরগাতলা পাড়ায়। বছর তিনেক ধরে তিনি ওই ছাত্রীকে পড়ান। মনোজবাবু বলেন, “উত্ত্যক্ত করার কথা ছাত্রী ও তার মা বেশ কিছু দিন ধরেই আমাকে বলছিলেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় ওদের বাড়ি পড়াতে গিয়ে বিষয়টি নিজে চোখেও দেখি। ওই ছাত্রী পাড়ার দোকান থেকে খাতা কিনে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় শুভ ছাত্রীর উদ্দেশে খারাপ মন্তব্য করে। তখনই প্রতিবাদ করি। ওই তরুণ দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।”
শনিবার রাত পৌনে দশটা নাগাদ ওই ছাত্রীকে পড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মনোজবাবু। সেই সময় শুভ ও তার দলবল তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের শয্যায় বসে মনোজবাবু বলেন, “সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা। ওরা আমাকে মারার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ওঁত পেতে ছিল। পুলিশে অভিযোগ জানানোর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই হাসপাতালে ঢুকে ওই দুষ্কৃতীদের দু’জন আমাকে শাসিয়ে গিয়েছে— ‘পুলিশে জানালে ভাল হবে না। পেটে ভোজালি ঢুকিয়ে দিয়ে জানে শেষ করে দেব।’ ওদের স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।” |