|
|
|
|
‘পারস্য দস্যু’র হানায় ফাইনাল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বাংলা
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • ইনদওর |
মোহালি থেকে ফোনে দীপ দাশগুপ্ত-র গলাটা বেশ ক্লান্ত শোনাচ্ছিল। বাংলার নির্বাচক কমিটির প্রধান মধ্যপ্রদেশে নেই, রঞ্জির দ্বিতীয় সেমিফাইনালের কমেন্ট্রি করতে বর্তমানে পঞ্জাবে। ফোনে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন, বিষাদও বাড়ছিল। “কী বলব আর? রঞ্জি সেমিফাইনালে তুমি একশো চোদ্দো করবে, ক্যাচ ছাড়বে, আবার ম্যাচও জিতবে! পরিষ্কার বলছি, লিড একবার দেড়শো চলে গেলে কিছু করার থাকবে না!”
নৈরাশ্যের প্রভূত কারণ আছে। হোলকরের শনিবাসরীয় চিত্রনাট্য সেটা বলবে, বলবে উপরের স্কোরবোর্ড। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের নৈরাশ্য আরও প্রকট হতে পারত, কিন্তু আপাতত বাঁচিয়ে দিয়েছেন বঙ্গ ক্রিকেটের বর্তমান দুই যোদ্ধা। লক্ষ্মীরতন শুক্ল ও অশোক দিন্দা মিলে ‘মুমূর্ষু’ টিমের মুখ থেকে অন্তত অক্সিজেন মাস্কটা খুলে ফেলতে পেরেছেন।
না, রঞ্জি ফাইনালের স্বপ্ন দেখার অবস্থায় বাংলা নেই। সোজাসুজি বললে, ম্যাচ এখন প্রবল ভাবে মহারাষ্ট্রের দিকে। সম্ভাবনার ব্যালান্স শিটে অন্তত সত্তর শতাংশ। কিন্তু ওই সামান্য প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয় না দিন্দা বা অধিনায়কের আপ্রাণ প্রচেষ্টাটা না থাকলে। বাংলা এখনও ম্যাচে নেই যেমন ঠিক। তেমন এটাও ঠিক যে, বিজয় জোল বা কেদার যাদবও আর নেই। চিন্তার ব্যাপার মূলত দু’টো। প্রথমত, মরাঠাদের উইকেট পড়লেও রান ওঠার গতিবেগে কোনও ব্রেকের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ওভার পিছু সাড়ে চার রান উঠে যাচ্ছে, দু’ওভারে তিনটে করে বাউন্ডারি গিলতে হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত, কেদার যাদবের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের অধীশ্বররা চলে গেলেও যাঁরা পড়ে আছেন, তাঁরা বড় কম নন। একটা অঙ্কিত ভাবনে বা একটা রোহিত মোতওয়ানি যে রবিবার সকালে দাঁড়িয়ে বাংলার রঞ্জি-স্বপ্নকে ‘সমাধিস্থ’ করে ফেলবেন না, কেউ বাজি ধরতে পারবে? আরও মারাত্মক হচ্ছে লিডের অঙ্ক। আজই ওটা ‘হাফসেঞ্চুরি’তে ঢুকল। দেড়শো কেন, কাল ওটা ‘সেঞ্চুরি’-র গণ্ডিতে আটকে গেলেও নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই। |
ম্যাচের রং যখন যে রকম |
|
|
সকালে ফালাহের (বাঁ দিকে) মারকাটারি বোলিংয়ে মুষড়ে থাকা কোচ-ক্যাপ্টেন। |
|
কে না জানে, বেঙ্গল টপ অর্ডার নামা মানে এখন ফর্টি ফর ফোর। কিংবা পঞ্চাশ পেরোতে না পেরোতে পাঁচটা। সে সব জায়গা থেকে খেলাটা ধরতেন লক্ষ্মী বা ঋদ্ধি। এ দিন দু’জনের কেউই ক্লিক করলেন না। ফলে শনিবারের দুর্দশা আরও দৃষ্টিকটু। তিরাশিতে পাঁচ, একশো চোদ্দোয় ধ্বংস! অতএব দু’শো পঁচিশ বা আড়াইশোতে মহারাষ্ট্র আটকে গেলেও ঊর্ধ্ববাহু লম্ফঝম্ফের কারণ নেই। বঙ্গ ব্যাটিংয়ের প্রচলিত ‘আইন’ মেনে যদি আবারও একশোর মধ্যে পাঁচ-ছ’টা উড়ে যায়, স্কোরবোর্ডটা কিন্তু দাঁড়াবে ০-৫ কিংবা ০-৬! রিখটার স্কেলে আতঙ্কের ‘কম্পন’ ধরা যাচ্ছে? আরও আছে। আছে আতঙ্কের আরও এক নাম। আছেন সামাদ ফালাহ।
সংক্ষেপে, ‘পারস্য-দস্যু’!
বিকেলের হোলকরে নিজের কপালকে ক্রমাগত শাপ-শাপান্ত করছিলেন ফালাহ। আজ পর্যন্ত তাঁর ক্রিকেট-কেরিয়ারে চারটে হ্যাটট্রিক চান্স মিস হয়েছে। শনিবার আরও একটা হল, একটা বেঁচে থাকল বাংলার পরবর্তী ইনিংসের প্রথম বলের জন্য! যুদ্ধ-বিগ্রহে পারস্যের যে নামডাক আছে, তা সর্বজনবিদিত। এবং জন্মসূত্রে পারস্যজাত (ইরান) মহারাষ্ট্র পেসারকেও দেখা গেল, বাইশ গজে ব্যাটসম্যান পেলে ক্ষেপণাস্ত্র-নিক্ষেপে তিনিও খুব কম যান না! মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে দু’ইনিংস মিলিয়ে সাতটা তুলেছিলেন। আর আজ এক নয়, দুই নয়, একে একে সাতটা তুললেন এক ইনিংসে! বাংলা ব্যাটিংয়ের মস্তিষ্ক থেকে নিম্নভাগ, শিরদাঁড়া সব কিছুকে ছিন্নভিন্ন করে। মহারাষ্ট্র পেসারের পেস বিশেষ নেই, কিন্তু দু’দিকে সুইং করানোর বিরল প্রতিভা আছে। বিশেষ করে, ইনসুইঙ্গারগুলো। বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের কাছে ডেলিভারিগুলো আজ ‘আনপ্লেয়েবল’ থেকে গেল। দু’একটা উদাহরণ চাই?
অভিমন্যু ঈশ্বরন রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ইনসুইং নির্মম ভাবে আছড়ে পড়ল প্যাডে। এবং এলবিডব্লিউ।
সুদীপ চট্টোপাধ্যায়প্রথম বল, ওটাই ইয়র্কার, আবার এলবি, আবার ফালাহ!
অরিন্দম দাস টিমের সর্বোচ্চ রান করে ব্যাড-প্যাডের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বোল্ড। সেই ইনসুইং।
এবং ৪১ ওভার, সওয়া তিন ঘণ্টায় গল্প শেষ। বাংলা ধ্বংস। |
বিকেলে লক্ষ্মীর পাল্টা। শনিবার ইনদওরে। |
যা দেখে প্রেসবক্সে মরাঠা সাংবাদিকদের ‘সরস মন্তব্য’। লাঞ্চ টেবলে জাতীয় নির্বাচক রজার বিনিদের সঙ্গে বসে প্রাক্তন বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালের হাসাহাসি। জাগদালে জানতেন না বাংলার ১১৪-তে অলআউটের খবর। শুনে একটা ‘বিশ্রী’ হাসি এবং মন্তব্য, “অ্যাঁ? অলআউট? পাঁচটা দেখলাম যে? যাই, অশোক মলহোত্রকে একটু খুঁচিয়ে আসি!” পরে গ্যালারিতে ম্যাচ দেখতে আসা নরেন্দ্র হিরওয়ানি বলছিলেন যে, ইনদওরের পিচ তিনি যতটা চেনেন তাতে মহারাষ্ট্রর উৎফুল্ল হওয়ার কারণ এখনও ঘটেনি। চতুর্থ ইনিংস খেলতে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। চতুর্থ ইনিংসে কী হবে, পরবর্তী ব্যাপার। কিন্তু প্রথম দিন দেখা গেল, পিচে বাউন্স এবং পেস দু’টোই আছে। সবুজ ব্যাপারটা অত না থাকলেও। সময়-সময় বাংলার মিডিয়াম পেসার শিবশঙ্কর পালের বল ঋদ্ধিমান সাহাকে কোমরের উপরে ধরতে হল। যেগুলো ইডেনে তিনি হাঁটুর নীচ থেকে কালেক্ট করেন। কিন্তু এই উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকলে রানও আসবে। কারণ, প্রকৃতিগত দিক থেকে হার্ড উইকেট। বল পড়ে ব্যাটে আসছে ভাল। শনিবার কনকনে হাওয়া দিয়েছে, তাই সুইং হয়েছে অধিকাংশ সময়। কিন্তু সেটা বন্ধ হওয়ায় একটা সময় ওভার পিছু পাঁচ রান করেও উঠেছে। মহারাষ্ট্র ব্যাটসম্যানরাই তুলেছেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে পারবে বাংলা?
ঈশ্বর জানেন। শোনা গেল, টস জেতা এমন উইকেটে নাকি ভাগ্যের আশীর্বাদ। এত দিন পাঁচ টাকার কয়েনে ‘হেড’ পড়তে দেখে টসের সময় চোখ বুজে ‘কল’-ও করেছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
আজই বেছে-বেছে ওটা উল্টো পড়েছে! |
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা: ১১৪ (অরিন্দম ৩৭, ঋদ্ধিমান ২৯, ফালাহ ৭-৫৮)
মহারাষ্ট্র: ১৬৪-৪ (খুরানা ৪৮, কেদার ৪০, দিন্দা ২-৪৫, লক্ষ্মী ২-৪৫) |
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
পুরনো খবর: দিন্দার জন্মদিনের পার্টিতেও বাংলার চিন্তা বাইশ গজ |
|
|
|
|
|