হাসপাতালে গোলমাল থেকে টানাপোড়েনের সূত্রপাত। নিয়ম ভেঙে রোগীর বাড়ির লোকজন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরের এই ঝামেলার জেরে পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর, পথ অবরোধে ঘোরালো হয় পরিস্থিতি। স্থানীয় এক কাউন্সিলর ও তাঁর ছেলেও এই ঘটনায় জড়িত বলে জানতে পারে পুলিশ। কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ আসে, অপরাধী যে-ই হোন, ব্যবস্থা নিতে কোনও রকম শিথিলতা চলবে না। অভিযুক্তদের ধরতে এর পরেই পুলিশি তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।
কী হয়েছিল এ দিন?
বেনিয়াপুকুর এলাকার জাননগরের বাসিন্দা পারভেজ আলম পায়ে চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এ দিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁর জন্য খাবার নিয়ে আসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে-সহ চার মহিলা। কিন্তু ভিজিটিং আওয়ার্স পেরিয়ে যাওয়ায় খাবার দিতে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও হাসপাতাল সূত্রের বক্তব্য, চার জন মহিলা খাবার দিতে এসেছিলেন। সময় পেরিয়ে গেলেও দু’জনকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চার জনই জোর করে ভিতরে ঢুকতে চান। তখনই মহিলা পুলিশ দিয়ে তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক সঙ্গে দু’জনের বেশি লোক ওয়ার্ডে ঢুকতে পারেন না। এটাই নিয়ম।” |
পুলিশ সূত্রের খবর, পারভেজের আত্মীয়েরা মহিলা পুলিশদের ধাক্কা মেরে হাসপাতালের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। মহিলা পুলিশদের মারধরও করা হয়। সে সময়ে মহিলা পুলিশরাও পাল্টা ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল চত্বরের পুলিশ ফাঁড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। সে সময়ে ওই মহিলারা ফোনে বাড়ির অন্যদের খবর দেন। তার পরেই ওই পরিবারের কয়েক জন পুরুষ দলবল জুটিয়ে হাসপাতালে হাজির হন। পুলিশ ফাঁড়ির ভিতরে তাঁরা ভাঙচুর চালান, উল্টে দেন টেবিল-চেয়ারও। পারভেজের পরিবারের যদিও অভিযোগ, পুলিশও পাল্টা লাঠিপেটা করেছে। তাতেই পারভেজের এক মেয়ে-সহ কয়েক জন আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, হামলাকারীদের মারে জখম হয়েছেন কয়েক জন পুলিশকর্মীও। তাঁরা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জনা পাঁচেক যুবককে আটক করে বেনিয়াপুকুর থানায় নিয়ে যায়।
এ দিন দুপুরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে পৌঁছতেই দেখা গেল, রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন শ’দুয়েক লোক। তাঁদের দাবি, আটক বিক্ষোভকারীদের ছেড়ে দিতে হবে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে হাজির হন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর গুলজার জিয়া ও তাঁর ছেলে সব্বর আলম। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর বলেন, “পুলিশই পারভেজের মেয়েদের মেরে অন্যায় করেছে। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদেই পাল্টা হামলা হয়েছে।” পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন গুলজার। পরে হাসপাতালে এসে পারভেজের পরিবারকে তিনি জানান, বেনিয়াপুকুর থানায় ডিসি (ইএসডি) ধ্রুবজ্যোতি দে-র সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আটকদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
বাস্তবিক সেটাই ঘটে। সন্ধ্যায় আটক পাঁচ যুবককেই থানা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই পাঁচ জন যুবককে রাস্তা অবরোধ করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে ছাড়া হয়েছে তাঁদের।” পুলিশের একাংশের অভিযোগ, আটক হামলাকারীদের ছাড়ার জন্য কাউন্সিলরই চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু প্রশাসন সূত্রের খবর, সন্ধ্যাতেই ঘটনার খবর পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক রং না দেখেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। তার পরেই অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়।
কিন্তু কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি, এটা ঠিক নয়। বিকেলেই ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছিলেন তদন্তকারীরা।
এ দিনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। এর আগে রোগীর পরিবারের হাতে বারবার নিগ্রহের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছিলেন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই এ দিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, “যখন-তখন রোগীর বাড়ির লোক ওয়ার্ডে ঢুকে শাসাচ্ছে, পেটাচ্ছে। এ ভাবে তো কাজ করা যায় না।” |