চৌত্রিশ বছর পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ হাতছাড়া হল এসএফআইয়ের। নির্বাচনে জয়ী হয়ে এ বার ওই ছাত্র সংসদের দখল নিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ছিল এসএফআইয়ের দখলে। ২০১৩-য় ছাত্রভোট হয়নি।
এসএফআইয়ের অভিযোগ, টিএমসিপি-র সন্ত্রাসের জেরে সিংহ ভাগ আসনেই মনোনয়নপত্র তোলা বা জমা দেওয়া যায়নি। তাই ছাত্র সংসদ তাদের হাতছাড়া হয়েছে। তবে অভিযোগ উড়িয়ে টিএমসিপি-র দাবি, সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যই হেরেছে এসএফআই। নির্বাচনের ফলে সামগ্রিক ভাবে পরাজিত হলেও রাজাবাজার ও বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে এসএফআই জিতেছে।
শনিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট, আলিপুর, হাজরা আইন কলেজ, রাজাবাজার এবং বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজে নির্বাচন ছিল। প্রায় ৮৫০ আসনের মধ্যে ৪৬১টিতে তারা জিতেছে বলে টিএমসিপি-র দাবি। আবার এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের দাবি, টিএমসিপি ৮০০-র উপরে আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ৫০ শতাংশ আসনেও জয়ী হয়নি। আর এসএফআই মাত্র ১৭৩টিতে মনোনয়নপত্র দিতে পেরেছে। তার মধ্যে ১২৯টিতে জয়ী হয়েছে। টিএমসিপি-র বাধায় ২২০টি-রও বেশি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি।
নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। বিকেলে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “নিয়ম মেনে শান্তিতে নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।” |
চৌত্রিশ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নিজেদের দখলে রাখার পরে এ বার তা হাতছাড়া হল কেন এসএফআইয়ের? সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বলেন, “টিএমসিপি আমাদের মনোনয়ন তুলতে এবং জমা দিতে বাধা দিয়েছে। তার মধ্যেও লড়াই চালিয়ে দু’টি ক্যাম্পাসে জিতেছি।”
ছাত্র পরিষদের মতে, এই হাত বদল আসলে কোনও পরিবর্তন নয়। ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচি বলেন, “আগে সিপিএমের গুন্ডারা ক্যাম্পাসে ঢুকে এসএফআইয়ের নামে ছাত্র সংসদ দখল করত। এখন সেটাই করছে তৃণমূল। ছাত্র সংগঠনের নাম আর স্লোগানেরই কেবল পরিবর্তন হয়েছে। পরিস্থিতি বদলায়নি।”
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার বক্তব্য, “এসএফআই তো আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। ওরা সে ভাবেই লড়েইনি! তা ছাড়া, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন যে আমাদের প্রতি, এই জয় তারই প্রমাণ।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নিতে পারলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজ যোগমায়াদেবীতে ছাত্র সংসদ কিন্তু এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র হাতেই থাকল। এই নিয়ে টানা ৬০ বছর যোগমায়া দেবী কলেজের ছাত্র সংসদ ধরে রাখল ডিএসও। ওই কলেজের ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতে ভোট হয়েছে শনিবার। ডিএসও-র দাবি, তারা ৪১টি এবং টিএমসিপি ছ’টি আসন পেয়েছে। অন্য দিকে, শঙ্কুদেবের দাবি, আগে ওই কলেজে ডিএসও অন্য সংগঠনকে প্রার্থী দিতে দেয়নি। এ বার টিএমসিপি ছ’টি আসনে জিতেছে। এটা টিএমসিপির কাছে ইতিবাচক। এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৭টি কলেজে নির্বাচন ছিল। ভিক্টোরিয়া কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে এসএফআই। এ ছাড়া যোগমায়া বাদে বাকি সব ক’টিতেই টিএমসিপি জয়ী হয়েছে বলে ওই সংগঠনের দাবি। |