সুচিত্রা: এক মুখচোরা নায়কের অভিজ্ঞতা
মি সুচিত্রা সেনের অভিনয় জীবনের একেবারে শেষ দিকে কাজ করেছি। তাই উনি অন্য নায়ক বা সহশিল্পীদের সঙ্গে কেমন ছিলেন সেটা জানা নেই। আর আমি তখন এতই নবাগত যে, কেউ আমার সঙ্গে ওঁর ব্যাপারে আলোচনাও করতেন না।
তবে নিজের কথা বলতে হলে বলব, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে আমার প্রথম সমস্যা ছিল আড়ষ্টতা না কাটা। সব সময়ই একটা কিন্তু কিন্তু ভাব থাকত। কোনও দৃশ্যে হয়তো ওঁর হাত ধরতে হবে, কিছুতেই সহজ ভাবে হাত ধরতে পারতাম না। শেষমেশ উনিই আমার হাত ধরে পরিস্থিতিটাকে সহজ করে দিতেন। ওঁর সিনিয়রিটি এবং তারকা ইমেজের সঙ্গে সমান হয়ে ওঠাটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। ওঁর স্বল্পভাষী, রাশভারী ব্যক্তিত্বের সামনে যে কোনও নতুন নায়কেরই দাঁড়ানোটা কঠিন হতো। আমার লাজুক ভাব দেখে উনি এক দিন দীনেন গুপ্তকে ডেকে বলেছিলেন, “খোকাদা, আপনার হিরো তো ডায়লগ ছাড়া কোনও কথাই বলে না!” তবে শট কিন্তু খুব বেশি ‘এনজি’ হতো না। একটা কি দু’টো টেকেই ‘ওকে’ হতো।
‘দেবী চৌধুরাণী’র ইনডোর শু্যটিং হয়েছিল ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে। তার বেশ কিছুদিন আগে পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘চতুরঙ্গ’ ছবিটি এক দিন শু্যটিং হয়েই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ‘দেবী চৌধুরাণী’র সেটে মিসেস সেন বসন্ত চৌধুরী, শেখর চট্টোপাধ্যায় এঁদের সঙ্গে খুব আড্ডা দিতেন। কিন্তু ইউনিটের বাকি সকলের সঙ্গে খুব খোলাখুলি মিশতেন না। একটা ব্যবধান রাখতেন সকলের সঙ্গে। এই দূরত্বটাই হয়তো ওঁকে তারকা বানিয়েছে। কিন্তু এক জন অভিনেতার সঙ্গে আর এক জন অভিনয়শিল্পীর সম্পর্ক যত সহজ হয়, ততই ভাল। ‘মৌচাকে’ উত্তমদার সঙ্গে কিন্তু আমার সম্পর্কটা খুবই দিলখোলা হয়ে গিয়েছিল। মিসেস সেনের সঙ্গেও বসে যদি সহজ ভাবে দু’দণ্ড গল্প করার সুযোগ পেতাম, তা হলে হয়তো ‘দেবী চৌধুরাণী’তে আমার অভিনয় অনেক সাবলীল হতো। ওঁর সঙ্গে যে গল্প করতে পারিনি, সেটা হয়তো আমারই ঘাটতি। নতুনদের ঘাটতি সিনিয়ররা ঢেকে দিতেন। উত্তমদা, মিসেস সেন দু’জনকেই সেটা করতে দেখেছি।
এক দিনের শু্যটিংয়ের কথা খুব মনে পড়ে। দীর্ঘদিন পরে স্বামী ব্রজেশ্বরের সঙ্গে প্রফুল্লর দেখা হচ্ছে। পরিচালক মিসেস সেনকে আট-দশ লাইনের একটা ডায়লগ দিলেন। উনি সেটা কয়েক বার পড়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “খোকাদা এই কথা বলার সময় তো প্রফুল্লের মনে খুব কষ্ট হচ্ছে। সংলাপের কোন লাইনে এসে চোখে জল এলে ভাল হয়?” দীনেনদা কান্নার জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন। সংলাপ বলতে বলতে ঠিক সেই জায়গায় ওঁর চোখে আপনাআপনি জল এসে গেল।
সুচিত্রা সেন ছিলেন আমার স্বপ্নের নারী। তাঁকে কাছ থেকে দেখাটাও স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল। রক্ত মাংসের মানবী বলে মনেই হল না। শুনেছি, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় বিজলি হলে ‘দেবী চৌধুরাণী’র নাইট শো দেখতে এসেছিলেন। এত বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন যে, গাড়ি না নিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই বাড়ি চলে যান।

উত্তমকুমার
যে কোনও ছবির প্রতিটা সিনে ওঁদের ডায়লগ ডেলিভারি, দৃষ্টি বিনিময়, অভিব্যক্তি এক সুরে বাঁধা থাকত। আর কারও সঙ্গেই মিসেস সেনের এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল না। এটা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করতে করতে হয়।

বসন্ত চৌধুরী
সুপুরুষ। কিন্তু রসায়নটা তৈরি হয়নি। তা ছাড়া বসন্ত চৌধুরীর মধ্যে এক ধরনের গাম্ভীর্য ছিল যেটা নায়ক হওয়ার পথে অন্তরায়। সুচিত্রার নায়ক হওয়ার পক্ষে তো বটেই।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
বড় অভিনেতা। ইন্টেলেকচুয়াল। ‘সাত পাকে বাঁধা’য় দারুণ মানিয়েছিল। কিন্তু সৌমিত্রদা যত বড় চরিত্রাভিনেতা, তত বড় রোম্যান্টিক অভিনেতা নন। আর সুচিত্রা সেন মানেই রোম্যান্স।

সঞ্জীবকুমার
‘আঁধি’ ছবিতে ভাল করেছিলেন। তবে সেখানে ওঁদের ম্যাচ হওয়াটা বা না হওয়াটা বড় ব্যাপার ছিল না। হরিভাইয়ের শারীরিক গঠন ছিল ভারী ধরনের। নানা অসুস্থতায় ভুগতেন। মিসেস সেনের পাশে বেমানান।

ধর্মেন্দ্র
মিসেস সেনের পাশে মোটামুটি ছিলেন। খুবই গড়পড়তা। তার কারণ ধর্মেন্দ্র অভিনেতা হিসেবে কোনও দিনই খুব বড় নন।


অনুলিখন: সংযুক্তা বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.