চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
রাতের গভীরতায় প্রকৃতি ও মানবীর গোপন মিলন
কটি নির্দিষ্ট পরিসরকে রেখা ও রঙে সাজিয়ে তোলাই একজন চিত্রশিল্পীর অনিবার্য দায়। চিত্রের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে এরকম বলেছেন অনেক শিল্পীই। চিত্রকলা মানুষের আদিতম শিল্প। সাজিয়ে তোলার সৌকর্যের যে সুদীর্ঘ অনুধ্যান চলেছে চিত্রকলায়, তা নানা ভাবে সমৃদ্ধ করেছে অন্যান্য শিল্প মাধ্যমকেও। নাট্য ও চলচ্চিত্র, এই দুইয়ের ভিতর চিত্রের এই রচনাসৌকর্যের দিকটি সব চেয়ে বেশি প্রতীয়মান হয়ে থাকে।
এ কথা মনে রেখেই কলকাতার ‘শূদ্রক’ নাট্যগোষ্ঠী প্রতি বছর তাঁদের নাট্যোত্‌সবের সঙ্গে চিত্র-ভাস্কর্য চর্চাকেও দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করে থাকে। ২০১৩ -তেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত তাঁদের নাট্যোত্‌সবের সঙ্গে আয়োজিত হয়েছিল প্রদর্শনীও। প্রদর্শনীর মূল ভাবনা ছিল: ‘প্রজ্ঞা ও পৃথিবী’। আদর্শ ও বাস্তবের সংঘাত ও সমন্বয় নিয়ে ভেবেছেন শিল্পীরা। ২৩ জন চিত্রী, দু’জন আলোকচিত্রী ও ছ’জন ভাস্কর প্রত্যেকের একটি করে কাজ নিয়ে আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী। আলোকচিত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ বার।
নিরঞ্জন প্রধানের ভাস্কর্যের শিরোনামই ‘প্রজ্ঞা ও পৃথিবী’। তিনি মেলে ধরতে চেয়েছেন পৃথিবীর প্রজ্ঞাকে, যে প্রজ্ঞা থেকে জীবন উত্‌সারিত হয়। বিমল কুণ্ডুর ব্রোঞ্জ-ভাস্কর্যের শিরোনাম ‘শব্দের শক্তি’ (পাওয়ার অব দ্য ওয়াডর্স)। পুস্তক পাঠরতা এক মানবীর প্রতিমাকল্প গড়েছেন তিনি জ্যামিতিক তলবিন্যাসে। অসীম বসুর অনামা ব্রোঞ্জটিতে মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কুকুর সঙ্গে করে প্রাতর্ভ্রমণে যাচ্ছে এক সম্ভ্রান্ত মানুষ। মৃণালকান্তি গায়েন ব্রোঞ্জ ও পাথরে গড়েছেন ‘ভয়েজ’ শিরোনামে মানুষের জলযাত্রার দৃশ্যকল্প। তরুণী ভাস্কর চৈতালী চন্দের ব্রোঞ্জে মানবীরা ঝড়ে উত্তাল বৃক্ষের আদল পেয়েছে। দেবাশিস মল্লিক চৌধুরী ব্রোঞ্জে গড়েছেন প্যাঁচার রূপারোপ।
শিল্পী: রাখী রায়।
প্রদীপ দত্তের আলোকচিত্রে প্রকৃতির প্রজ্ঞা উদ্ভাসিত হয়েছে ঘাসের বুকে ফুটে থাকা একক একটি শুভ্র ফুলের রূপে। মূর্ততা দিয়ে বিমূর্ত রচনা করেছেন অতনু পাল তাঁর আলোকচিত্রে। শুভ্র প্রেক্ষাপট। তার উপর বিদ্যুতের তারের জ্যামিতি। একটি তারে বসে আছে একটি ফড়িং।
এই প্রদর্শনীর যে মূল ভাবনা প্রজ্ঞা ও পৃথিবী কোনও কোনও ছবিতে তার প্রকাশ ঘটেছে প্রত্যক্ষভাবে। অনেক ছবিতে পরোক্ষে। অনেক ছবিতে আবার তেমন গুরুত্ব পায়নি এই ভাবনা। পার্থপ্রতিম দেবের অনামা ক্যানভাসটিতে প্রজ্ঞা ও পৃথিবীর সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক। কাঞ্চন দাশগুপ্তের বাস্তবের বহুস্তরীয় বিন্যাসের প্রকটতার ভিতর প্রকৃতির উদাত্ততা জেগে থাকে। গৌতম চৌধুরী এঁকেছেন মানবিক অস্তিত্বের নিঃসীমতার ছবি। অরুণিমা চৌধুরীর মানবী নদীর মতো স্রোতস্বিনী। তীরে তার বিড়ালটি বিস্ময়দৃষ্টি মেলে আছে।
স্বপনকুমার মল্লিকের কালি-কলমের ন’টি ড্রয়িং-এর সমাহারের ভিতর প্রতিধ্বনিত হয় আজকের পৃথিবীতে প্রজ্ঞার বিলয়। সুমনা ঘোষের ‘সপ্তপর্ণী বৃক্ষমূলে’ শীর্ষক টেম্পারাটিতে মানবী ও প্রকৃতি চৈতন্যের দুটি স্তর আলাদা করে দেখানো হয়েছে। বৃক্ষমূলে মানবীর দ্বৈত-অস্তিত্বের যে ট্র্যাজিক নাটকীয়তা, উপরে রাত্রির আকাশে সাতটি তারার তিমিরে তা পরিশুদ্ধ হতে থাকে। রাখী রায়ের ‘এলান’ শীর্ষক ছবিটিতেও রাত্রির প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও মানবীর অস্তিত্ব পরস্পরে সম্পৃক্ত হতে থাকে। তরুণ ঘোষের অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটির শিরোনামও ‘উইসডম অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। এখানেও প্রজ্ঞা ও মানবী সমীকৃত হয়ে গেছে। তপন ভট্টাচার্যের মিশ্রমাধ্যমে হরিণের দৃষ্টির বিস্ময়বিমুগ্ধ প্রশান্তি প্রজ্ঞার প্রতীক।
শান্তনু মাইতির স্মিত বর্ণের বিমূর্ততার ভিতর লৌকিক প্রজ্ঞার দীপ্ত প্রকাশ। আদিত্য বসাকের ‘গোল্ডেন টাইম’ ছবিটিতে কালীঘাটের পটচিত্রের তবলাবাদিনীর সুন্দর উপস্থাপনা। অসিত পাল এঁকেছেন শ্রীকৃষ্ণ ও চৈতন্যের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে। ঈলিনা বণিক মানুষের অন্তহীন দুঃখকে প্রেক্ষাপটে রেখে উদ্ভাসিত করেছেন যিশুর আধ্যাত্মিকতা। দিলীপ গুছাইত এঁকেছেন আদিবাসী মানবীর সংগ্রামমুখর জীবন। আদর্শ ও বাস্তবের দ্বান্দ্বিকতার বিভিন্ন স্তর আভাসিত হয়েছে সমীর আইচ, পরাগ রায়, দেবব্রত চক্রবর্তী, ধীরেন শাসমল, চয়ন রায়, অরুণাংশু রায়, অনিন্দ্য পণ্ডিত, অরুণ বাইন ও অনির্বাণ শেঠের ছবিতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.