রেললাইন আর ঘরের মধ্যে ব্যবধান মাত্র দু’হাত। লাইনের পাশে সার দেওয়া উনুনে রান্না। গেরস্থালির কাজ চলে লাইনের উপরেই। এ ভাবেই দিনের পরে দিন ঢাকুরিয়ার পঞ্চাননতলায় লাইনের ধারে কয়েক হাজার বাসিন্দা জীবনযাপন করছেন।
লাইনের পাশেই ঘর আঙুর বলের। তিনি বললেন “বিপদ আছে জানি। কিন্তু এ নিয়ে তো কেউ কোনও দিন কিছু বলেনি। এ ভাবে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। বিপদের ভয় করে না।’’ বালিগঞ্জ-বজবজ শাখার নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, পঞ্চাননতলার রেললাইনের ধারে এই দখলদারি দীর্ঘ দিনের।
এর জন্য অনেক সময় যাতায়াতেও অসুবিধে হয়। অনেক সময় চলন্ত ট্রেন লক্ষ করে ওই সব বসতি থেকে ইট, পাথর নোংরা ছুঁড়ে মারা হয়। নিত্যযাত্রী অনিমেষ রায় বলেন, “একটু রাত হলে বালিগঞ্জ থেকে টালিগঞ্জে ট্রেনে যেতে ভয় লাগে।” |
ঢাকুরিয়া লাইন-সংলগ্ন গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে ১৯৯৮-এ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিনবেঞ্চে একটি মামলা করেন। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সুভাষবাবু বলেন, “সুপ্রিমকোর্ট কলকাতা হাইকোর্টকে মামলাটি নিষ্পত্তি করার আদেশ দিয়েছিল। ২০০৫-এ কলকাতা হাইকোর্ট জায়গাটি ফাঁকা করে দেওয়ার রায় দেয়। রায় অনুযায়ী তৎকালীন রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুরসভা গোবিন্দপুরের রেললাইন সংলগ্ন বাসিন্দাদের নোনাডাঙায় স্থানান্তর করে।” একই লাইনেই পঞ্চাননতলা। কলকাতা পুরসভার তৎকালীন মেয়র এবং বর্তমানে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোবিন্দপুরে তখন যা হয়েছিল তা আদালতের নির্দেশেই হয়েছিল।”
সুভাষবাবু বলেন, “ভারতে রেললাইনের ধারে প্রায় চার কোটি মানুষ বসবাস করেন। এটা আমাদের জাতীয় লজ্জা। দীর্ঘ দিন এই সমস্যার সুরাহা না হওয়ার জন্য দায়ী ভোটের রাজনীতি।” রেল সূত্রের খবর, এই সব জমি ফিরে পেতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “পঞ্চাননতলায় রেলের দখল জমি মুক্ত করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকলের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। না হলে স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক সমস্যা হতে পারে।” |