আগামী বছরই ১২০ বছরে পা দিচ্ছে সিআইআই। সেই মাইলফলক ছোঁয়ার অনুষ্ঠান কলকাতাতেই করার জন্য তাদের অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কলকাতা, যেখান থেকে ১৮৯৫ সালে মাত্র পাঁচটি সংস্থাকে নিয়ে ইআইটিএ নামে পথ চলা শুরু করেছিল বণিকসভাটি। কলেবর আর কাজের বহরে বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে পরে বহু বার তার নাম বদলেছে। ১৯৯২ থেকে তা পরিচিত হয়েছে সিআইআই নামে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, শেষ পর্যন্ত বণিকসভাটির ১২০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান কলকাতাতেই হলে, তা সফল করতে সব রকম সহায়তা করবে রাজ্য সরকার।
আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্যের জন্য শ্মশানে থাকায় শুক্রবার টাউন হলে সিআইআইয়ের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে আসতে পারেননি মমতা। তার বদলে শিল্প ও অর্থ মন্ত্রী অমিত মিত্রের মোবাইল মারফতই শিল্প কর্তাদের কাছে বক্তব্য পৌঁছে দেন তিনি। পরের বছরের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুরোধ এবং লগ্নির আহ্বানও সেখান থেকেই। এ প্রসঙ্গে অমিতবাবুর দাবি, “উনি এই শোকের মধ্যেও শিল্পের কথা ভোলেননি।” আর সিআইআই প্রেসিডেন্ট তথা ইনফোসিস কর্তা এস গোপালকৃষ্ণনের বক্তব্য, “রাজ্যের কাছে আজ খুবই দুঃখের দিন। কিন্তু তার মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।” মহানায়িকার মৃত্যুতে শোকও প্রকাশ করেন তাঁরা।
অনেকে আবার বলছেন, সভায় উপস্থিত না-থেকে মোবাইল মারফত বার্তা রাজনৈতিক জনসভায় এর আগেও দিয়েছেন মমতা। এ বার সেই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন তাবড় শিল্পকর্তারাও।
সিআইআইয়ের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিই রেওয়াজ। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর তা নিশ্চিত না-থাকার কারণেই এত দিন বৈঠকের জায়গা হিসেবে ঠাঁই পায়নি কলকাতা। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে তিন বছর পর এই আলোচনার জন্য কলকাতাকে বেছে নিয়েছিল বণিকসভাটি। যে কারণে এ দিন নিজে আসতে না-পারলেও মোবাইলে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি অমিতবাবু ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছেন মমতা।
রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের ভাবনা ও পরিকল্পনা দেশের প্রথম সারির শিল্পকর্তাদের সামনে এ দিন তুলে ধরেছেন অমিতবাবু। আপাদমস্তক কর্পোরেট কায়দাতেই। সাফল্যের খতিয়ান দিতে তুলে এনেছেন জঙ্গলমহল থেকে পাহাড়, আইটিআই থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পনীতি থেকে ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজার’ নিয়োগ— সব কিছুই। শিল্পের জন্য এ রাজ্যে ‘তৈরি জমি’র কথা বলতে গিয়ে তুলে এনেছেন শ্রম, শিক্ষা, জমি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং অবশ্যই আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে রাজ্যের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা। যা শোনার পরে গোপালকৃষ্ণনের প্রতিক্রিয়া, “এই সব পরিকল্পনা রাজ্যের ভাবমূর্তি বদলে সাহায্য করবে।”
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, অজয় এস শ্রীরাম, সুমিত মজুমদার, আদি গোদরেজ, জে পি চৌধুরি, জামশেদজি জে ইরানি, শেখর দত্ত, সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, অজয় শ্রীনিবাসন, বিনায়ক চট্টোপাধ্যায়, সুধীর দেওরাস, সন্দীপন চক্রবর্তী, সঞ্জয় সি কির্লোস্কার, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, এস শাণ্ডিল্য, নৌশদ ফোর্বস, মুকুল সোমানির মতো শিল্পপতি ও শিল্পকর্তারা। রাজ্যের শিল্পনীতি ও লগ্নিমুখী চিন্তাকে স্বাগতও জানিয়েছে শিল্পমহল।
একই সঙ্গে কিছু পরামর্শও দিয়েছে তারা। যেমন, পরিকাঠামো শিল্প-কর্তা বিনায়কবাবুর মতে, যৌথ উদ্যোগে রাস্তা তৈরির প্রকল্প যাতে বাজারের শর্ত পূরণ করে, তা মাথায় রাখতে হবে। শিল্পকর্তা অরুণ নন্দার পরামর্শ, পর্যটন প্রকল্প গড়তে লগ্নির পক্ষে কোন জায়গা আদর্শ, তা রাজ্য নয়, লগ্নিকারীই ঠিক করুক। প্রস্তাবটি কার্যত মেনেও নেন অমিতবাবু। |