স্কুলছাত্রীদের পরে এ বার আশাকর্মীদের সাইকেল বিলির তোড়জোড় শুরু হল। প্রাথমিক ভাবে জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে আশাকর্মীদের সাইকেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তিন জেলার জঙ্গলমহলে ব্লক রয়েছে ২৩টি। সব মিলিয়ে আশাকর্মীর সংখ্যা ১৯৯৩ জন। শীঘ্রই সব এঁরা সকলে সাইকেল পাবেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এটা ভাল উদ্যোগ। এর ফলে, আশা কর্মীরা উপকৃত হবেন।”
গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আশা নাম স্বাস্থ্যকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে শিশুদের স্বাস্থ্যের নিয়মিত খোঁজ রাখা, গ্রামে জ্বর-ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া-আন্ত্রিকের মতো রোগ ছড়াচ্ছে কি না দেখা, সবই আশাকর্মীদের দায়িত্ব। কোথাও কোনও সমস্যা নজরে এলে দ্রুত তা ব্লকে জানান সংশ্লিষ্ট আশাকর্মী। ব্লক মেডিক্যাল অফিসার পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। ফলে, আশাকর্মীরা যত দ্রুত এলাকায় পৌঁছবেন, তত দিন দ্রুত সমস্যার কথা উপর মহলে যাবে, দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আশাকর্মীদের সাইকেল বিলির সিদ্ধান্ত। প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার হালহকিকত দ্রুত ব্লক স্তরে পৌঁছে দিকে এর আগে আশাকর্মীদের নিখরচার মোবাইল সিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় আশাকর্মীরা ইতিমধ্যে সিম পেয়েও গিয়েছেন।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জঙ্গলমহলের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো ফেরাতে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই সূত্রেই আশাকর্মীদের প্রথমে মোবাইল সিম এবং এখন সাইকেল দেওয়ার পরিকল্পনা। গত বছর থেকেই আশাকর্মীদের সিম দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় রাজ্যের ৬টি জেলায় আশাকর্মীদের সিম দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলায় মোট আশাকর্মীর সংখ্যা ৩৭০০ জন। এর মধ্যে শালবনি ব্লকের ১২৬ জন ইতিমধ্যে সিম পেয়ে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে মোট ৪১ হাজার আশাকর্মী রয়েছেন। এঁদের সকলের হাতে সিম পৌঁছে দিতে ৫ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা খরচ ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এই সিম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে এবং স্বাস্থ্য দফতরের সকলের সঙ্গে নিখরচায় কথা বলতে পারবেন আশাকর্মীরা।
প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে এর আগে জঙ্গলমহলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের সাইকেল দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার সাইকেল প্রাপকের তালিকায় জঙ্গলমহলে কর্মরত আশা কর্মীদের নামও জুড়তে চলেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় একের পর এক কাজ হচ্ছে। ভিশন ২০১৫-কে সামনে রেখে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা হচ্ছে।”
মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতির কথায়, “জঙ্গলমহলকে উন্নত করতে কোনও খামতি রাখবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশাকর্মীদের সিম কার্ড দেওয়ার ভাবনা ভারতবর্ষে প্রথম। জঙ্গলমহলে কর্মরত আশাকর্মীদের সাইকেল দেওয়ার পরিকল্পনাও অভিনব।”
|
জঙ্গলমহলে প্রাপ্তি |
• পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১টি ব্লকে ১০৩৬ জন আশাকর্মী
• বাঁকুড়ার ৪টি ব্লকে ৩৮৭ জন আশাকর্মী
• পুরুলিয়ার ৮টি ব্লকে ৫৭০ জন আশাকর্মী |
|