উদ্যোগী রাজ্য, মান ফিরে পাচ্ছে বাংলার পুতুলশিল্প
চাষবাসে মন দিলেই জীবনটা যা হোক কেটে যেত কুলতলির অমর নস্করের। কিন্তু এক নেশা ছুটিয়ে বেড়াচ্ছে বছর চল্লিশের যুবাকে! কাঠ-খড়-বাঁশের হরেক পুতুল গড়া বা পুরুষ ও মহিলার কণ্ঠস্বর অনুকরণে তুখোড় অমর পুতুলনাচের টানে চরকি পাক খাচ্ছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের পদ্মতামলির বসন্ত ঘোড়ুইও ব্যস্ত বেনেপুতুল নিয়ে। নিজের চিলতে চায়ের দোকানটায় নিয়ম করে বসেন, কিন্তু মন পড়ে থাকে আঙুলের নড়াচাড়ায় পুতুলের নানা মেজাজের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে। বেনেপুতুল বা দস্তানা পুতুলের নড়াচড়ার সঙ্গে সংলাপে বাল্যবিবাহ কি পণপ্রথা-বিরোধী বার্তা, বা শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়া সবই দক্ষতার সঙ্গে পেশ করেন।
শান্তিনিকেতনের কাছে কঙ্কালীতলার সোম মুর্মুর জীবনের তিন ভাগ আবার কেটেছে চদর-বদর নিয়ে। বাপ-পিতেম’র কাছে শেখা কাঠের পুতুলের পাড়াগেঁয়ে শিল্প নিয়েই মেতে থেকেছেন সোম। এত দিনে তাঁর মতো কারও কারও হাতের কাজের সৌজন্যেই ধুঁকতে থাকা অজানা আদিবাসী পুতুল-শিল্পটি কলকাতার ‘ভদ্রজনে’র কাছে পৌঁছতে পারছে।
গ্রামবাংলার এই সব অখ্যাত নায়কদের নিয়েই এক নতুন উদ্যোগে সামিল রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগ। বাংলার পুতুলশিল্পের স্মারক একটি সংগ্রহশালায় এ রাজ্যের লোকজীবনের একটি দলিল বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। সংগ্রহশালাটি সাজিয়ে তুলতেই কলকাতায় এসে পুতুল গড়ায় হাত দিচ্ছেন সোম-অমর-বসন্তেরা। একটি বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে আজ, শুক্রবার থেকে ‘কারিগর হাট’ নামে দশ দিনের লোকসংস্কৃতির মেলা বসছে বিআইটিএমে। সেখান থেকেই পুতুল সংগ্রহশালার কাজও শুরু হচ্ছে।
উপেনবাবুর দাবি, “সাংস্কৃতিক পরিচয় ছাড়া বাংলার অনগ্রসর শ্রেণিকে জানা যাবে না। আর বাংলার সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস, বাউল-ভাটিয়ালি-পটশিল্প থেকে শুরু করে সব কিছুই অনগ্রসর শ্রেণির হাতেই পুষ্ট।” এ রাজ্যের সরকারে পরিবর্তনের পরে কাঁকুড়গাছিতে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের গবেষণার শাখা কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবনটি পুরোদস্তুর সাজিয়েছেন উপেনবাবুরা। ‘অম্বেডকর ভবন’ নাম দিয়ে কার্যত পরিত্যক্ত বাড়িটিতে হচ্ছে সংগ্রহালয়ও। ওই বাড়িতেই পুরনো নানা নৌকার রকমফের সাজিয়ে তৈরি হয়েছে ‘বোট মিউজিয়াম’। এ বার পাপেট মিউজিয়ামের উদ্যোগ।
মন্ত্রী বলেন, “পুতুলনাচের ধর্মীয় চরিত্রগুলি বাদ দিয়ে বিভিন্ন গ্রামীণ পেশার মানুষদের মডেল তৈরি হবে। পুতুলনাচের আঙ্গিক থেকে বাংলার লোকজীবনের একটা ছবিও মিউজিয়ামে রাখা থাকবে। ছ’মাসেই মিউজিয়াম চালু হবে।” কাঁথা সংগ্রহালয়ের মতো আরও কিছু পরিকল্পনা আছে। যে বেসরকারি সংস্থা এই কাজটিতে সাহায্য করছে, তাদের তরফে সোনালি চক্রবর্তী বলেন, “জনা ৪০ পুতুলনাচের শিল্পী সংগ্রহশালার পুতুল গড়বেন। সুতোপুতুল, ডাঙের পুতুল, বেনেপুতুল, চদর-বদরেই সাজবে মিউজিয়াম।” মন্ত্রীর আশা, পুতুল নিয়ে চর্চা বাড়লে রাজস্থানি কাঠপুতুলের মতো বাংলার পুতুলও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদা খুঁজে পাবে।

এমনই সব পুতুলে সাজবে শহরের সংগ্রহশালা। —নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.