ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, রাজ্যসভার পঞ্চম আসন ঘিরে রাজনীতির অঙ্ক জমে উঠছে! বিধানসভায় শক্তির নিরিখে এ বার পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার তিনটি আসনে জয় নিশ্চিত তৃণমূলের। একটি আসন জিততে পারবে প্রধান বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্ট। শাসক দল চাইছে, নিশ্চিত তিনটি ছাড়াও আরও একটি আসনে প্রার্থী দিতে। আবার কংগ্রেসও ওই পঞ্চম আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। তিন পক্ষের কারওরই একক ভাবে ওই আসনটি জয়ের শক্তি নেই। এমতাবস্থায় লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ কোন দিকে যায়, দেখার সুযোগ থাকবে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনের ভোটে।
কোনও শিবিরই এখনও রাজ্যসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। তবে প্রস্তুতি চলছে সব শিবিরেই। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বৃহস্পতিবার বলেন, “তিনটি আসন তো বটেই। আমরা চার জন প্রার্থী দিতে চাই। কে কোথায় দাঁড়িয়ে, সেটা তা হলে বোঝা যাবে!” একই যুক্তিতে প্রদেশ কংগ্রেসও রাজ্যসভায় লড়তে চায়। সেই রকম ইচ্ছা নিয়েই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব দিল্লিতে এআইসিসি অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন। বাকিটা নির্ভর করছে এআইসিসি-র মনোভাবের উপরে। গত বার রাজ্যসভার একটি আসনে একটি আসনে আব্দুল মান্নানকে প্রার্থী করার পরেও হাইকম্যান্ডের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। দলের নেতা মানস ভুঁইয়া বুধবারই বলেছেন, “রাজ্যসভার প্রার্থী নিয়ে প্রাথমিক কিছু আলোচনা হয়েছে। প্রাদেশিক স্তরে আলোচনার পরে এআইসিসি-র সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত হবে। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, আমরা সম্ভবত প্রার্থী দেব।” রাজ্যসভার জন্য প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসে যাদের কথা আলোচিত হচ্ছে, তার মধ্যে দলের এক প্রাক্তন বিধায়ক, এক ইতিহাসবিদ এবং এখনকার এক সাংসদের নাম আছে। ঘটনাচক্রে, তিন জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।
রাজ্যসভার এক জন প্রার্থীকে জেতাতে এ বার বিধানসভায় যত ভোট লাগবে, একক ভাবে তা অবশ্য হাতে নেই কংগ্রেসের। কিন্তু রাজ্যসভায় আসন জেতার চেয়েও তাদের মূল লক্ষ্য, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে বার্তা দেওয়া। রাজ্য বিধানসভার বর্তমান সমীকরণ অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির ভোটে রাজ্যসভায় এক জন সাংসদ পাঠাতে দরকার হবে প্রায় ৪৯.৮৩ ভোট। এক জন প্রার্থীকে জিতিয়েও বামেদের হাতে বাড়তি থাকবে প্রায় ১১ ভোট। আবার তিন প্রার্থীকে জিতিয়ে তৃণমূলেরও কিছু বাড়তি ভোট থাকবে। কিন্তু কংগ্রেস-তৃণমূল, দু’পক্ষই পঞ্চম আসনের জন্য শেষ পর্যন্ত প্রার্থী দিলে আপাতত জোটের সম্ভাবনা বিনাশ হবে। মানসবাবুও বলেছেন, “আজ অবধি লোকসভা বা কোথাও আসন সমঝোতার জন্য এআইসিসি-র কোনও বার্তা আমাদের কাছে আসেনি। প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনিবাহী কমিটি রাজ্যে ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাব এআইসিসি-র কাছে পাঠিয়েছে।” এই অবস্থায় বামেদের উদ্বৃত্ত ভোটের সঙ্গে কংগ্রেস মিললে তাদের প্রার্থীর রাজ্যসভায় যাওয়া সম্ভব। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মানসবাবুর মন্তব্য, “সব সময় কি জেতার জন্য প্রার্থী দিতে হয়? কে কোন দিকে দাঁড়িয়ে, নির্বাচন থেকে সে সবও ঠিক হয়!” পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাঁচটি রাজ্যসভার আসনে ভোট ৭ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হবে ২১ জানুয়ারি। প্রার্থী ঠিক করতে সিপিএমের অন্দরেও আলোচনা চলছে। আর এরই মধ্যে এআইসিসি-র অধিবেশনের পরে ২০ জানুয়ারি কংগ্রেসের প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠক বসবে বলে দলীয় সূত্রের খবর। |