ডিভিসির প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর পর দিনই ফের বাধা পেয়ে কাজ বন্ধ হল প্রথম পর্যায়ের ওয়াটার করিডরের কাজ। এ বার বাধাদান পর্বের নেতৃত্বে রইল বিজেপি। বৃহস্পতিবার দলীয় পতাকা নিয়ে বিজেপি-র একদল কর্মী-সমর্থক এবং প্রকল্পে অনিচ্ছুক জমি মালিকদের একাংশ নিতুড়িয়ার গুনিয়াড়া পঞ্চায়েতের বথানবাড়ি এলাকায় পাইপলাইন পাতার জন্য মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁদের চাপে কাটা গর্তের কিছু অংশ ভরাটও করতে বাধ্য হয়েছে ঠিকাদার সংস্থা। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো ও রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি এলাকায় গিয়ে বারবার আলোচনার করে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু করিয়েছিলেন। পরে কাজে তদারকি করার সময়ে কিছু জমি মালিকের হাতে ডিভিসি-র দুই ইঞ্জিনিয়ার নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নিয়েছিল পুলিশ। তার পর থেকে দু’সপ্তাহের বেশি সময় বিনা বাধায় কাজ হয়েছে। ১০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে মাটি কাটার কাজ বাকি রয়েছে মাত্র দেড় কিলোমিটারের। কিন্তু ওয়াটার করিডর নিয়ে সম্প্রতি আসরে নেমেছে বিজেপি। রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে তারা ওয়াটার করিডর-সহ ডিভিসি-র প্রকল্পে স্থানীয় জমিহারাদের জন্য কর্মসংস্থান ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করে স্মারকলিপিও দিয়েছিল। বিজেপি-র দাবি ছিল, তারা প্রকল্পের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু, এলাকায় শিল্পায়ন করতে হলে জমিহারাদের দাবি পূরণ করতে হবে জেলা প্রশাসনকে।
এ দিন ওয়াটার করিডরের কাজ বন্ধ করার বিক্ষোভে বিজেপি-রই পতাকা নিয়ে সামিল হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। ঘটনা হল, রায়বাঁধ এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে পঞ্চায়েত চালাচ্ছে বিজেপি। প্রধানও বিজেপি-র। ফলে, এলাকায় ডিভিসি-র প্রকল্পে অনিচ্ছুক জমি মালিকদের দাবিকে উস্কে দিয়ে সংগঠন বাড়াতে চাইছে বিজেপি বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। সৃষ্টিধর মাহাতোর বক্তব্য, “লোকসভা নির্বাচনের আগে শিল্প-বিরোধী আন্দোলন করে এই এলাকা থেকে লোকসভায় তাদের প্রতিনিধি পাঠানোর দিবাস্বপ্ন দেখছে বিজেপি। এই ঘটনাই প্রমাণ করছে, তারা পুরুলিয়ায় শিল্প চায় না।”
যদিও বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিক্ষোভ করে ডিভিসি-র প্রকল্পে কাজ বন্ধ করে দেওয়া দলের সিদ্ধান্ত নয়। স্থানীয় কর্মীরা অনিচ্ছুক জমি মালিকদের নিয়ে এই কাজ করে থাকতে পারেন। দলগতভাবে বরং আমরা অনিচ্ছুক জমি মালিকদের বোঝানোর কাজই করছি।” ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দিনের ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতায় কাজ দ্রুতগতিতেই হচ্ছে। প্রশাসনিক সাহায্যেই বাকি কাজ শেষ করা যাবে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ওয়াটার করিডরের কাজে যাতে সমস্যা না হয়, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
|