লাইনে যুগলের দেহ, ব্যাগে বিয়ের শংসাপত্র
রুণ-তরুণীর মৃতদেহ মিলল রেললাইনের ধারে। বৃহস্পতিবার সকালে পুরুলিয়া-কোটশিলা শাখার পুরুলিয়া ও গৌরীনাথধাম স্টেশনের মাঝে দু’জনের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করে রেলপুলিশ। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, মৃতেরা হলেন সুমিত কুমার রেওয়ানি (২৪) ও সোনি বর্মা (১৯)। দু’জনে সম্প্রতি রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছিলেন বলে রেলপুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে।
সুমিতের বাড়ি পুরুলিয়া শহরের হুচুকপাড়া এলাকায়। সোনি রাঁচির কোতোয়ালি থানার কাছারি রোড এলাকার বাসিন্দা। রেলপুলিশের সুপার (খড়গপুর) মেহমুদ আখতার বলেন, “আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। কী ভাবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” প্রাথমিক ভাবে দেহ দু’টি দেখে রেলপুলিশের অনুমান, তাঁরা একসঙ্গে কোনও ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কারণ, দেহ দু’টি কাছাকাছি পড়েছিল।
পুরুলিয়া ও গৌরীনাথধাম স্টেশনের মাঝে পড়েছিল দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন সাতসকালেই পুরুলিয়া রেলপুলিশের কাছে খবর আসে, শহর ছাড়িয়ে যে রেললাইন রাঁচি বা বোকারোর দিকে গিয়েছে, তার ধারে দু’টি ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে রয়েছে। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, মৃত তরুণীর পর পরনে ছিল লাল ও নেভি ব্লু রঙের সালোয়ার কামিজ এবং যুবকের পরনে ছিল জ্যাকেট ও জিন্স। ঘটনাস্থল থেকে তদন্তকারী অফিসারেরা একটি কালো রঙের রুকস্যাক ও একটি মোটরবাইক উদ্ধার করেন। প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের অনুমান, ওই মোটরবাইকে করেই সুমিত-সোনি সেখানে গিয়েছিলেন। রেলপুলিশের এক অফিসার জানান, ব্যাগ থেকে ওই দু’জনের বিয়ের শংসাপত্র মিলেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা গত ১৬ ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের শংসাপত্র দেখেই রেলপুলিশ যুগলের পরিচয় জানতে পারে। দু’জনের বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিত পুরুলিয়া শহরের একটি ইরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজে পড়াশোনা করছিলেন। পড়াশোনার মাঝেই সিআরপিতে যোগ দিতে পরীক্ষা দেন। তাঁর আত্মীয়েরা জানিয়েছেন, সুমিত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। তবে, বাহিনীতে যোগদানের চিঠি এখনও হাতে পাননি। সুমিতের বাবা অশোক রেওয়ানি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। আর সোনির বাবার ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে মিষ্টির দোকান রয়েছে।
মৃতদেহ উদ্ধারের পর দিনভর নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে বিভিন্ন মহলে। যদিও ঘটনাস্থল থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি, তবু এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলেই প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান। প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা সবে এক মাস আগে বিয়ে করেছেন, তাঁরা জীবন শুরু করার আগে হঠাৎ কেন এই চরম পথ বেছে নিলেন। রেলপুলিশ এখনও এ ব্যাপারে অন্ধকারে। সুমিত-সোনির সম্পর্ক ও বিয়ে করা নিয়ে দুই পরিবারে কোনও মতান্তর ছিল কি না, জানা যাচ্ছে না তা-ও। কারণ, দুই পরিবারের কেউই এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিশেষ মুখ খুলতে চাননি।
ছেলের বিয়ের ব্যাপার যে প্রথমে তিনি জানতেন না, তা অবশ্য এ দিন নিজেই জানিয়েছেন সুমিতের বাবা অশোকবাবু। পড়শিরা জানিয়েছেন, তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে কোন কথা বলতে পারছেন না। অশোকবাবুর কথায়, “আমি প্রথমে বিয়ের খবর জানতাম না। কয়েক দিন আগে জানতে পারি।” তার পর কোনও মতান্তর হয়েছিল কি না, তা অবশ্য জানাননি তিনি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দিনভর সুমিত বাড়িতেই ছিলেন। রাত ৮টা নাগাদ বাবাকে বাড়িও পৌঁছে দিয়ে বেরিয়ে যান। রাত হয়ে যাওয়ার পরেও বাড়ি না ফেরায় তাঁকে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আর পাননি বাড়ির লোক। রেলপুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “মৃত্যু নিয়ে এখনও অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাঁদের খবর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা রাঁচি থেকে রওনা দিয়েছেন। বিয়ে নিয়ে মতের অমিল ছিল কি না এবং অন্যান্য বিষয়এ সবই তদন্ত সাপেক্ষ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.