মোবাইলের সূত্রে বহরমপুরে খুনের ঘটনায় আরও তথ্য পেল পুলিশ। নিত্যানন্দের মোবাইল ফোনের ‘কল-ডিটেলস্’ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিজয়াদেবীর ফ্ল্যাটে নিত্যানন্দ শনিবার প্রথমে গিয়েছিল সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে। তার পরে সে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। ফের ৭টা ৪৯ মিনিটে কিছু ক্ষণের জন্য মোবাইল ফোন চালু করে। পরে রাত ৯টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। রাত ১১টা নাগাদ মোবাইল ফোন চালু করে। পরে রাত ২টো ৩৫ মিনিট পর্যন্ত মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখে। তখন কিছু ক্ষণের জন্য মোবাইল ফোন চালু করার পরে সে ফের বন্ধ করে দেয়।
বৃহস্পতিবার নিত্যানন্দের সঙ্গে দেখা করতে মানতাদেবী বহরমপুর থানায় গিয়েছিলেন। মোবাইলের খোঁজে পুলিশ মালদহ ও শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়ায় গত মঙ্গল ও বুধবার গত দু’দিন নিত্যানন্দের সঙ্গে মানতাদেবীর দেখা হয়নি। নিত্যানন্দকে এদিন বহরমপুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনও মোবাইল উদ্ধার হয়নি। ওই মোবাইল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”
গত ৬ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাটের ঘরের তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও তাঁর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই তিন মহিলাকে খুন করার কথা ধৃত নিত্যানন্দ দাস কবুল করেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। কিন্তু নিত্যানন্দের স্ত্রী মমতা ওরফে মানতা দাস সে কথা মানতে চাননি। মানতাদেবী বলেন, “ঘটনার পর দিন থেকে গ্রেফতারের সময় পর্যন্ত আমি নিত্যানন্দের সঙ্গে ছিলাম। এত বড় ঘটনা যদি কেউ ঘটায় তাহলে সে এক বারের জন্যও বিচলিত হবে না! কিন্তু ওর কোনও অস্বাভাবিক আচরণ আমার চোখে পড়েনি।”
মানতাদেবী বলেন, “গত ৪ জানুয়ারি, শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ কলকাতা যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। রবিবার আড়াইটে নাগাদ নিত্যানন্দ বাড়ি ফিরে আসে। ওইদিন দুপুরে গাড়িতে করে নিত্যানন্দ আমাকে সঙ্গে নিয়ে মালদহ যায়। মালদহ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে বাসে রওনা দিয়ে রাতে বহরমপুরে ফিরে আসি দু’জনে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় কলকাতায় যায় নিত্যানন্দ। সেখানে চেম্বারের কাজ সেরে সন্ধ্যার ট্রেনে শিলিগুড়ি চলে যায় সে। আমি বৃহস্পতিবার সকালে বাসে মালদহ এবং সেখান থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাই। স্টেশনে রাত নটা নাগাদ আমাকে নিতেও আসে নিত্যানন্দ।”
জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই রাতে শিলিগুড়ির একটি হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ভাত ও মুরগির মাংস খান। পরে শুক্রবার দুপুরে অন্য একটি হোটেল গিয়ে ওঠেন। ওই দুপুরে শিলিগুড়ির একটি পার্কে মানতাদেবীকে বেড়াতেও নিয়ে যায় নিত্যানন্দ।
মানতাদেবী বলেন, “ওই রাতে আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বিছানায় বসে নিত্যানন্দ খাচ্ছিল। সেই সময়ে হোটেলের ঘরে বেল বাজতেই আমি গিয়ে দরজা খুলে দিই। তখনই পুলিশ ঘরে ঢুকে নিজেদের পরিচয় দেয়। অনেক সময়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে অনেকে নাম ভাঁড়িয়ে হোটেলে থাকে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম সেই কারণেই বোধহয় পুলিশ হানা দিয়েছে। নিত্যানন্দও পুলিশকে বলে আমরা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু পুলিশ কোনও কথা শোনেনি। নিত্যানন্দের পরনে তখন ধুতি ছিল। ওই অবস্থায় আমাদের গাড়িতে তুলে বহরমপুরে নিয়ে আসে।” পুলিশ হোটেলের ঘর থেকে একটি ল্যাপটপ, মানতাদেবীর দুটো মোবাইল ফোন এবং নিত্যানন্দের একটি ফোন বাজেয়াপ্ত করে। সেই সঙ্গে তন্ত্রসাধনা ও জ্যোতিষচর্চার বিভিন্ন বই, বিভিন্ন ‘জড়িবটি’ ও কোষ্ঠী বিচারের খাতাও নিয়ে আসে। মানতাদেবী বলেন, “মাস খানেক আগেও নিত্যানন্দের সঙ্গে কলকাতা ও দুর্গাপুর গিয়েছিলাম। যারা কোষ্ঠী বিচারের জন্য আসে, তাঁদের নাম-ঠিকানা লেখা থেকে প্রাথমিক বিষয় বুঝে নেওয়ার জন্য সহকারী হিসেবে কাজ করি। এ বারও ওই কারণেই আমাকে মালদহ ও শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়েছিল।”
|