নিকাহের চব্বিশ ঘণ্টা না কাটতেই তালাক! তা-ও আবার পাত্রীর জেদে। বুধবার মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানা এলাকার ভরতপুর গ্রামে এমন ঘটানোর পরে অবশ্য আক্ষেপ নেই বছর আঠারোর তরুণীর। বলছেন, “বিয়ে করতে এসে যে মানুষটা আমার বাবাকে মারধর করে, আমাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়, তার সঙ্গে ঘর করা যায় নাকি! তালাক দিয়ে সেই প্রতিবাদটাই করেছি।”
পেশায় মুরগি ব্যবসায়ী, সালারের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় ভরতপুরের ওই তরুণীর। সেই মতো বুধবার বিয়ে করতে আসেন ওই যুবক। সঙ্গে শ’দেড়েক বরযাত্রী। পেশায় দিনমজুর ওই তরুণীর বাবাও মেয়ের বিয়েতে কোনও ত্রুটি রাখেননি। বরযাত্রীরা ঢুকতেই হাতে-হাতে পৌঁছে যায় লুচি-সব্জি, ডিম সিদ্ধ, ফল-মিষ্টির জলখাবার। দুপুর গড়াতে শুরু হয় বিয়ের মূল পর্ব। তখনই কনে-সহ অনেকের মনে হয়, পাত্র যেন কিছুটা বেসামাল। মদের গন্ধও মিলছে। কিন্তু সাহস করে কেউই কিছু বলেননি। বিয়ের পাট মিটে যায়।
গোলমাল শুরু হয় দুপুরের খাওয়ার পর্ব শুরু হতেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, ‘খাবার ভাল হয়নি’ বলে বরযাত্রীদের কয়েকজন প্রথমে টিপ্পনী, পরে গালিগালাজ শুরু করেন। ততক্ষণে পরিবেশনকারীরাও বুঝে গিয়েছেন, পাত্র একা নন, তাঁর বাবা এবং বরযাত্রীদের অনেকেই মদ খেয়ে বেসামাল। পরিস্থিতি সামাল দিতে কনের বাবা বরযাত্রীদের বলেন, “কষ্ট করে এ সবের আয়োজন করেছি। আপনারা দয়া করে রাগারাগি করবেন না।” কিন্তু কে শোনে কার কথা? স্বয়ং পাত্র এবং তাঁর বাবা কনের বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। পাত্র চিৎকার করে সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী-কে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাত্রী পক্ষের। তাঁদের দাবি, প্যান্ডেল ভেঙে, খাবার নষ্ট করে রীতিমতো তাণ্ডব বাধায় পাত্রপক্ষ। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ এসে পাত্র-সহ মোট আট জনকে থানায় নিয়ে যায়। সালারের ওই পাত্র দাবি করতে থাকেন, “ওরা মিথ্যে অভিযোগ করছে। পাত্র কখনও মদ খেয়ে বিয়ে করতে যায় নাকি?”
ওই তরুণী অবশ্য থানায় গিয়ে জানিয়ে দেন, শ্বশুরবাড়ি যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বলেন, “যা সব নমুনা দেখলাম। এর পরে কার ভরসায় শ্বশুর বাড়ি যাব? ভাগ্যে থাকলে আবার বিয়ে হবে।” বৃহস্পতিবার আইন মেনেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। স্থানীয় ম্যারেজ রেজিস্ট্রার সৈয়দ মুশা রেজ্জা বলেন, “দু’পক্ষের আবেদনের উপর ভিত্তি করে আমিই ওঁদের বিয়েটা দিয়েছিলাম। এ দিন ওই দুই পক্ষেরই আবেদনের ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।”
জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিয়ে বাড়িতে খাবার নিয়ে গোলমাল হয়েছিল। তবে কোনও পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ জানাননি। ওঁরা নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নিয়েছেন। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করায় পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছে।” কনে বলছেন, “ভাগ্যিস, বিয়ের আসরেই লোকটা আর ওর পরিবারের আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছিল!” |