পরিবারের দাবি, মুক্তিপণের টাকা দেওয়া হয়েছিল অপহরণকারীদের। কিন্তু বুধবার থেকে নিখোঁজ ধুবুলিয়ার ব্যবসায়ী সঞ্জু ঘোষের (৩৭) দেহ উদ্ধার হল বৃহস্পতিবার। কৃষ্ণনগর সেতুর পাশ থেকে মেলা দেহটির কপাল, পা, হাঁটুতে অজস্র ক্ষত।
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “নিহতের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দেওয়া হয়। অপহরণ বা মুক্তিপণ দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশকে আগে ওঁরা কিছু জানাননি। আপাতত একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।” পুলিশ সুত্রের খবর, মৃতদেহে ধারালো অস্ত্রের একাধিক ক্ষত রয়েছে। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মেলার আগে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নয় পুলিশ।
বছরখানেক ধরে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ধুবুলিয়ার টিবি হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় বাড়ি করে ছিলেন সঞ্জুবাবু। বাড়ির পাশেই প্রসাধনী সামগ্রীর একটি দোকান ছিল তাঁর। বুধবার সকালে দোকানের জিনিস আনতে কৃষ্ণনগরে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। তাঁর স্ত্রী রুমার দাবি, ওই দিন বেলা ৩টে
নাগাদ সঞ্জুবাবুর মোবাইল থেকে
তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। অচেনা গলায় এক পুরুষ কণ্ঠ বলে, ‘তোর স্বামী আমাদের হাতে বন্দি। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা না দিলে, ওকে প্রাণে মেরে ফেলা
হবে। পুলিশের কাছে খবর দিলেও বিপদ আছে’।
রুমাদেবীর কথায়, “বলা হয়েছিল, টাকা জোগাড় করে নবদ্বীপে আমাদের পূর্ব পরিচিত এক জনের বাড়িতে যোগাযোগ করতে। বছর পাঁচেক আগে আমরা নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জে ভাড়া থাকতাম। সেখানেই ওই লোকটির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল স্বামীর সূত্রে। তবে ধুবুলিয়ায় আসার পরে সে যোগাযোগ কেটে গিয়েছিল।” রুমা ফোনে বিষয়টি জানান বাদকুল্লায় তাঁর বাপেরবাড়িতে।
বধূটি দাবি করেছেন, গয়না বেচে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা নাগাদ নবদ্বীপে পূর্ব পরিচিতের বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু সেই ব্যক্তির স্ত্রী তাঁকে বলেন, “স্বামী কোথায় আছেন, জানি না।” অনেক চাপাচাপিতেও সেই মহিলা মুখ খোলেননি।
নবদ্বীপ থেকে ফেরার পথে ফের সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রুমার মোবাইলে সঞ্জুর মোবাইল থেকে ফোন করা হয়। কৃষ্ণনগর সেতুর নীচে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রুমা ধুবুলিয়ায় ফেরার পরে, তাঁর মা আরতি দাস টাকা নিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে কৃষ্ণনগর সেতুর নীচে পৌঁছন। কৃষ্ণনগরের প্রান্তে তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন। আরতিদেবীর দাবি, “সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পরনে গামছা এবং মাথায় টুপি পরা এক বছর তিরিশের যুবক সেখানে হাজির হয়। প্রথমে বলে, ‘আপনার জামাই আমাদের কাছে আছে। ওর ভাল চান তো এখনই টাকা দিয়ে দিন’। টাকা নিয়ে সে বলে, ‘আপনার জামাইকে ছাড়া হবে না। যা করার, করে নিন’। এর পরেই ওই যুবক অন্ধকারে গা-ঢাকা দেয়।”
আরতিদেবীর দাবি, এর পরে রুমার থেকে ঠিকানা নিয়ে তিনি নবদ্বীপে সঞ্জুর সেই পরিচিতের বাড়িতে ফের যান। কিন্তু ওই পরিবার কিছু বলতে চায়নি। আরতিদেবী ধুবুলিয়ায় ফেরার পরে রাতভর অপেক্ষা করেন মা-মেয়ে। তাঁদের বক্তব্য, “পুলিশে জানালে খারাপ কিছু হবে ভয়ে থানায় যাইনি।”
এ দিন সকালে রুমা পড়শিদের কাছ থেকে খবর পান, কৃষ্ণনগর সেতুর পাশে রাস্তা থেকে একটি দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধুবুলিয়া থানায় গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, নবদ্বীপে তাঁদের পূর্ব পরিচিত ব্যক্তি সঞ্জু-হত্যায় জড়িত। যখন মুক্তিপণ চাইতে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল, তখন তিনি অন্য প্রান্ত থেকে আরও দু’জনের নামও শুনতে পান। এই তিন জনের বিরুদ্ধেই তিনি তাঁর স্বামীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশের কাছে। ধুবুলিয়া থানা অবশ্য জানিয়েছে, মহিলা নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি। একই কথা বলেছেন পুলিশ সুপারও। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, নবদ্বীপে সঞ্জুর পরিচিতর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। |