দিন কয়েক আগে বহরমপুরের প্রাণকেন্দ্র কাদাই অঞ্চলের আশাবরী আবাসনের ‘ডি’ ব্লকের একটি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়াদেবী ও বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই খুনের ঘটনার পরে আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন আশাবরী আবাসনের অন্য ব্লকের বাসিন্দারাও। এর পাশাপাশি বহরমপুরের অন্যান্য আবাসন কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে। ইতিমধ্যেই আশাবরী আবাসনের ‘সি’ ও ‘ডি’ ব্লকে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো হয়েছে। আবাসনে যাতায়াতকারীদের নাম ঠিকানাও লিখে রাখা হচ্ছে।
এক সময়ে যা বহরমপুরের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ছিল, প্রায় ১৩ বছর আগে সেই ‘বিমল কালচারাল হল’ ভেঙে গড়ে ওঠে আশাবরী আবাসন কমপ্লেক্স। ‘এ’ থেকে ‘এফ’ ব্লকগত কয়েক বছরে ওই ছ’টি ব্লকে প্রায় দেড়শোটি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও। ‘সি’ ও ‘ডি’ ব্লক মিলিয়ে আশাবরী আবাসনের সোসাইটি রয়েছে। ‘সি’ ব্লকের বাসিন্দা সৌরভ দাশগুপ্ত এবং ‘ডি’ ব্লকের প্রবীর কুমার দাস বলছেন, “শুরু থেকেই নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানো হলে হয়তো ওই ঘটনা নাও ঘটতে পারত।”
তবে পরিচিত থেকে আত্মীয়-স্বজন সকলকেই রেজিস্টার খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে ওই দুটি ব্লকের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ঢুকতে হচ্ছে বলে পরিচারিকাদের মধ্যে কিছুটা হলেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মী ভক্তি দাস বলেন, “বার বার করে নাম-ঠিকানা লিখে ফ্ল্যাটে কাজে যেতে হচ্ছে বলে কারও কারও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ফ্ল্যাটে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এখন নিরাপত্তার বিষয়টি সকলকে মানতেই হবে।”
আশাবরীর ‘এফ’ ব্লকের বাসিন্দারাও নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠকে বসেন। ওই আবাসন কমিটির সম্পাদক তরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিরাপত্তারক্ষী ও পরিচারিকাদেরও বলা হয়েছে তাঁদের ছবি ও ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র জমা দিতে। সেই সঙ্গে আবাসনের যাতায়াতের পথে সিসিটিভি ও অ্যালার্মের ব্যবস্থা করা যায় কী না সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।”
বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ-সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য বেশ কয়েকটি আবাসন কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসিক অর্থের পরিমাণও বাড়িয়েছেন।
কাদাইয়ের এক আবাসন কমিটির সম্পাদক টিঙ্কু আজাদ বলেন, “ওই ঘটনা আমদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে আমাদের জীবনে কত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। নিরাপত্তাকর্মী বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বুঝতে পারছি। কিন্তু ফ্ল্যাটের বেশ কিছু বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে। আর সেই কারণেই নিরাপত্তার খাতে খরচ বাড়াতে গেলেই তাঁরা ক্ষুণ্ণ হচ্ছেন।”
বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ সংস্থা’র এক কর্ণধার সুজিত দে বলেন, “কোনও দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগে খরচ পড়ে ছয় থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী নিতে হলে প্রায় ৮ হাজার টাকা মতো পড়বে। কিন্তু দেখা গিয়েছে আমাদের মত সংস্থার কাছ থেকে নিরাপত্তারক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকার বেশি খরচ করতে চান না আবাসনের বাসিন্দারা।” পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “আবাসনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনের খতিয়ে দেখে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।” মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্ত বলেন, “ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবাসনের বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছ থেকে সহায়তা চাইলে আমরা দেব।” |