বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্প দফতরের তহবিল তছরুপ নিয়ে তদন্ত দাবি করার তিন দিনের মধ্যে সরানো হল ওই প্রকল্পের সঞ্চালক জ্যোতির্ময় গোস্বামীকে। শো-কজ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার কর্মীকেও। বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁকে সরানো হয়। ওই পদে নিযুক্ত করা হয়েছে গণিতের শিক্ষক আবশোস আলি শেখকে। সহ-সঞ্চালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন কলেজসমূহের উপ-পরিদর্শক সুজিতকুমার চৌধুরী। শ্রীপতিবাবুর চিঠিতে অবশ্য নতুন নিয়োগ বা জ্যোতির্ময়বাবুর অপসারণ বিষয়ে কোনও কারণ দেখানো হয়নি। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের দাবি, “উনি আমাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে ওঁকে সরানো হয়নি। গত ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে ওঁকে ওই পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটা জানতে পেরেই উনি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কিছু অবান্তর প্রশ্ন তুলেছেন।”
তবে কর্মসমিতিতে কেন তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য। বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার বলেন, “ওঁর সঙ্গে কোনও কর্মী কাজ করতে চাইছিলেন না। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাউকে ওই পদে নিয়োগ করাই ভুল হয়েছে।” সোমবার তাঁর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জ্যোতির্ময়বাবু অভিযোগ করেছিলেন, প্রকল্পের সমস্ত টাকা মিলছে না, দীর্ঘদিন ধরে দফতর সংস্কার বা নতুন কর্মী নিয়োগও হচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ পেয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তে আসে। সেই রিপোর্টেও বেশ কিছু অসঙ্গতির উল্লেখ ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিন রেজিষ্ট্রার বলেন, “জাতীয় সেবা প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটারের এই ধরণের সাংবাদিক বৈঠক ডাকার এক্তিয়ার নেই। সাংবাদির সম্মেলন করাতে গেলে তা ডাকবেন উপাচার্য বা রেজিষ্ট্রার। এছাড়া জ্যোতির্ময়বাবুর বিরুদ্ধে সিউড়ি, হেতমপুর ইত্যাদি কলেজ অভিযোগ করেছিল যে সেখানে এনএনএসের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
এ দিনই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চার কর্মী, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারি সমিতির সহ-সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ওই সমিতির সক্রিয় সদস্য, ডিন সায়েন্স দফতরের কর্মী সীতারাম সিংহ ও রেজিষ্ট্রার দফতরের দুই সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হারাধন মান্না ও দিবাকর রাউতকে জ্যোতির্ময়বাবুর সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য শো-কজও করা হয়। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। শ্রীপতিবাবু বলেন, “বেআইনি সাংবাদিক বৈঠকে ওঁরা কাজ ফেলে যোগ দেওয়ায় ওঁদের শো-কজ করা হয়েছে।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারি সমিতির নেতা শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই চারজন আমাদের সংগঠনের সদস্য। ওঁরা হৈ চৈ শুনে জাতীয় সেবা প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটরের ঘরে ঢুকেছিলেন, সাংবাদিকদের কোনও বিবৃতি দেননি। তাছাড়া ওই ঘরে আরও কয়েকজন কর্মীও ছিলেন। তাঁদের কিন্তু শোকজ করা হয়নি।” তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসারের যে কোনও বেআইনি কাজ বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি কেন তা করেননি, রেজিষ্ট্রারের সঙ্গে দেখা করে সে প্রশ্ন তুলব।” তবে এ দিন বিবেকানন্দ কলেজে (ওই কলেজেরই শিক্ষক তিনি) ফের সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, “আইনত আমাকে এভাবে সরিয়ে দেওয়া যায়না। আমি এই ঘটনার কথা আচার্য, উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ও বর্ধমানের বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে জানাব। আমাকে সরিয়ে দিয়ে উপাচার্যই প্রমাণ করলেন আমার অভিযোগ সত্যি। তবে আমাকে সরিয়ে ওই তছরুপের ঘটনা ধামা চাপা দেওয়া যাবে না।” |