দুর্নীতিতে প্রশ্রয় উপাচার্যের, বৈঠকে অভিযোগ সঞ্চালকের
পাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের বিরুদ্ধে তহবিল তছরূপকারীদের প্রশ্রয় দেওয়া-সহ নানা অনিয়ম চলতে দেওয়ার অভিযোগ তুললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্পের সঞ্চালক জ্যোতির্ময় গোস্বামী। সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি ক্যাম্পাসে জাতীয় সেবা প্রকল্পের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জ্যোতির্ময়বাবু এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “দু’বছর হল ওই দফতরের দায়িত্ব পেয়েছি। তারপর থেকেই দেখেছি, এনএসএস দফতরে যে পরিমাণ টাকা জমা পড়ার কথা, তার চেয়ে ১৫-২০ লক্ষ টাকা কম জমা পড়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকাররের তরফে এই টাকা পাঠানো হলেও, আমাদের কাছে তা পৌঁছচ্ছে না। এছাড়া দফতরে কর্মী সঙ্কোচন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ঘরটিকে ডাস্টবিনে পরিণত করে রাখা হয়েছে। সমস্যার কথা বারবার উপাচার্যকে জানিয়েও সমাধান হয়নি। উপাচার্য দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। উনি চাননা এনএসএসের উন্নয়ন হোক।”
এনএসএস-এর দফতর। —নিজস্ব চিত্র।
উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার অবশ্য ফোনে বলেন, “আমি শুনেছি এনএসএস বিভাগের প্রকল্প সঞ্চালক একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। তিনি যা বলেছেন, আপনারা নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি অনুসারে লিখুন।” কিন্তু ওই প্রকল্প সঞ্চালকের যাবতীয় অভিযোগ খোদ উপাচার্যের বিরুদ্ধে, একথা বলার পরে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।”
এনএসএস দফতর গ্রামে গিয়ে কলেজ পড়ুয়াদের দিয়ে নানা ধরণের সেবামূলক কাজ করায়। এর মধ্যে রয়েছে নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সাফাই, রাস্তা তৈরি ও মেরামত, পুকুর সংস্কার, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ইত্যাদি। গত দু’বছর ধরে ওই দফতরের সঞ্চালকের দায়িত্বে রয়েছেন বর্ধমানের বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক জ্যোর্তিময়বাবু।
এ দিন জ্যোতির্ময়বাবু জানান, বারবার বলা সত্বেও ওই বিভাগের জন্য কোনও পৃথক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। বিশয়টি নিয়ে রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরকেও আবেদন জানান তিনি। উচ্চশিক্ষা দফতর এ বিষয়ে তাদের অসহয়তার কথা জানায়। এর পরে জনৈক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা বিভাগের দুই সদস্যের একটি দল বর্ধমানে এসে অভিযোগের তদন্ত করেন ২০ মে। সেই তদন্তের রিপোর্ট ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত অভাব দূর করার সুপারিশ ওই দুই সদস্য, এ এন দে ও আর এন রায়, উচ্চশিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিব, কে কে ভৌমিকের কাছে পাঠান। ওই প্রতিবেদনে তাঁরা ১০ দফা বিচ্যুতির কথা জানান। সেগুলি দূর করার সুপারিশও করেন। এর মধ্যে এনএসএস বিভাগে ক্যাশিয়ার ও অ্যাকাউন্টেন্ট নিয়োগের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তকারী কমিটি ওই প্রতিবেদন পেশ করার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত এনএসএস দফতরের ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া হয় বলে জ্যোতির্ময়বাবুর অভিযোগ। এছাড়া চারজনের মধ্যে তিন কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলেও তাঁর দাবি।
জ্যোতির্ময়বাবু আরও জানান, প্রতি বছর জাতীয় সেবা প্রকল্প বাবদ রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা পড়ার কথা। কিন্তু টাকা চাইতে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের তরফে জানানো হয়, অত টাকা নেই। অথচ বারবার চেয়েও কোনও হিসেব দিতে পারছে না ওই দফতর। তাঁর দাবি, গত দু’বছর ধরে এনএসএস-এর তহবিলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা জমা পড়েনি। প্রথমে উপাচার্য জানিয়েছিলেন, যেহেতু ওই দফতরের কোনও পৃথক অ্যাকাউন্ট নেই, তাই সরাসরি টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। পরে আলাদা অ্যাকাউন্ট খুললেও, সেখানেও বরাদ্দ টাকা পাঠানো হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ। জ্যোর্তিময়বাবুর আরও অভিযোগ, এনএসএসের কাজে বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম ও হুগলিতে ঘোরা বাবদ গত এক বছরে মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু উপাচার্য এই কাজের জন্য খরচ দেখিয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এই প্রসঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে উঠলেও উপাচার্য প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান বলে তিনি জানান।
তবে কোনও অভিযোগেরই উত্তর দিতে চাননি উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার। শুধু ফোনে বলেন, “ওই অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।” আর অভিযোগগুলি সত্যি না মিথ্যে তা জানতে চাওয়া হলেও তিনি বলেন, “সাংবাদিক বৈঠকে জ্যোতির্ময়বাবু যা বলেছেন, আপনাদের জ্ঞান, বুদ্ধি মত লিখে দিন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.