আয়তনে না বাড়লেও জনঘনত্বে ক্রমশ বাড়ছে শহর। সঙ্গে টান পড়ছে নাগরিক সুযোগ সুবিধাতে।
কালনায় পুরবাসী, আশপাশের গ্রাম, শহর, কর্মসূত্রে ভিন জেলা থেকে আসা মানুষের সঙ্গে সারা বছরই কমবেশি আসা-যাওয়া রয়েছে দেশ বিদেশি পর্যটকদের। কিন্তু সে তুলনায় পরিকাঠামো নেই বলেই অভিযোগ।
এক সময় বর্ধমান রাজ পরিবারের হাত ধরে একাধিক পুরাকীর্তিতে সেজে উঠেছিল ভাগীরথীর পাড়ের এই শহর। ১৯৯০ সালে শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩২ হাজারের কিছু বেশি। ২০১১ সালের জণগণনায় সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজারে। এর মধ্যে অনেক পরিবার বেড়েছে, অনেকে বাইরে থেকে এসে পাকাপাকি ভাবে বাস জমিয়েছেন। ফলে ১৮টি ওয়ার্ডের খুব কম জায়গাতেই একসঙ্গে কয়েক বিঘে জমি ফাঁকা রয়েছে।
জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা গিয়ে বাড়ছে ছোটখাট দোকান, ব্যবসা। বাসিন্দাদের দাবি, শহরের কলেজ মোড়, তেঁতুলতলা, চকবাজার-সহ বহু এলাকার রাস্তা এখন বেআইনি দখলদারদের হাতে চলে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে যানজট। শহরের বাসিন্দা বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সকাল দশটার পর থেকেই পুরসভা লাগোয়া রাস্তায় যানজট হয়। আর এর মধ্যে যদি কোনও লরি বা ট্রাক ঢুকে পড়ে তাহলে তো ব্যাস।” |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরে দূষণও ক্রমেই বাড়ছে। চালকল বা অন্য কারখানার বর্জ্য এলাকার নানা পুকুর বা নালায় গিয়ে মিশছে। কিন্তু সেগুলির নিকাশি ঠিক ভাবে হচ্ছে না। একসময় শহর ঘিরে প্রায় তিনশোটা পুকুর ছিল। কমবেশি সবগুলোতেই মাছ চাষ করা হত। কিন্তু এখন মাছ চাষ সেভাবে হয় না। সংস্কারের অভাবে পুকুরগুলোও মজে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে মজে যাওয়া পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সমস্যা রয়েছে শহর সাফ করা নিয়েও। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ১৫ আগে সাফাই কর্মীদের সংখ্যা ছিল ৭২। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে। অথচ শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। ফলে অনেক ওয়ার্ডেই সাফাইকর্মীরা সময়ে পৌঁছতে পারেন না। নর্দমা থেকে তোলা নোংরা দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এছাড়া জনসংখ্যার চাপে ঘরবাড়ি বাড়তে থাকায় এলাকায় খোলা মাঠ প্রায় নেই বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। নিমতলা মাঠে ইন্ডোর স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল ও কালীনগর পাড়ার মাঠে মাথা তুলেছে কালনা কলেজের মহিলা হস্টেল। ফলে খেলার জন্য পড়ে রয়েছে রাজবাড়ির মাঠের মতো দু’একটি মাঠ। মাঠের অভাবে অনেককেই অনুশীলন করতে হয় ভাগীরথীর চরে। শহরের এক ফুটবল খেলোয়াড় প্রদীপ দাসের কথায়, “প্রতিবার পুরসভার উদ্যোগে ফুটবল লিগ হয়। অথচ বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই খেলার জায়গা নেই।” এছাড়া ঘিঞ্জি বাজার, জনবহুল জায়গায় বা বাজারের মধ্যেই আগুন জ্বালিয়ে রান্না, বিভিন্ন রাস্তার উপর দিয়ে গোছা গোছা বিদ্যুতের তার ঝুলে থাকা- এ সব নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
সমস্যাগুলির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কালনার পুরপ্রধান বিশ্বজিত্ কুণ্ডু। তিনি বলেন, “যা পরিস্থিতি তাতে শহরের আয়তন বাড়ানো গেলে ভাল হয়। সেক্ষেত্রে এক দিকে হাটকালনা অন্য দিকে পূর্বসাতগাছিয়া পঞ্চায়েত এলাকার কথা ভাবা যেতে পারে। পুরসভায় এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।” উপপুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ জানান, জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক পরিষেবাই ঠিকমতো দেওয়া যাচ্ছে না। সাফাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। চেষ্টা চলছে কর্মী বাড়ানোর। |