কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-র জঙ্গিদের হামলার আশঙ্কায় রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর নিরাপত্তা দ্বিগুণ করল মালদহ জেলা পুলিশ। ২৭ ডিসেম্বর মালদহের হবিবপুরে বাসে নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ স্পষ্ট কিছু তথ্যের ভিত্তিতে ওই আশঙ্কা করছে। বুধবার পুলিশ ওই মামলায় জড়িত সন্দেহে আরও দুই কেপিপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম হল সঞ্জয় বর্মন ও উত্তম মণ্ডল। সঞ্জয়বাবু কেপিপির বামনগোলা ব্লকের কোষাধ্যক্ষ। উত্তমবাবুও কেপিপির সক্রিয় কর্মী। পুলিশের দাবি, ধৃত দু’জন ফেরার কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহের কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ওই দু’জনই বাসে হামলার ঘটনার ষড়যন্ত্রে যুক্ত বলে পুলিশের সন্দেহ। এই নিয়ে ওই ঘটনায় ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করল। কেপিপির তরফে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের দুই নেতাকে পুলিশ জেরার নামে থানায় নিয়ে কয়েকদিন আটকে রাখার পরে গ্রেফতার করেছে। সে জন্য মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ধৃতদের পরিবারের লোকজন।
পুলিশের দাবি, আগে যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের জেরার সময়েই পুলিশ তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী ও পুলিশ কর্তাদের একাংশের উপরে হামলার ছক কষা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই মতো কৃষ্ণেন্দুবাবুর নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা ৩ জন থেকে বাড়িয়ে ৬ জন করা হয়েছে। নতুন নিযুক্ত তিন নিরাপত্তা রক্ষীর কাছে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ১০ জন তৃণমূল নেতাকে দেহরক্ষী দিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের উপরেও হামলার আশঙ্কা থাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সত্যজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেএলও অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করেই থাকে, পুলিশ সজাগ রয়েছে।”
পর্যটনমন্ত্রী তাঁর উপরে হামলার ছক কষার বিষয়টি পুলিশের কাছ থেকেই শুনেছেন। মন্ত্রী বলেন, “এর আগে আমাকে অনেকেই খুনের হমকি দিয়েছে। এখন শুনেছি কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহ আমাকে ও জেলা পুলিশ সুপারকে মারার চক্রান্ত করছে। মানুষের উপর হামলার হুমকি দিয়েছে। আমার নিরাপত্তার চেয়ে সাধারন মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে আমি অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। সাধারণ মানুষ যাতে কেএলও জঙ্গিদের হামলার শিকার না হয় সে জন্য হবিবপুর, বামনগোলা, গাজল ও পুরাতন মালদহে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ কেওএলও জঙ্গিদের হামলার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন।” তাঁর অভিযোগ, পড়শি একটি দেশের জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে কেএলও সাহায্য পাচ্ছে।
এ দিন কেপিপির জেলা সভাপতি বাদল সরকার বলেন, “সঞ্জয় আমাদের সংগঠনের বামনগোলা ব্লকের কোষাধ্যক্ষ। কেএলওর সঙ্গে আমাদের ও সঞ্জয়ের কোন যোগাযোগ নেই। কৃষিকাজ করে সে সংসার চালায়। অথচ পুলিশ আমাদের দলের কর্মী নেতাদের কেএলও জঙ্গি সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে। আমরা জেলা পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানাব। আদালতে মামলা করব।” ধৃত সঞ্জয় বর্মনের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, “পুলিশ শুক্রবার রাত ৮ টা নাগাদ জেরার জন্য আমার স্বামীকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ বলেছিল জেরা করে ছেড়ে দেবে। পাঁচদিন থানায় আটকে বুধবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে।”
আগামী ১৭ জানুয়ারি কেএলও উত্তরবঙ্গ ও লাগোয়া অসমের ৪ জেলায় বন্ধ ডেকেছে। ওই দিনই মালদহে যে কোনও জনবহুল জায়গায় নাশকতা চালানোর আশঙ্কা করছে প্রশাসন। পুলিশের এক কর্তার দাবি, কয়েকদিন আগে পুলিশ মালখান সিংহের এক ঘনিষ্ঠকে জেরা করার সময়ে মন্ত্রী, এসপি-র উপরে হামলার ছকের বিষয়টি জানা যায়। |