বছর দুয়েক আগে ধসার হামলা থেকে আলু বাঁচাতে খেতে দেশি মদ স্প্রে করেছিলেন নাগেশ্বরগুড়ির এক দল চাষি। এ বার আর সেই পথে হাঁটেননি তাঁরা। দোকান থেকে ওষুধ কিনে দিনের পর দিন খেতে স্প্রে করছেন তাঁরা। তাও সুরাহা মিলছে না। ধসা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে খেতের পর খেতে। সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই ওষুধ দেওয়ার পরে কেন ধসার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না?
শুধু কোচবিহারের নাগেশ্বরগুড়ি গ্রামেই নয়, জেলার বহু গ্রামে আলু ক্ষেতে ধসা ছড়িয়েছে। তুফানগঞ্জ ও কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকে ধসা ব্যাপক পরিমাণে ছড়িয়েছে। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ধসা ছড়িয়েছে। |
কোচবিহার জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা বলরাম দাস বলেছেন, “আলু বীজ খারাপ হওয়ায় এ বারে ধসা ছড়িয়ে পড়ার পরে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে। সে ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। সমস্ত জায়গায় গিয়ে কৃষকদের ধসা রুখতে কী কী ওষুধ দিতে হবে তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেকে সঠিক ভাবে ওষুধ স্প্রে করতে জানেন না। সেটাও একটা সমস্যা। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ধসা নতুন করে ছড়াবে না।” কৃষি দফতর থেকে জেলার কর্মীদের গত শনি ও রবিবারের ছুটি বাতিল করে দিয়ে ধসা মোকাবিলায় নামতে বলা হয়। কর্মীদের জেলা কৃষি দফতর থেকে রাজ্য কৃষি অধিকর্তার অফিসেও একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়। কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। দুই মহকুমায় আলুতে ধসা ছড়িয়েছে। তুফানগঞ্জের ধলপল ১ পঞ্চায়েতে শিকদারেরখাতা এলাকায় ধসা ব্যপক ভাবে ছড়িয়েছে। |
এ ছাড়া নাককাটিগছ সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ধসা ছড়িয়েছে। কোচবিহার-২ ব্লকের ঢাংঢিংগুড়ি, বড় রাংরস, বাউদিয়ার কুঠি, মাষানকুড়ার জমিতে ধসা ছড়ায়। কৃষকরা জানান, ধসায় কিছু জমির আলু নষ্ট হয়েছে। কিছু জমিতে সবে ছড়াতে শুরু করছে।
দিন কয়েক আগে শীত জাকিয়ে পড়া ও কুয়াশার কারণেই ধসা ব্যাপক পরিমাণে ছড়াতে শুরু করে। আবার দু’দিন রোদ হওয়ায় ধসা ছড়ানো বন্ধ হয়। নাগেশ্বরগুড়ির কৃষক প্রফুল্ল রায়, নিবারণ চন্দ্র দাসরা জানান, সাধারণ ভাবে সপ্তাহে একদিন করে ক্ষেতে ওষুধ স্প্রে করতে হয়। ধসার আক্রমণ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন স্প্রে করা হচ্ছে। কিছু হচ্ছে না। প্রফুল্লবাবু বলেন “এক বিঘায় চাষ করতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। এ বারে খরচ বেড়েছে। কৃষিকর্তাদের পরামর্শ মতো ওষুধপত্র দিয়েও ধসা আটকানো যাচ্ছে না।”
তাই স্থানীয় কৃষকদের দাবি, প্রতি বছর যেখানে আলুতে ধসার আক্রমণ হচ্ছে, সেখানে আগেভাগেই কৃষি দফতরের তৎপর হওয়া দরকার। |