নানা অসুখে ভুগে গত এক সপ্তাহে তিন জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ডুয়ার্সের বন্ধ রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে। এ নিয়ে গত তিন মাসে ওই বাগানে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকদের দাবি। বাগানে পানীয় জলের অভাবের পাশাপাশি খাদ্যাভাব, চিকিৎসার মতো ঠিকমত না মেলায় বাগান জুড়ে হাহাকার পড়ে গিয়েছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। শ্রমিকেরা জানান, গত এক সপ্তাহে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তারা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি।
দুই মাস আগে বাগানে রাজ্যের তিন মন্ত্রী ঘুরে গেলেও বাগানের পরিস্থিতি পাল্টায়নি বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। বুধবার রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু অবশ্য রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে নতুন করে শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাননি বলে দাবি করেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, “বাগানটির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সেই কারণে বাগান চালু করতে সমস্যা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকদের অভাব দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “তিন জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। কি কারণে তাঁরা মারা গিয়েছেন। তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। বাকি বিষয়গুলি দেখা হচ্ছে।” |
বাগানের চিকিৎসা পরিষেবার খামতির কথা অস্বীকার করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার। তাঁর কথায়, “সপ্তাহে দুই দিন করে বাগানে মেডিক্যাল ক্যাম্প হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা তা করছে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে ওই সংস্থার কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।” গত ১১ জানুয়ারি মারা যান ঘাসি লাইনের বাসিন্দা বাগানের শ্রমিক শিবশঙ্কর ওঁরাও (৪৭)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নানা অসুখে ভুগছিলেন। ১৩ জানুয়ারি ডিভিশন লাইনের বাসিন্দা শ্রমিক কালু তামাং (৫২)-এর মৃত্যু হয়। দু বছর ধরে তিনি যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন। অনিয়মিত চিকিৎসা করায় মৃত্যুর কারণ বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। এর পরে মঙ্গলবার রাতে অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে মৃত্যু হয় সীতা ওঁরাও-এর (৪৮)। টাকার অভাবে তাঁর চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না বলে মৃতের পরিবারের লোকজনের দাবি। ২০০৩ সাল থেকে বাগানটি কয়েক দফায় বন্ধ হয়। গত বছর ১৯ অক্টোবর শেষবার বাগান টি বন্ধ করে মালিক পক্ষ। বাগান সূত্রের খবর, কর্তৃপক্ষ বকেয়া কয়েক লক্ষ টাকার বিদ্যুতের বিল পরিশোধ না করায় সে সময় থেকে বাগানের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ঘরে ঘরে ঘরে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বাগানের ৯টি গভীর নলকূপ থেকে কয়েক হাজার বাসিন্দা জল সংগ্রহ করছেন। অনেকে ডায়না নদী থেকে জল এনে তেষ্টা মেটাচ্ছেন। ভোর হলে বাগানের ৮৮৬ জন শ্রমিক ও পরিবারের লোকজনের কাজের সন্ধানে ভুটানের পাথর খাদানে পাড়ি দিচ্ছেন। সরকারি সাহায্য বলতে মাসে অন্ত্যোদয় যোজনার সাত কিলোগ্রাম চাল, গম। ১০০ দিন কাজ অনিয়মিত। দিন ১৫ আগে তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। |