চা বাগানের পাতা চুরি ঠেকাতে দিল্লিতে দরবার করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মানিক গঞ্জ এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষিরা। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার অন্য প্রান্তে হাজার খানেক ছোট চা বাগান জলপাইগুড়ি জেলার মানিকগঞ্জ থেকে বেরুবাড়ি এলাকায় রয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৪ হাজার একর জমিতে বাগান রয়েছে। বছরে গড়ে ৯ হাজার কেজি চা পাতা উৎপাদন হয় প্রতি একরে। এই বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত চা-র অধিকাংশই চুরি হয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলা ক্ষুদ্র চাষি সমিতির তরফে মাস তিন আগে জেলা পুলিশ-প্রশাসনে জানানো হয়। কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে বাগানগুলি থাকায়, সেখানে পুলিশি টহলদারি সম্ভব নয় বলেও সেই সময়ে প্রশাসন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পরে বিএসএফ কর্তৃপক্ষকেও জানায় চা চাষিরা। তবু সমস্যার সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। তাই চা পর্ষদ এবং বিএসএফের ছাড়পত্র নিয়ে তৈরি বাগানে দিনের পর দিন চুরির ঘটনা রুখতে এ বারে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সীমান্তবর্তী গ্রামে চা চাষিরা।
গ্রামের চাষিদের দিল্লি নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতিও। সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তীর কথায়, “এখন দিল্লি যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প নেই। প্রশাসন-বিএসএফ সকলকেই জানিয়েছি। তবু চুরি বন্ধ হয়নি। তাই দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানে দাবি করা হবে।”
কী ভাবে চুরি হচ্ছে চা পাতা?
চাষিদের দাবি, সন্ধ্যায় সীমান্তের গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকালের আগে কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে যাওয়া যায় না। চুরির আশঙ্কায় সীমান্তের বাসিন্দারা কাঁটাতারের বেড়ার এ পার থেকেই নজরদারি চালায়। চাষিদের অভিযোগ, ভোর রাতের দিকে বাগানে ঢুকে দুষ্কৃতী দল পাতা, সেচের যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। মানিকগঞ্জের এক চা চাষির কথায়, “রাতে কখনও এ পারে দাঁড়িয়ে যদি ও পারের চা বাগানে দুষ্কৃতীদের দেখাও যায়, তখন চিৎকার করা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না।”
ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন মাসে সীমান্তবর্তী বাগানগুলি থেকে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকার জল সেচের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি চা পাতা চুরির পরিমাণ ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। গত ছ’মাসে পাতা চুরির পরিমাণ বেড়ে প্রায় ১০০ কেজি হয়েছে বলে সমিতি জানাচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য অন্তত ১০ লক্ষ টাকা। এই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের তরফে কিছুই করার নেই, এটা বিএসএফের বিষয়। তবু ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” বিএসএফের নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র নন্দীশ কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন, “পাতা চুরির অভিযোগ জানি। কোন এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পরে ওই এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হবে।” |