পুলিশের সামনেই ৮-১০ জন তরুণী মিলে এক ছাত্রীকে ঘিরে বেধড়ক মারছেন। কেউ ছাতা দিয়ে পেটাচ্ছেন। কেউ চড়-থাপ্পড় মারছেন। কেউ আবার জামাকাপড় এমনভাবে টেনে মনোনয়ন পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন যা কি না শ্লীলতাহানির সামিল বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই। বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ি থানার ডাবগ্রামের মহিলা কলেজে প্রায় মিনিট দশেক ধরে এমন মারধর চললেও পুলিশ কার্যত কিছুই করতে পারেনি। কারণ, সেখানে তখন একজন মাত্র মহিলা পুলিশ। বাকিরা পুরুষ পুলিশকর্মী। একদল মারমুখী মেয়েকে সরাতে গেলে হিতে-বিপরীত হতে পারে ভেবে পুরুষ পুলিশকর্মীরা কার্যত হাত গুটিয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিগৃহীতার পোশাক নিয়ে যখন টানাটানি চরমে, সেই সময়ে পুরুষ পুলিশকর্মীরা গিয়ে প্রথমে অনুনয়-বিনয় করে, পরে মারমুখি তরুণীদের কোনমতে নিরস্ত করে ছাত্রীটিকে পুলিশের জিপে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেন। এই ঘটনার পরে কেন মহিলা কলেজে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়নি সেই প্রশ্ন উঠেছে। কলেজের ছাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন না-করার আড়ালে কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কি না তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, মারমুখী মেয়েদের সামলানোর জন্য আরও মহিলা পুলিশ পাঠানোর জন্য একজন পুলিশকর্মীকে মোবাইলে ফোন করে কাউকে বারেবারে অনুরোধ করতেও দেখা গিয়েছে। |
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই প্রশ্ন, গোলমালের আশঙ্কা ছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে সে কথা পুলিশ-প্রশাসনকে আগাম জানানোও হয়েছিল। তবুও শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে গোলমাল এড়াতে কেন পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি কেন? ক্ষুব্ধ প্রত্যক্ষদর্শীদের শান্ত করতে এক পুলিশকর্মীকে বলতে শোনা গিয়েছে, উপর মহল থেকে যেমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনই মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
মহিলা কলেজে মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে যে গোলমাল হতে পারে তা পুলিশেরও জানা ছিল। তবুও কেন পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশকর্মী রাখা হয়নি? জবাবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “এমনিতেই আমাদের মহিলা পুলিশের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একদিনে অনেক কলেজে মনোয়ন পত্র জমা ছিল। সব জায়গায় মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তাই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি। আগামী দিনে আরও বাড়ানো হবে।”
শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৩০০ জন। সেখানে ৫-৭ জন মহিলা পুলিশ মোতায়েন করে গোলমাল ঠেকানোর চেষ্টা করলে যে কাজের কাজ হবে না সে কথা পুলিশ অফিসারদের অনেকেই একান্তে মেনেছেন। এমনকী, মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা না-বাড়ালে যে এমন সমস্যা রয়েই যাবে সে কথাও অফিসারদের কয়েকজন স্বীকারও করেছেন। সে জন্যই মহিলা কলেজের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গোলমালের খবর পেয়ে শতাধিক অভিভাবক কলেজের সামনে জড়ো হন। কয়েকজন অভিভাবক জানান, কলেজের ভোট পর্ব না-চুকলে বাড়ির মেয়েকে তাঁরা বাইরে বার হতে দেবেন না। শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতাদের কয়েকজন ঘটনার কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলের একাধিক জেলা স্তরের নেতাও স্বীকার করেছেন, ওই কলেজে যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা উচিত ছিল। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা কতবার পুলিশ কমিশনারকে গোলমালের আশঙ্কা করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবুও যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা পুলিশ ওই কলেজে দেওয়া হয়নি। সে জন্য ছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেকেই শঙ্কিত।” |