ছাত্রভোট ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত উত্তর
শিলিগুড়ির ৫ কলেজে সংঘর্ষ,
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
নোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটল শিলিগুড়ির ৫টি কলেজে। মারপিট হল বালুরঘাট ও মালদহের চাঁচলেও। কোথাও লাঠিসোটা, লাঠি নিয়ে হামলায় হাত ফাটল ছাত্র পরিষদ নেতার। কোথাও এসএফআই কর্মী ছাত্রীকে ৮-১০ জন মিলে ঘিরে কিল-চড় মেরে, ছাতাপেটা করে জামাকাপড় টানা হল। আবার কোথাও এসএফআই কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির গিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদের দিকে। পক্ষান্তরে, টিএমসিপির অভিযোগ, এসএফআই ও ছাত্র পরিষদ বহিরাগতদের কলেজে ঢোকানোর চেষ্টা করায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
যে কটি কলেজে গোলমাল হয়েছে, সব জায়গাতেই সকাল থেকেই পুলিশ ছিল। তা সত্ত্বেও কী ভাবে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটল সেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের অনেকেই। ছাত্র পরিষদ ও এসএফআই আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে অভিযোগ করেছে, পুলিশ প্রথমে দাঁড়িয়ে বেধড়ক মারধর দেখার পরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত কিছুটা সক্রিয় হয়েছে।
শিলিগুড়ি কমার্স কলেজে রক্তাক্ত ছাত্র পরিষদ নেতা সৌরভ ভৌমিক।
যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহনের দাবি, “প্রতিটি এলাকাতেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থাকায় বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। এমনকী, কয়েকটি ক্ষেত্রে কলেজ চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি করে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনা হয়েছে।” ৭টি কলেজে প্রায় দিনভর মারপিট হলেও পুলিশ কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করেনি কেন সেই প্রশ্নে কমিশনারের মন্তব্য, “তদন্ত না-করে ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করা ঠিক নয়।”
এ দিন সকালে প্রথম গোলমাল বাধে শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের পলিটেকনিক কলেজে। বেলা ১১টা থেকে ওই কলেজে মনোনয়নপত্র বিলি শুরু হয়। গত বছর কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। মনোনয়নপত্র তোলা শুরু হতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। ছাত্র পরিষদের বিকি দেবনাথ, বিলু দাস সহ কয়েকজন জখম হন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজনও জখম হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। কলেজের ছাত্র সংসদের ৩৬ টি আসনের মধ্যে এ দিন ছাত্র পরিষদের তরফে মাত্র ১৭ টি মনোনয়ন পত্র তোলা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে এ দিন ১২ টি মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবারও মনোনয়ন পত্র তোলার দিন রয়েছে।
এর পরেই শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের মহিলা কলেজে ব্যাপক গোলমাল শুরু হয়। পুলিশের সামনেই এসএফআই ও টিএমসিপির নেতা-কর্মীরা মারপিটে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকজন জখম হন। গোলমালের আশঙ্কা বুঝে কলেজ কর্তৃপক্ষ আগেই গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাইরে পুলিশের সামনেই ছাত্রীরা হাতাহাতি, চুলোচুলি করতে থাকেন। বেলা পৌনে ১ টা নাগাদ মনোনয়ন পত্র বিলি বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের নির্বাচন কমিটির অন্যতম শিক্ষিকা সুমিত্রা সাহা বলেন, “মনোনয়ন পত্র বিলির মাঝপথে ছাত্রীদের মধ্যে গোলমাল বাঁধে। বহিরাগত কিছু লোকজনও কলেজে ঢুকে পড়ে।”
কর্মাস কলেজে ছাত্র-সংঘর্ষ। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
এসএফআইয়ের অভিযোগ, তৃণমূলের বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে তাদের ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করেছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে সওয়া ১টা নাগাদ ফের ফর্ম বিলি শুরু হয়। বেলা ২ টা পর্যন্ত ফর্ম বিলি করা হয়। শেষ পর্বে ফের গোলমাল বাঁধে। এসএফআই-এর ছাত্রীরা কলেজের বাইরে বার হতে গেলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্রী এবং বহিরাগত সমর্থকরা তাঁদের মারধর করতে তেড়ে যান। ভয়ে এসএফআইয়ের জনা ১৭ জন ছাত্রী কলেজে আশ্রয় নেন। কলেজের গেট এবং ভবনের গেট আটকে দেওয়া হয়। মারপিটে এসএফআইয়ের কলেজ ইউনিটের সম্পাদক পৃথা সরকার এবং আরও ২ জন জখম হন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি, তাঁদের মধ্যে রুবি মল্লিক-সহ আরও ২ জন জখম হয়েছেন। রুবির অভিযোগ, “আমাকে পেটে মারা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। আমাদের বেশ কিছু মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে দিয়েছেন এসএফআই-এর ছাত্রীরা।” কলেজের ছাত্র সংসদের ২৪ টি আসনের মধ্যে এসএফআই অধিকাংশ তুলতে পেরেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্রীদের অভিযোগ, তাদের অন্তত ৮ টি মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দিয়েছে এসএফআই-এর ছাত্রীরা। ওই কলেজে গত ৭ বছর ধরে ছাত্র সংসদ এসএফআই-এর দখলেই রয়েছে।
বেলা ৩ টা নাগাদ পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীদের ছাড়েন। কলেজ থেকে বার হওয়ার পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্রীরা তাড়া করলে পুলিশ তাদের একদিকে হঠিয়ে দেন। অন্য রাস্তা দিয়ে এসএফআইয়ের ছাত্রীরা বেরিয়ে গেলে পরে ঘুরপথে গিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের লোকজন তাদের ফের তাড়া করে বলে অভিযোগ। পৃথা সরকার বলেন, “আমরা ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ি। পরে সংগঠনের ছেলেরা বাইকে করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেন।”
মহিলা কলেজের গোলমালের রেশ কাটার আগেই ধুন্ধুমার কাণ্ড শুরু হয় শিলিগুড়ি কর্মাস কলেজে। সেখানে মনোনয়ন পত্র তোলার সময়ে ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপির মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও তৃণমূল সমর্থকরা কলেজের গেটে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। সেই সময়ে একজন ছাত্র পরিষদ নেতার হাত লাঠির আঘাতে ফেটে যায়। সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন জখম হয়েছেন। সেই সময়ে পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিএমসিপির কয়েকজন সমর্থককে আটক করে। তাঁদের গাড়িতে চাপিয়ে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে তৃণমূল সমর্থকরা গাড়ির সামনে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখায়। পরে অবশ্য সেই সমর্থকদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ছাত্র পরিষদের সমর্থক সৌরভ ভৌমিকের হাত ফেটে গিয়ে রক্তপাত হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি অমিত তালুকদারকেও পুলিশ নির্বিচারে লাঠি মেরেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকারের অভিযোগ, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এ দিন কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে পুলিশের সামনে গুণ্ডামি করল। পুলিশ দাঁড়িয়ে সেই গুন্ডামি দেখল। এর পরেও রাজ্যে গণতন্ত্র রয়েছে এটা বলা যাবে না।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কাউকে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হয়নি। ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা কলেজের গেটে মদ্যপ অবস্থায় ঢুকতে যায়। কলেজের কর্মীদেরও হেনস্থা করতে চায়। সে সময়ে আমাদের সমর্থকরা প্রতিবাদ করেছে মাত্র।” নির্ণয়ের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশের লাঠির আঘাতে তাদের সংগঠনেরও অন্তত ৫ জন সমর্থক জখম হয়েছেন। এ দিনই দক্ষিণ দিনাজপুর বুধবার দুপুরে হরিরামপুর আব্দুল গণি দেওয়ান কলেজে এসএফআই ও টিএমসিপির সংঘর্ষে ১ ছাত্র নেতা এবং এসএফআইয়ের ৩ জন জখম হয়েছেন। পুলিশ ২ জন এসএফআই সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। জেলাপুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দু-তরফের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে কলেজে বসানো হয়েছে। পুলিশ পিকেট রয়েছে।” কলেজ সূত্রের খবর, ২৯ জানুয়ারি হরিরামপুর কলেজে ভোট হবে। মনোনয়ন পত্র দেওয়া হবে শুক্রবার থেকে। এ দিন এসএফআইয়ের কর্মী তথা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলিউল ইসলাম মার্কশিট তুলতে যান। সেই সময়ে তাঁর কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চান টিএমসিপির কয়েকজন তিনি টিএমসিপির নেতা-কর্মীদের পরিচয়পত্র দেখাবেন না বলে জানালে গোলমাল বাঁধে। এর পরেই মারপিট শুরু হয়। আলিউলের মাথা ফেটে যায়।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপির জেলা সভাপতি অতনু রায়ের দাবি, “কলেজে বহিরাগতরা ঢুকে উত্তেজনার সৃষ্টি করলে ছাত্রছাত্রীরা ছোটাছুটি শুরু করে। ছুটতে গিয়ে দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে ওই এসএফআই সমর্থকের মাথা ফেটে যায়। মারধরের অভিযোগ মিথ্যা। এসএফআইয়ের হামলায় আমাদের ছাত্র নেতা জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.