লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে উপচে-পড়া ভিড় হাজির করার লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে সিপিএম। তার জন্য প্রতি জেলাকে চাঙ্গা করার বার্তা দেওয়া হচ্ছে আলিমুদ্দিন থেকে। সেই বার্তা দেওয়ার আসরের শেষ লগ্নেই ছন্দপতন ঘটল বুধবার।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর জবাবি ভাষণের মাঝপথেই মঞ্চ থেকে নেমে চলে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ কেন বামেদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ, সকালে রাজ্য কমিটির বৈঠকের শুরুতেই এক প্রস্ত সে সব ব্যাখ্যা করেন বিমানবাবু। সিপিএম সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় জবাবি ভাষণে সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করছিলেন রাজ্য সম্পাদক। ব্রিগেডে যোগ দিতে-আসা মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে কী ভাবে খেয়াল রাখতে হবে, পরামর্শ দিচ্ছিলেন সেই সব বিষয়েও। সেই ভাষণ কিছু দূর গড়ানোর পরেই চার তলার সভাকক্ষের পোডিয়াম থেকে নেমে সোজা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় নেমে যান বুদ্ধবাবু! দলের অন্দরে দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই আপাত-সাধারণ ঘটনা স্বভাবতই সেই জল্পনায় আরও ইন্ধন দিল!
দলের একাংশের বক্তব্য, বুদ্ধবাবু বা গৌতম দেবরা যখন চাঁছাছোলা ভঙ্গিতে তৃণমূলকে আক্রমণ করে কর্মী-সমর্থকদের জোরদার লড়াইয়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন, রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য প্রায়শই প্রত্যাশিত দাগ কাটতে ব্যর্থ হচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্দরেও এই নিয়ে খেদ রয়েছে। এ দিনের ঘটনাকে সেই চলতি সমীকরণের প্রেক্ষাপটেই ব্যাখ্যা করছে দলের একাংশ।
ব্রিগেড ভরানোর প্রস্তুতি এবং লোকসভা ভোটের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখা এ-ই ছিল এ দিনের রাজ্য কমিটির মুখ্য আলোচ্য। বিমানবাবু বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বারের ব্রিগেড বামফ্রন্টের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলের ব্রিগেড ৩০ জানুয়ারি। তার পরে ওই ময়দানেই নরেন্দ্র মোদী আসবেন ৫ ফেব্রুয়ারি। দুই সমাবেশের পরে বামেদের ব্রিগেডে আশানুরূপ ভিড় না-হলে লোকসভা ভোটের আগে সমর্থকদের মনোবলে ধাক্কা লাগতে পারে। সেই কথা খেয়াল রেখেই জেলার নেতাদের কাছে এ দিন বিমানবাবুর সাফ বার্তা ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতাকে ‘লালে লাল’ করে দিতে হবে! এই সূত্রেই এ দিন রাজ্য কমিটির অন্দরে ভূয়সী তারিফ কুড়িয়েছে গৌতমবাবুর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম।
লোকসভার প্রার্থী মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠিক-হওয়া যে রূপরেখা এ দিন রাজ্য কমিটিতে পেশ হয়েছে, তাতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে, বিতর্ক নেই, এমন মুখকে বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তরুণ মুখকে যথাসম্ভব সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। আবার এখনও শারীরিক ভাবে যথেষ্ট সক্রিয়, এমন অভিজ্ঞ প্রার্থীদের কয়েক জনকে ফের টিকিট দেওয়া হবে। লোকসভার প্রার্থীর জন্য যে মাপকাঠি তৈরি হচ্ছে, তাতে লক্ষ্মণ শেঠের মতো প্রাক্তন সাংসদদের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ঘটনাচক্রে, এ দিনই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন লক্ষ্মণবাবু।
|