কপ্টার-বাহনে বাঁচল সাগরে জখম বালিকা
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল সোমবার। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ‘এয়ার ট্যাক্সি’ হিসেবে কাজ শুরু করে দিল রাজ্য সরকারের ভাড়া করা হেলিকপ্টার। বুধবার গঙ্গাসাগরে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সাত বছরের এক বালিকাকে কলকাতায় উড়িয়ে এনে বাঁচিয়ে দিল সে। এ ভাবেই জরুরি পরিষেবায় নিজের ভূমিকার স্বাক্ষর রাখল ওই হেলিকপ্টার।
গুরুতর অসুস্থ কোনও রোগীর দ্রুত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টার কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, দু’দিন আগে তা নিয়ে কলকাতার প্রথম সারির হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সেখানে তিনি জানান, হেলিকপ্টারকে এখনই ‘এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, যাত্রী পরিবহণে ব্যবহৃত ভাড়ার কপ্টারে মরণাপন্ন রোগীর জন্য ভেন্টিলেশন-সহ চিকিৎসার প্রায় কোনও সুবিধাই দেওয়া যাবে না। তবে অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘এয়ার ট্যাক্সি’ হিসেবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যেতেই পারে। মন্ত্রীর এই ভাবনা প্রকাশের পরেই এর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এ দিন অনন্যা মণ্ডল নামে ওই আহত বালিকার প্রাণরক্ষার ঘটনা প্রমাণ করে দিল, মন্ত্রীর প্রস্তাব একেবারে বিফলে যাবে না। কী ঘটেছিল এ দিন?
হাসপাতালে অনন্যা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক শান্তনু বসু জানান, বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ গঙ্গাসাগরে কে-১ বাসস্ট্যান্ডের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সাত বছরের মেয়েটি। কোমরের নীচে গুরুতর চোট পায় সে। প্রচুর রক্তক্ষরণও হয়। ভাল চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত কলকাতায় আনার দরকার ছিল। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য একটি হেলিকপ্টার রাখা ছিল গঙ্গাসাগরে। ছোট্ট মেয়ের সঙ্গিন অবস্থা বুঝে জেলা প্রশাসন স্থানীয় এক চিকিৎসক ও অনন্যার বাড়ির লোকজনকে হেলিকপ্টারে তুলে দেয়। হেলিকপ্টার এসে থামে বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তড়িঘড়ি মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।
বিকেলে হাসপাতালের মূল ভবনের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, একটি ট্রলিতে শুয়ে আছে অনন্যা। দুর্ঘটনায় তার পায়ুদ্বার ও পায়ুনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। জ্ঞানও রয়েছে পুরোপুরি। বেশ কিছুটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় তাকে এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। ডান হাতে স্যালাইনের নল ঢোকানো ছিল। হাত নাড়তে কষ্ট হচ্ছিল ছোট্ট মেয়েটির। তার যৌনাঙ্গেও টিউব লাগানো হয়েছে। মাঝেমধ্যেই কঁকিয়ে উঠে সে বলছিল, “বাড়ি যাব। বাড়ি নিয়ে যাও আমাকে।” পাশে দাঁড়িয়ে মা টুম্পা মণ্ডল কেঁদে চলেছেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, মেয়ের প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা নেই। রাতে অনন্যাকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার এলাকার গুমকি গ্রামে বাড়ি অনন্যাদের। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। বাবা গোপাল মণ্ডল, মা টুম্পাদেবী এবং পরিবারের অন্য ১০ জনের সঙ্গে গত সোমবার সাগরমেলায় গিয়েছিল অনন্যা। টুম্পাদেবীর কথায়, “মেলা থেকে বেরিয়ে বুধবার বাস ধরার জন্য বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই একটা বাস হুড়মুড় করে গায়ের উপরে চলে এল। আমার মেয়েটা ছিটকে পড়ল রাস্তায়। খুব রক্ত বেরোচ্ছিল। তবে ওর জ্ঞান ছিল।” প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে অনন্যাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কপ্টারে কলকাতায়।
হেলিকপ্টার সংস্থার তরফে দেবব্রত ঘোষ বলেন, “কপ্টারে আহত বালিকা এবং ওর পরিবারের বাকিদের সঙ্গে ডাক্তার এবং এক জন মেডিক্যাল কর্মীকেও পাঠানো হয়েছিল। অনন্যাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণসংশয় এড়ানো গিয়েছে। এটা ভেবেই ভাল লাগছে।” হেলিকপ্টারের সৌজন্যে অনন্যার বেঁচে যাওয়ার ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে প্রয়োজনে আমরা এই পরিষেবা আরও বাড়াব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.