ভোটের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরঙ্কুশ আধিপত্য টিএমসিপির
নির্বাচনের আগেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত হয়ে গেল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের।
মনোনয়ন-পর্ব শেষে দেখা যাচ্ছে, নামমাত্র আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিরোধীরা। ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় আসার জন্য যে সংখ্যক আসন প্রয়োজন, তার থেকেও বেশি সংখ্যক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেতে চলেছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের মোট আসন সংখ্যা ১৪৫টি। সেখানে বিরোধী প্রার্থী রয়েছে মাত্র ২১টি আসনে। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীই দিতে পারেনি এসএফআই, ছাত্র পরিষদের মতো সংগঠন। যে ২১টি আসনে বিরোধী প্রার্থী রয়েছে, তার মধ্যে ১৭টি ডিএসও’র। বাকি ৪টি নির্দল। কেন এই পরিস্থিতি? বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সন্ত্রাসের জন্যই প্রার্থী দেওয়া যায়নি। ওই দাবি অবশ্য খারিজ করেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। অন্য দিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোথাও অশান্তি হয়নি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “কোনও গোলমাল হয়নি। সব কিছু সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।” ছাত্র সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে উপাচার্য জানান।
আগামী ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন রয়েছে। মনোনয়নপত্র তোলা এবং জমা দেওয়ার জন্য দু’টি দিন নির্দিষ্ট ছিল। ১৩ এবং ১৫ জানুয়ারি। এই দু’দিনে সব মিলিয়ে ১৭১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১৫০টিই টিএমসিপি’র। ৫টি আসনে শাসক দলের সংগঠন ২টি করে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, বাড়তি ৫টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে। অন্য দিকে, ডিএসও ১৭টি এবং ৪টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেন।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে এসএফআইয়ের ‘একাধিপত্য’ ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন ছিল মজবুত। বিধানসভা নির্বাচনের পর পরিস্থিতির বদল হয়। কমবেশি সর্বত্র প্রভাব বাড়ে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের। এক সময়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে এসএফআই। আর এখন পুরো অন্য পরিস্থিতি। সেই সময়ে যাঁরা এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করত, সেই টিএমসিপিই এখন নির্বাচনের আগে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করে ফেলছে।
কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে একটি আসনেও প্রার্থী দেওয়া গেল না? এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার দাবি, “সন্ত্রাসের জন্যই প্রার্থী দেওয়া যায়নি। যাঁদের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল, তাঁদের ভয় দেখানো হয়েছে। এমনকী, ছাত্রীদেরও শাসানো হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “টিএমসিপির নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। তাই জয় করার বদলে ছাত্র সংসদ দখল করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমরা এ বার প্রার্থী দিতে পারিনি। ৩ জন নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছি। ওই ৩ জন টিএমসিপির জোর-জুলুমের প্রতিবাদ করবেন।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুলের মন্তব্য, “শুধু শাসকের মুখ বদলেছে। বাকি সবকিছু একই রয়ে গেছে।” ডিএসও’র জেলা সভাপতি দীপক পাত্র বলেন, “টিএমসিপির সন্ত্রাসের জন্যই সব আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। এখন পেশি শক্তিই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করছে। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অসম্ভব।”
বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি’র মন্তব্য, “এ সব অপপ্রচার। বিরোধীরা যদি প্রার্থী খুঁজে না পায়, আমরা কী করব!” তাঁর কথায়, “বাম আমলে তো বিরোধীদের মনোনয়নই তুলতে দেওয়া হত না। নির্বাচনে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা। এখন সেই পরিস্থিতি নেই।” তবে টিএমসিপি’র জেলা সভাপতি মানছেন, “এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৫টি আসনের মধ্যে ১২৪টি আসনেই আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছি। ছাত্র সংসদ টিএমসিপিই দখল করবে।”
সবমিলিয়ে, ভোটের আগেই জয়ের মুকুট শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের মাথায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.