|
|
|
|
কোন্দলের আবহেই পূর্ণাঙ্গ পুরবোর্ড গঠন
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দলীয় কোন্দলের আবহেই পুরভোটের দেড় মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ পুরবোর্ড গঠন হল মেদিনীপুরে।
বুধবার দুপুরে উপপুরপ্রধান হিসেবে শপথ নেন জিতেন্দ্রনাথ দাস। অন্যদিকে, পুর-পারিষদ হিসেবে শপথ নেন অনিলচন্দ্র দলবেরা, শিপ্রা মণ্ডল এবং মৌ রায়। এই চার জনকেই শপথবাক্য পাঠ করান পুরপ্রধান প্রণব বসু। সদর শহরে পুর-পারিষদের তিনটি দফতর রয়েছে পূর্ত, জল এবং জঞ্জাল। এর মধ্যে পূর্ত দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন অনিলচন্দ্রবাবু, জল দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন মৌদেবী, জঞ্জাল দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন শিপ্রাদেবী। শপথের পর পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান এবং তিন পুর-পারিষদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। একে অন্যের সঙ্গে হাত মেলান। সৌজন্য বিনিময় করেন। তবে, এর মিনিট পনেরো আগে পুরসভার অন্দরে ছবিটা কিন্তু অন্য রকম ছিল। শিপ্রাদেবী এবং মৌদেবী এদিন শপথ নেবেন না বলে গোঁ ধরে বসেন। পুরপ্রধানকে তাঁরা জানিয়ে দেন, শুধুমাত্র উপপুরপ্রধানের শপথগ্রহণে উপস্থিত থাকতেই পুরসভায় এসেছেন তাঁরা, কোনও দফতরের দায়িত্ব নিতে পারবেন না। ওই দুই কাউন্সিলরই পুরসভা থেকে বেরিয়ে যেতে চান। শেষমেশ, পুরপ্রধান তাঁদের বোঝান, কে কোন দফতরের দায়িত্ব নেবেন, এই সিদ্ধান্ত কারও ব্যক্তিগত নয়, দলের। অনুগত কর্মী হিসেবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত।
দুই কাউন্সিলরের বক্তব্য ঠিক কী ছিল?
পুরসভা সূত্রে খবর, মৌদেবী প্রণববাবুকে জানান, তিনি কোনও দফতরের দায়িত্ব নেবেন না। কারণ, তিনি সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখতে চান। নিজে মহিলা তৃণমূলের শহর সভাপতির পদে রয়েছেন। ওই দায়িত্বই ঠিকঠাক ভাবে পালন করতে চান। অন্য দিকে, শিপ্রাদেবী পুরপ্রধানকে জানান, তিনি ছাড়াও দলের আরও দুই পুরনো কাউন্সিলর (শ্যামল ভকত, রাধারানি বেরা) রয়েছেন। হয় পুরনো কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। তা হলে তিনিও দায়িত্ব নেবেন। না-হয় নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। পুরনোদের মধ্যে একা তিনি কোনও দফতরের দায়িত্ব নেবেন না। |
মেদিনীপুর পুরবোডের্র সদস্যরা |
তৃণমূলের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে দুই কাউন্সিলর পুরপ্রধানকে যা জানান, তা নেহাতই বলার জন্য বলা। এঁদের ক্ষোভ অন্যত্র। ওই সূত্র জানিয়েছে, দলের অন্দরে শিপ্রাদেবী জানিয়েছিলেন, তিনি জঞ্জাল দফতরের দায়িত্ব নেবেন না। অন্য কোনও দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হোক। অন্য দিকে, একই বক্তব্য ছিল মৌদেবীর। তিনিও জল দফতরের দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। এই দুই কাউন্সিলরই মনে করেছিলেন, দল তাঁদের আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দায়িত্ব দেবে। তা না-দেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দেয়। যদিও এই দাবি মানতে চাননি ওই দুই কাউন্সিলর। প্রকাশ্যে তাঁদের বক্তব্য, “যা জানানোর দলকে জানিয়েছি। আর কিছু বলার নেই।”
গত ২২ নভেম্বর মেদিনীপুরে পুরসভা নির্বাচন হয়। দু’দিন পর ২৫ নভেম্বর ফলাফল বেরোয়। ২৫টি আসনের মধ্যে ১৩টি দখল করে তৃণমূল। ৬টি কংগ্রেস। বামজোট ৫টি এবং ১টি নির্দল। ১৬ ডিসেম্বর পুরপ্রধান নির্বাচন হয়। দ্বিতীয়বারের জন্য পুরপ্রধান নির্বাচিত হন প্রণব বসু। সাধারণত, পুরপ্রধান নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পুরবোর্ড গঠন করতে হয়। সেই হিসেবে বুধবারই এই মেয়াদ ফুরোয়। মেয়াদ ফুরনোর শেষ দিনেই পূর্ণাঙ্গ পুরবোর্ড গঠন হল মেদিনীপুরে।
এ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা চলায় তৃণমূলের অন্দরেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কে উপপুরপ্রধান হবেন, কারা পুর-পারিষদ হবেন, তা নিয়ে দড়ি টানাটানিতে কিছুতেই বোর্ড গঠনের কাজ চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। পছন্দের পদ পেতে একাংশ কাউন্সিলর নেতৃত্বের কাছে দরবার করেন। কারও পছন্দ ছিল পূর্ত দফতর। কারও জল। কারও বা জঞ্জাল। এই পরিস্থিতির জেরে নাম চূড়ান্ত করতে গিয়ে নেতৃত্বকে সমস্যায় পড়তে হয়। পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন খোদ রাজ্য নেতৃত্বও। শেষমেশ, মঙ্গলবার দলের এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই নতুন উপপুরপ্রধান এবং নতুন পুর-পারিষদদের নাম চূড়ান্ত হয়। পরে তা জানিয়ে দেওয়া হয় পুরপ্রধানকে। সেই মতো বুধবার চার কাউন্সিলরকে পুরসভায় উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে দেন প্রণববাবু। গোড়ায় ঠিক ছিল, বেলা এগারোটা নাগাদ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। শেষমেশ, বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ওই অনুষ্ঠান হয়।
পুরসভার পদ নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার কথা অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে বলেই শুনেছি। অসন্তোষের কোনও ব্যাপার নেই।” |
|
|
|
|
|