শ্মশানের ছাই সামলান, নির্দেশ পুরী পুরসভাকে
দীর্ঘ কাল ধরে পুরীর স্বর্গদ্বার শ্মশানের ছাই উড়ে এসে পড়ছে সমুদ্রতীরের সারি সারি খাবারের দোকানে। পুরী পুরসভা এত দিনেও সেই দূষণ রুখতে উদ্যোগী না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। চিতার ছাই যাতে আর খাবারে এসে না-পড়ে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বুধবার নির্দেশ দিয়েছে তারা। কী ভাবে খাবারে ছাই উড়ে এসে পড়া বন্ধ করা যায়, পুরী পুরসভাকেই তার উপায় খুঁজে বার করতে বলা হয়েছে।
পুরীর দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন কলকাতার পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর অভিযোগ, শ্মশানের ছাই সমুদ্রের হাওয়ায় যত্রতত্র উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই ছাই উড়ে গিয়ে পড়ছে পাশের অসংখ্য দোকানের খোলা খাবারেও। স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকেরা সেই খাবার খাচ্ছেন। সুভাষবাবু পরিবেশ আদালতে আর্জি জানান, এই অবস্থা থেকে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মুক্তি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক।
স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এই দূষণ বছরের পর বছর চলা সত্ত্বেও পুরী পুরসভা উদাসীন থাকায় ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালত এ দিন কঠোর ভাষায় তাদের সমালোচনা করেছে। আদালতের মন্তব্য, “আপনাদের (পুর-কর্তৃপক্ষ) অবস্থান দেখে আমরা বিস্মিত! সমস্যার সুরাহার জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে। আপনারা এই সামান্য একটা ব্যাপার সামলাতে না-পারায় আমরা বিস্মিত ও দুঃখিত।” ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের প্রশ্ন, পুরসভা এত দিন কিছু করেনি কেন? এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভার সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
পুরীর পূর্ব প্রান্তে আধ একরেরও বেশি এলাকা জুড়ে স্বর্গদ্বার শ্মশান। ওড়িশা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে প্রতি মাসে গড়ে ১২০০ থেকে ১৪০০ শব দাহ করা হয়। সমুদ্র আর জগন্নাথের টানে পুরীতে বছরভর লক্ষ লক্ষ পর্যটক সমাগম হয়। এবং তার একটা বড় অংশই বাংলার। স্বর্গদ্বার শ্মশানের দূষণ এবং সমুদ্রদূষণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে গত বছর জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে এর প্রতিবিধান চান সুভাষবাবু। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ অক্টোবর পরিবেশ আদালত পুরীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রথম ধাপ হিসেবে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। ওড়িশার মুখ্যসচিব তার চেয়ারম্যান। এ দিন পরিবেশ আদালতে পুরো বিষয়টিরই শুনানি ছিল।
পরিবেশ কর্মীদের বক্তব্য, খাবারের দোকানগুলিকে স্বর্গদ্বার থেকে সরিয়ে দিলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। পুরসভার দাবি, স্বর্গদ্বারে পোড়ানো মৃতদেহের ছাই খাবারে মেশার ঝুঁকি নেই। কারণ, খাবারের দোকানগুলি শ্মশান থেকে ১০০-১৫০ মিটার দূরে। তবে পুরী পুরসভার আইনজীবী এ দিন পরিবেশ আদালতে জানান, দূষণ রোখার জন্য কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
শ্মশান-দূষণের সঙ্গে সঙ্গে পুরীর সমুদ্রতটের তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়া নিকাশি ও বর্জ্য নালার বিষয়টিও এ দিন ওঠে আদালতে। এই ব্যাপারে সবিস্তার তথ্য, পূর্ণাঙ্গ নকশা ও ছবি-সহ নতুন হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুরী পুরসভাকে। ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরসভাকে সেগুলি জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দিতে হবে। ৫ ডিসেম্বরের শুনানিতে আদালত এই বিষয়ে পুরী পুরসভাকে হলফনামা জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু এ দিন পুরসভার পেশ করা হলফনামায় পরিবেশ আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই পুরসভার কাছে আরও বিস্তারিত ভাবে নতুন রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এখন ওই নিকাশি ও বর্জ্য নালার কী অবস্থা, সরেজমিনে এলাকা ঘুরে আবেদনকারী সুভাষবাবুকেও সেই বিষয়ে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পুরী পুরসভা যাতে তাঁকে সমস্ত রকম সাহায্য করে, তারও নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.