|
|
|
|
বিদেশিনি ধর্ষিতা, দায় এড়ানোর দায়ে আপ-ও |
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি
১৫ জানুয়ারি |
এত দিন তিনি তোপ দেগেছেন। এ বার তাঁর শাসনকালে দিল্লিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই বিদেশিনি ধর্ষিতা হওয়ার পর নিজেই তোপের মুখে পড়ে গেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ঘটনাচক্রে, যাঁর দলের উত্থানের অন্যতম সহায়ক ছিল নির্ভয়া-কাণ্ড পরবর্তী গণবিক্ষোভ। আর আজ দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টির গায়েও লাগল দায় এড়ানোর কলঙ্ক। যে অভিযোগে আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলকে এত দিন দুষে এসেছেন কেজরিওয়ালরা।
সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীতে শিশুকন্যাকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে ধর্ষিতা হয়েছিলেন এক পোলিশ মহিলা। গত কাল নয়াদিল্লি স্টেশনের অদূরে গণধর্ষণের শিকার হন ডেনমার্কের বাসিন্দা ৫১ বছরের এক মহিলা। কনট প্লেসের কাছে একটি সংগ্রহশালা দেখে ফেরার পথে হোটেলের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। বিকেল ৪টে নাগাদ স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি লোকের কাছে রাস্তা জানতে চাইলে তারা তাঁকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছুরি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। বেধড়ক মারধরের পর টাকাপয়সা, আইপ্যাড সমেত সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় তারা। কোনও মতে অটো ধরে পাহাড়গঞ্জে নিজের হোটেলে ফিরে ঘটনার কথা জানান তিনি। হোটেল-মালিক পুলিশে খবর দেন। খবর যায় ডেনমার্কের দূতাবাসেও।
দু’জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে কিছু জিনিসপত্র। কিন্তু এ সবের মধ্যেই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছেন আপ নেতা কুমার বিশ্বাস। সম্প্রতি যিনি লোকসভা ভোটে অমেঠিতে রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। |
|
ঘটনাস্থলে তদন্তকারীরা। বুধবার দিল্লিতে। ছবি: এপি। |
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কুমার বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন, রাজ্যের নয়। তারাই ঠিকমতো কাজ করছে না।”
নির্ভয়া কাণ্ডের পর আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জন্য ঠিক একই যুক্তিতে দিল্লি পুলিশকে দুষেছিলেন দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। কেজরিওয়াল ও তাঁর সেনানীরা সেই সময়ে শীলার মুণ্ডপাত করেছিলেন। কাকতালীয় ভাবে সেই মন্তব্যই হুবহু ফিরে এল কুমারের গলায়।
ফলে প্রবল আতান্তরে আপ তথা কেজরিওয়াল। প্রথমে জনতা দরবার ফ্লপ। তার পর আইনমন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক। আজ আবার দুই নেতা বিদ্রোহী হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী যদিও পরিস্থিতি মেরামতের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। তড়িঘড়ি লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। পরে কেজরিওয়াল বলেন, “দিল্লিতে কেন এত বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চাইব। আরও বেশি সংখ্যায় ফাস্ট ট্র্যাক আদালত তৈরির জন্য ভারতের প্রধান বিচারপতিকে আর্জি জানাব।”
কেজরিওয়াল জানান, ধর্ষণের ঘটনাগুলি কোনও বিশেষ এলাকায় ঘটছে কি না, কারা তাতে জড়িত, প্রতিটি বিষয় পুলিশকে খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। স্বভাবতই বিরোধীরা এ সব যুক্তিতে কান দেননি। দিল্লিতে আপ-এর সমর্থক দল কংগ্রেসের তরফেও বলা হয়েছে, “মহিলা যে হেতু ডেনমার্কের বাসিন্দা, তাঁর ভোট তো পাবেন না কেজরিওয়ালরা। তাই বিষয়টা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।” এমনকী জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান মমতা শর্মাও একই অভিযোগে কেজরিওয়ালকে বিঁধেছেন। ভারতে এসে বিদেশিনিরা যে ভাবে প্রায়শই হেনস্থা হচ্ছেন, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ডেনমার্কের নির্যাতিতা ডাক্তারি পরীক্ষায় রাজি হননি। বুধবার সকালেই কোপেনহাগেনের উড়ান ধরেছেন তিনি। তবে তার আগে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সপ্তাহখানেক আগে ভারতে এসেছিলেন তিনি। তাজমহল দেখে আসেন দিল্লিতে। পুলিশের বক্তব্য, তারা বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। ধৃতরা সকলেই ভবঘুরে এবং কয়েক জন মাদকাসক্ত। গত কালের ঘটনায় অপরাধীরা খুব শীঘ্রই ধরা পড়বে বলে পুলিশ আশাবাদী। |
|
|
|
|
|