দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিয়ে যাবতীয় টানাপোড়েনের পর অবশেষে ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করল। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্ন ভোজের টেবিলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করলেন মার্কিন সহ বিদেশসচিব উইলিয়াম জে বার্নস এবং নবনিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এস জয়শঙ্কর। প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, পরমাণু চুক্তি, অর্থনীতি, বাণিজ্যিক লেনদেন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃ্দ্ধির কথা বললেন তাঁরা।
ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে ওয়াশিংটন থেকে গ্রেফতার হন ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ে। দেবযানীর গ্রেফতারিতে শুরু হয় ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক চাপানউতোর। গ্রেফতারির জবাবে ভারতে মার্কিন কূটনীতিকদের সুযোগসুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ওবামা প্রশাসন দেবযানীকে ভারতে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যার জেরে মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত। গত সপ্তাহেই দেশে ফিরে গিয়েছেন দেবযানী। দেবযানী ফিরে যাওয়ার পর এই প্রথম বৈঠকে বসল দু’পক্ষ।
এরই মধ্যে বিদেশি কূটনীতিকদের সব পরিচারক-পরিচারিকার আলাদা নথিবদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক ঘোষণা করল ওবামা প্রশাসন। দেবযানী কাণ্ডের কোনও রকম উল্লেখ না করেই হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আমেরিকায় পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই এ বার থেকে কূটনীতিকদের পরিচারক-পরিচারিকাদের নথিবদ্ধকরণ করতে হবে।
গত কালই মুম্বই পৌঁছেছেন দেবযানী। আগামী কয়েক দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁদের ভারসোভার বাড়িতে থাকবেন তিনি। এ দিন দেবযানীর বাবা, প্রাক্তন আইএএস অফিসার, উত্তম খোবরাগাড়ে জানিয়েছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি লড়তে ইচ্ছুক। তবে কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাননি তিনি।
দেবযানীর দুই সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রশ্নে তিনি জানান, এখানকার স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থার করে আগামী মাসেই ফিরিয়ে আনা হবে তাদের।
এ দিকে ফের নতুন করে পরিচারিকা নিগ্রহের অভিযোগে জড়িয়ে পড়লেন দেবযানী। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ জমা পড়েছিল তাতে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটনের বাড়িতে বাচ্চাদের দেখাশোনা ও বাড়ির কাজের জন্য যে পরিচারিকা নিয়োগ করেছিলেন তিনি, তাঁকে সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টারও বেশি সময় খাটানো হত। ২০১২ সাল থেকে দেবযানীর বাড়িতে কাজ করছেন ওই পরিচারিকা। ছিল না সাপ্তাহিক কোনও ছুটির দিন। অসুস্থ হলেও মিলত না ছুটি। চিকিৎসার খরচের ভয়ে পরিচারিকাকে সর্বদা সুস্থ থাকতে বলতেন দেবযানী। মাসের শেষে পরিচারিকাকে বেতন বাবদ দিতেন মাত্র ৫৭৩ ডলার।
ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক বৈঠকের পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দেবযানীর বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগের একটি প্রতিলিপি প্রকাশ্যে আনল ওবামা প্রশাসন। এমতাবস্থায় মঙ্গলবারের ভারত-মার্কিন বৈঠক আদৌ কতটা ফলপ্রসূ তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। |