সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন, অথচ সচরাচর কোনও সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন না তিনি। লিখিত বিবৃতি পাঠ করে উঠে যান। নির্বাচনের পরে নয় নয় করে ১০ দিন কেটে যাওয়ার পরে প্রথম বার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও বিবৃতি পড়ে উঠে যাচ্ছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সেই সময়েই উড়ে এল সেই অমোঘ প্রশ্ন নির্বাচন বয়কট করে কি দু’কূলই হারালেন না আপনারা?
কিছু ক্ষণের নীরবতা। তার পরে আর জবাব না-দিয়ে পারলেন না নেত্রী। বললেন, “আমরা কোনও কূল হারাইনি, কূল হারিয়েছে ওরা। সরকার। মানুষ ওদের কূলহারা করবে!” এই একটি বার সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির বিএনপি নেতারা প্রথা ভেঙে তুমুল হাততালি দিয়ে উঠলেও, তাঁদের মুখের ছবিতেই লেখা ছিল সেই প্রশ্নের জবাব রাশি রাশি হতাশা।
মৌলবাদী ও স্বাধীনতা-বিরোধী মতাদর্শের কারণে আদালতের নির্দেশে রেজিস্ট্রেশন খোয়ানো জামাতে ইসলামির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কোনও প্রসঙ্গ এ দিন খালেদার লিখিত বিবৃতিতে নেই। বরং নির্বাচনের পরে জামাতের তাণ্ডবে সীমান্ত এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হওয়ার ঘটনাগুলিকেও ‘শাসক দলের দুর্বৃত্তদের কাজ’ বলে আড়াল করেছেন খালেদা জিয়া। দেশজুড়ে জামাতের খুন-জখমের দায়ও ‘সরকারের এজেন্টদের’ ওপরেই চাপিয়েছেন জোট-নেত্রী। খালেদার দাবি, “নির্বাচনের নামে তামাশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ৫ জানুয়ারিই অন্তত ২২ জন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। (বিএনপি-জামাত জোটের) আন্দোলনে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকারি এজেন্টদের পরিকল্পিত নাশকতায় আরও অনেক নিরপরাধ মানুষ জীবন দিয়েছেন।” |
সাংবাদিক বৈঠকে খালেদা। ছবি: রয়টার্স। |
খালেদা এ দিন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘কারসাজি ও প্রহসনের নির্বাচন’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “এই দিন আমাদের দেশের গণতন্ত্র আরও এক বার নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন মৃত।” তিনি বলেন, সারা দেশে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েছে কি না সন্দেহ, কিন্তু ‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণা করানো হয়েছে।’ বিএনপি নেত্রী বলেন, তাঁরা যে এই নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন, এই ঘোষণাই প্রমাণ করে তা সঠিক ছিল।
আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ দূর করে দেশে ফের নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেত্রী। সেই নির্বাচনের ইস্তাহারে কী থাকবে, তা-ও তিনি এ দিন একের পরে এক জানিয়ে দেন। খালেদা দাবি করেন, “বর্তমান সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন। দেশ পরিচালনার ব্যাপারে সরকারের পেছনে জনগণের অনুমোদন নেই।... এ সরকার বৈধ সরকার নয়। এমন একটি সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া খুবই বিপজ্জনক।”
নির্বাচনের আগে-পরে চালিয়ে যাওয়া হরতাল-অবরোধ আন্দোলনকে ‘জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ বলে অভিহিত করে তা সফল বলে দাবি করেন বিএনপি-জামাত জোটের নেত্রী। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের ফলেই অধিকাংশ মানুষ ভোটের লাইনে না-দাঁড়িয়ে সরকারের ‘প্রহসনের’ প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলেও ‘জালিয়াতি করে’ আওয়ামি লিগ ক্ষমতা দখল করে আছে। এ দিন ‘গণতন্ত্র ফেরানোর’ নতুন আন্দোলন ঘোষণা করেছেন খালেদা। ২০ জানুয়ারি কর্মীদের দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকায় সোহরাবর্দি উদ্যানে কেন্দ্রীয় জনসভায় বক্তৃতা দেবেন তিনি নিজে। এ ছাড়া ২৯ তারিখে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি-জামাত।
লক্ষ্যনীয় হল, নতুন কর্মসূচিতে হরতাল-অবরোধ রাখেননি খালেদা। এর একটা কারণ যদি পশ্চিমী শক্তিকে বার্তা দেওয়া হয়, অপরটি অবশ্যই সাড়া পাওয়া নিয়ে সংশয়।
নির্বাচনের পরে খালেদার জোট হরতাল ডাকলেও বাংলাদেশের জনজীবন স্বাভাবিকই ছিল। |