আবজর্না সংগ্রহে টাকা, বিতর্কে মেমারি পুরসভা
বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে চেয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে তৃণমূল পরিচালিত মেমারি পুরসভা। শুধু তাই নয়, জেলার অন্যান্য পুরসভার চেয়ে মিউটেশন ও ভবন সংস্কার করও মেমারি পুরসভায় অনেকটাই বেশী বলে অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর নীতি অনুযায়ী এ রাজ্যে তৃণমূল পরিচালিত কোনও পুরসভায় জলকর নেয় না। বর্ধমান বা অন্যান্য পুরসভা আবর্জনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও বাসিন্দাদের কাছ থেকে কর আদায় করে না। সে ক্ষেত্রে মেমারি পুরসভার বাড়ি পিছু প্রতি মাসে ১৫ টাকা আদায় করা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। দলের জেলা কমিটির সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “কেন এ রকম হল তা খোঁজ নিয়ে দেখব। আমাদের দলের নীতি হল, ন্যূনতম পরিষেবার জন্য বাসিন্দাদের উপর বাড়তি বোঝা না চাপানো।” তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান কিংবা কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া পুরসভাও বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য কোনও কর আদায় করে না।
বাড়ি বাড়ি ঘুরছে এমন গাড়িই।—নিজস্ব চিত্র।
আবজর্না সংগ্রহের জন্য কর ছাড়াও মেমারি পুরসভা মিউটেশনের জন্যও বেশি টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ। এমনকী ভবন সংস্কারের অনুমোদন দেওয়ার জন্যও জেলার অন্য পুরসভার তুলনায় বেশি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ। মেমারির প্রাক্তন পুরপ্রধান বিশ্বনাথ বিষয়ীর অভিযোগ, “এ ব্যাপারে আমি নিজেও ভুক্তভোগী। আমাদের সময় ভবন সংস্কার করার ফি ছিল আড়াইশো টাকা। সেটাই এখন নেওয়া হয় ৩২০০ টাকা। বুঝুন, এক ধাক্কায় কতটা বাড়ানো হয়েছে।” মিউটেশন ফি বেশি নেওয়া নিয়েও অভিযোগ রয়েছে সিপিএমের। সিপিএমের মেমারি ১ মধ্য লোকাল কমিটির সম্পাদক সনৎ সিংহর দাবি, “যার কাছে যেমন পারছে, তেমনি মিউটেশন ফি আদায় করছে। কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করছে না।” তবে জেলার অন্য পুরসভার ছবিটা একেবারেই আলাদা। তৃণমূল পরিচালিত জেলার সদর বর্ধমান পুরসভাতেও বাম আমলের থেকে মিউটেশন ফি কম নেওয়া হচ্ছে। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের দাবি, “আমরা বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য কোনও টাকা নিই না, মিউটেশন ফিও কমিয়ে দিয়েছি।” কালনা পুরসভাও তৃণমূলের দখলে। এখানেও মিউটেশন ফি নির্দিষ্ট। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, সম্পত্তি মূল্য যত টাকারই হোক না কেন, মিউটেশন ফি দিতে হয় মাত্র ২০০ টাকা। তবে এর সঙ্গে পুরসভা উন্নয়ন খাতে কিছু টাকা আদায় করে।
তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেমারির পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী বলেন, “এটি পুরসভার নিজস্ব বিষয়। আমরা সরকারি নিয়ম মেনেই মিউটেশন ফি বা ভবন সংস্কারের ফি নিয়ে থাকি। সম্পত্তি মূল্যের উপর স্তর নির্ধারণ করা রয়েছে, সেই মতো মিউটেশন ফি নেওয়া হয়।”
কয়েক মাস আগেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে মেমারিতে। এর জন্য পুরসভাকে প্রতি মাসে ১৫ টাকা করে দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বাসিন্দারা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারিতে খাতায় কলমে প্রায় ১৫ হাজার বাড়ি আছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বাড়ি পুরসভার সঙ্গে চুক্তি করেছে। আবর্জনা নেওয়ার জন্য ৭০ জন কর্মীকেও নিয়োগ করেছে পুরসভা। তারাই সাতসকালে বাঁশি বাজিয়ে বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভাগুলি। ওই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বাড়িতে লাল ও সবুজ রঙের দুটি বালতি সরবারহ করবে পুরসভা। একটি বালতিতে থাকবে চিকিৎসা বর্জ্য, অন্যটিতে থাকবে সাধারণ বর্জ্য। তবে মেমারিতে ওসবের বালাই নেই। পুরবাসীদের অভিযোগ, পুরসভা থেকে কোনও বালতি দেওয়া হয়নি। তার উপর আবর্জনা সংগ্রহের নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
পুরপ্রধানের যুক্তি, “টাকা নেওয়ার জন্য পুরবাসীরা রাস্তার ভ্যাটে আবর্জনা ফেলবেন না। ফলে সমস্তটা একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসবে। রাস্তায় আবর্জনা না ফেলার অভ্যেস তৈরি হলেই আমরা বাড়ি বাড়ি বালতি সরবরাহ করার উদ্যোগ করব।” তবে পুরবাসীরা টাকা না দিলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.