দীর্ঘ টানাপোড়েন পেরিয়ে আসার পরেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে গেল কুলটি জলপ্রকল্প।
২০০৬ সালে অনুমোদিত এই প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে কুলটিতে জলের সমস্যা মিটবে বলে আশা করেছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু আইনি জটে কাজ আটকে ছিল দীর্ঘদিন। পরে জট কাটলেও কাজ বিশেষ এগোয়নি বলে নানা পক্ষের অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য আশ্বাস, “কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে আমরা জানিয়েছি, এই প্রকল্পের পরিবর্তে আমরা নতুন একটি প্রকল্প তৈরি করব।”
কুলটি পুর এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২০০৬ সালের মাঝামাঝি এই জলপ্রকল্পের অনুমোদন দেয়। জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) অধীনে ১৩৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ২০১১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য ‘ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট’ (ডিপিআর) তৈরি করে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে সেটির অনুমোদনও করান এডিডিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রকল্প কে তৈরি করবে, তা নিয়ে বিবাদ বাধে তৎকালীন বাম পরিচালিত এডিডিএ-র বোর্ডের সঙ্গে তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুরসভার। এডিডিএ দাবি করে, প্রকল্প তৈরি করবে তারা। পুর কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, এই কাজ করবেন তারা। এই বিবাদ প্রথমে হাইকোর্ট, পরে সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। বন্ধ থেকে যায় প্রকল্পের কাজ।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে এডিডিএ-র বোর্ডেও হাতবদল হয়। সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর জায়গায় এডিডিএ-র চেয়ারম্যানের পদে আসেন আসানসোলের সিপিএম বিধায়ক তথা মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই মামলার আপোস-মীমাংসা হয়। জলপ্রকল্প গড়ার কাজ হাতে নেয় এডিডিএ। তার পরে দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কিছু পাইপ কেনা ছাড়া আর কোনও কাজ এগোয়নি বলে জানা যায়। অবশেষে, প্রকল্পটিই বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। |
|
কুলটি পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আদালতের বাইরে মিটিয়ে
কাজ শুরুর আবেদন করেছিলাম। ওঁরা শোনেননি।
বংশগোপাল চৌধুরী
আসানসোলের সিপিএম সাংসদ
|
|
|
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে জানিয়েছি, এই প্রকল্পের
পরিবর্তে আমরা নতুন একটি প্রকল্প করব।
ফিরহাদ হাকিম
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয় মন্ত্রী |
|
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানান, এই প্রকল্পের বদলে অন্য একটি জলপ্রকল্প গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরাই। কিন্তু কেন এই নতুন প্রস্তাব দেওয়া হল, সে প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি সাত বছর আগে অনুমোদন করা হয়েছিল। তখন যে ভাবে প্রকল্প তৈরির কথা বলা হয়েছিল, অনুমোদিত অর্থে এখন সে ভাবে প্রকল্পটি করা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, “সাত বছরে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবে প্রকল্পের খরচও বাড়বে। তাই আমরা ওই টাকায় প্রকল্পটি তৈরি করতে চাইছি না।” তাঁর দাবি, তাঁরা কুলটির জন্য নতুন করে একটি ১০০ কোটি টাকার জলপ্রকল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, “একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে আমরা ডিপিআর বানিয়েছি। সেটি নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠিয়ে অনুমোদন আসার পরে কাজে হাত দেওয়া হবে।”
তবে বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হলে তা বাতিল হয়ে যাওয়া ১৩৩ কোটি টাকার জলপ্রকল্পের মতোই কুলটির ৩৫টি ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে সময়ে ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছিল, এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা সাংসদ বংশগোপালবাবু বলেন, “সাত বছর আগের ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পের উপযুক্ত পরিবর্ত কী করে এখনকার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প হবে, বুঝতে পারছি না।” এই নতুন প্রকল্প কবে অনুমোদন পাবে, তা-ও পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেননি।
বংশগোপালবাবুর দাবি, “আমি অনেক বার কুলটি পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আদালতের বাইরে মিটিয়ে কাজ শুরুর আবেদন করেছিলাম। ওঁরা শোনেননি।” ওই প্রকল্প নিয়ে এডিডিএ-র সঙ্গে বিবাদের জেরে কুলটি পুরসভার তরফে আদালতে মামলা করেছিলেন উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়। তিনি বলেন, “কথা হল, আমাদের প্রকল্প তো আমরাই তৈরি করব। মাঝখানে এডিডিএ দাদাগিরি কেন করবে।” বাচ্চুবাবুর পাল্টা দাবি, এডিডিএ তখন অনমনীয় মনোভাব দেখানোর জন্যই প্রকল্পটি সমস্যায় পড়েছে। শেষ পর্যন্ত সেটি ফেরতই চলে গেল।
তরজা চলছেই। নির্জলা দশা কবে ঘুচবে, অপেক্ষায় পুরবাসী।
|