কী বলছে ইয়াকুবু? ওর বয়স এখনও ৩৫! বলতে বলতে কোচি স্টেডিয়ামের গেটের সামনের সিঁড়িতে হেসে গড়িয়ে পড়েন ওকোলি ওডাফা। তারপর মজার মন্তব্য, “আমার বয়সটা আমি ভুলে গেছি কিন্তু।”
অনেকটাই ফিট হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত মোহন-অধিনায়ক হাসতেই পারেন ইউসিফ ইয়াকুবুকে নিয়ে। কিন্তু করিম ব্রিগেড হাসছে না! বরং অবসর নেওয়ার বয়সে এসেও ঘানাইয়ান স্ট্রাইকারের দুর্ধর্ষ ফর্ম দেখে স্যালুট জানাচ্ছে শঙ্কিত বাগান।
ইয়াকুবু নিজেও কি সেটা জানেন? “কলকাতার দলগুলোকে সামনে পেলে কেমন যেন একটা বাড়তি মোটিভেশন চলে আসে। গোল করার জন্য পা নিশপিশ করে। কালও গোল করব। জিতবও। আর ওডাফা? ওকে নিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করার কোনও মানে হয় না,” টিম বাস থেকে নেমে অনুশীলনে যাওয়ার পথে বলে দেন মুম্বই এফ সি-র স্ট্রাইকার। ওএনজিসি থেকে আর এক আফ্রিকান হেনরি এ দিনই যোগ দিয়েছেন তাঁর সঙ্গী হতে। তাতে যেন বিপক্ষ গোলবক্সের আশেপাশে ক্ষুধার্ত চিতার মতো ঘুরতে থাকা ইয়াকুবু বাড়তি উদ্যম পেয়ে গিয়েছেন। বাগানকে মাঠে রেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ‘ভি’ দেখিয়ে আগাম ছবির পোজও দিয়ে রাখলেন। |
কিন্তু ইয়াকুবু বনাম ওডাফা ধুন্ধুমার যুদ্ধ কি শুরু থেকেই হবে আজ? সম্ভাবনা নব্বই ভাগ। করিম ‘আর একবার পরীক্ষা করে দেখা দরকার’ বলে গেলেও ফুর্তিতে থাকা ওডাফাকে দেখে মনে হল, তিনি নামার জন্য একশো ভাগ প্রস্তুত। মোহন-কোচও দলের দু’কোটির ‘হিরে’-কে নানা ভাবে পরীক্ষা করলেন। খেলালেন সারাক্ষণ। স্ট্র্যাটেজি তৈরি করলেন ওডাফাকে সামনে রেখেই। মোহন-কোচ বুঝে গিয়েছেন, ইয়াকুবু-ক্লাইম্যাক্সদের বধ না করতে পারলে ফেড কাপের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে পারে, এ বারও। কলকাতা ডার্বি জিতলেও ফের ফিরে আসতে পারে দুর্দিন!
ওডাফা হয়তো নামবেন। চার বিদেশিকেও করিম হয়তো পেয়ে যাচ্ছেন বহু দিন পর। কিন্তু তাঁর মাঝমাঠের কী হবে? ক্লাবকর্তারা অনেক চেষ্টা করেও ডেনসন দেবদাস আর কিংশুক দেবনাথকে ছাড়িয়ে আনতে পারেননি অফিস থেকে। দু’জনেই ফিরে গেলেন মঙ্গলবার বিকেলে। কিংশুকের বদলি হিসাবে আইবর খেললেও ডেনসনের জায়গায় ডিফেন্সিভ মিডিও হিসাবে কাকে খেলাবেন তা নিয়ে দ্বিধায় করিম। জাকিরকে সেখানে খেলিয়ে পঙ্কজ মৌলাকে বাঁ দিকে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন তিনি। “রাতটা স্ট্র্যাটেজি তৈরির সেরা সময়,” বলে দেন মরক্কান।
করিমই সম্ভবত দেশের একমাত্র কোচ যিনি সব টিমের পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজ রাখেন। বিভিন্ন দলের ফুটবলারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার পাশাপাশি খোঁজ নিয়ে নেন সেখানকার পরিস্থিতি কী? তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি বিভিন্ন সময়। কিন্তু চতুর এবং পেশাদার করিমের তাতে কোনও হেলদোল নেই।
মোহন-কোচের ‘অ্যান্টেনায়’ তাই ধরা পড়ে গিয়েছে মুম্বই এফ সি-র শক্তিশালী মাঝমাঠ। যেখানে খেলেন ভারতীয় ফুটবলের দুই সেরা অভিজ্ঞ ক্লাইম্যাক্স লরেন্স আর এন প্রদীপ। যাঁদের বয়স ইয়াকুবুর চেয়ে একটু কম! আর আফগানিস্তানের হারাস আতাফি? সাফ কাপের ফাইনালে উইম কোভারম্যান্সের ভারতকে হারানোর জন্য যিনি প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। আকর্ষণীয় চেহারার সেই হারাসকে অবশ্য ইয়াকুবুর মতোই গুরুত্ব দিচ্ছেন করিম! “খুব ভাল পাসার। অ্যাটাকিং মিডিও হিসাবে গোলও করছে।” ডার্বি ম্যাচের নায়ক কাতসুমির সঙ্গে তাই হারাসের লড়াইটা জমবে। ওডাফা-ইয়াকুবুর ‘মানসিক যুদ্ধে’-র সঙ্গে যার তুলনা চলতেই পারে। |
করিম বেঞ্চারিফার মতো স্ট্র্যাটেজিতে তত পারদর্শী নন খালিদ জামিল। কিন্তু খুব ঠান্ডা মাথার। কোনও হাঁকডাক নেই। মিডিয়ায় লোকজনদের ফোন করা দূরে থাক। চেনা ফোনও ধরেন না। এ দিন সচিন তেন্ডুলকর স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ওডাফা-কাতসুমিদের অনুশীলন মন দিয়ে দেখছিলেন আর এক মুম্বাইকর খালিদ। “মোহনবাগান অনেক শক্তিশালী টিম। কিন্তু আমাদেরও তো জিততে হবে। দেখি চেষ্টা করে। প্রথম ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” বলে হেসে ফেলেন মুম্বই কোচ। হাসিতে লেগে থাকে কিছুটা উন্নাসিকতা। আত্মবিশ্বাসও।
ইয়াকুবুর পিছনে ইচেকে লাগাবেন ঠিক করে ফেলেছেন করিম। আর আফগান মিডিও হারাসের পিছনে জোনাল মার্কিং। তাতে কতটা থামানো যাবে খালিদের টিমকে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। লাল-কার্ড দেখা অভ্যাস করে ফেলা ইচে কিন্তু হুঙ্কার ছেড়ে দিয়েছেন। “ইয়াকুবু বা রোনাল্ডো যেই আসুক আমি আটকে দেব। কে বিপক্ষে আছে তা নিয়ে ভাবিও না,” কথা শুনে মনে হল বহু বছর বিশ্বকাপ খেলার পর কলকাতায় এসেছেন। একটা ডার্বি জেতার পর এত আত্মবিশ্বাস!
ইচের মতো ‘দুঃসাহসী’ কথাবার্তা না বললেও বাগান টিমকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। হয়তো ডার্বি জেতার রেশ। কোচি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছে সব টিমই। কিন্তু মূল মাঠে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ দিন সালগাওকর, লাজং এফ সি মাঠে ঢুকে পড়ায় তাদের বের করে দেওয়া হয়। করিম ঢুকব, ঢুকব করেও ঢোকেননি। ফলে বোঝা যায়নি, ডার্বি ম্যাচের মতো প্রতি আক্রমণকে করিম অস্ত্র করছেন কী না?
তবে মোহন-কোচ যে ডেনসনকে হারিয়েও নতুন অঙ্ক কষছেন তা তার কথা শুনলেই বোঝা যায়। “সমস্যা আছে। কিন্তু আমরা ম্যাচ জিততে এসেছি এখানে। সেটা করার জন্য ছেলেরা তৈরি।”
করিমের সাংবাদিক সম্মেলনের সময় ইয়াকুবু-হারাসরা অবশ্য হোটেলে গিয়ে বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
|