|
|
ভারত সেরার লড়াইয়ে নামার আগে করিম-কোলাসোর মেজাজ যে রকম। |
|
“চার টিমের গ্রুপ থেকে একটা দল সেমিফাইনালে যাবে, এই ফরম্যাটটাই ভয়ঙ্কর। এখানে প্রথম ম্যাচের গুরুত্ব প্রচণ্ড। জিততেই হয়। দেখছেন, যা ঝামেলা সব আমার টিমে....অন্যরা..” দুপুরে যখন বাগান কোচ কপালে চিন্তার বলিরেখা ফুটিয়ে এসে এ সব বলছেন তখন একশো নব্বই কিলোমিটার দূরে কেরলের অন্য প্রান্ত মঞ্জেরিতে হাজির আর্মান্দো কোলাসো, পুরো লাল-হলুদ ব্রিগেড নিয়ে। চিডি-মেগাদের বিশ্রামে পাঠিয়ে নিজেও শুতে গেলেন ঘরে। কলকাতা লিগ জয়ের পর এ বার গোয়ান কোচের মিশন, ফেড কাপ! শিলিগুড়িতে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের জেতা খেতাব ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ তাঁর সামনে। “কলকাতা লিগ এখন অতীত। আমি জানি আমাদের খেলতে হবে গ্রুপ অফ ডেথ-এ। আর এখান থেকে সেমিফাইনাল যাওয়াটাই তো চ্যালেঞ্জ। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে বরাবরই ভালবাসি,” শুনে কে বলবে কলকাতা ডার্বিতে তাঁর না-থাকা নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঢেউ উঠেছে ফুটবল মহলে। পাতার পর পাতা খরচ করছে মিডিয়া। তিনি তো বিন্দাস। ফুরফুরে।
গোয়া থেকে এ দিন মুম্বইতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আর্মান্দো। এবং সেখান থেকেই চিডি-খাবরাদের মধ্যে নানা কায়দায় ডার্বি হারের রেশ মুছে দিতে তৎপর দেশের সফলতম কোচ। পরপর খেলা এবং টুর্নামেন্ট নিয়ে বিরক্ত হলেও আর্মান্দো জানেন, সব সমালোচনা ধুয়ে যাবে ম্যাচ জিততে শুরু করলেই। কোচের পেপ টকের প্রভাব যে পড়তে শুরু করেছে সেটা এডে চিডির কথা শুনলেই বোঝা যায়। “ডার্বি হার একটা দুর্ঘটনা। লিগটা তো আমরাই পেয়েছি। ফেড কাপটাও আমরা জিতব,” বলে দেন গতবারের এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সঙ্গে সংযোজন, “আমি গোল করি বা না করি সেটা বড় কথা নয় দল, জেতাটাই আসল।”
বাগানে ওডাফা বুধবার নামবেন কি না তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে তেমনই উগা ওপারার ফেরা নিয়েও সংশয় আছে ইস্টবেঙ্গলে। আর্মান্দো বলে দিয়েছেন, “মঙ্গলবার দেখে সিদ্ধান্ত নেব।” দুই নাইজিরিয়ান না থাকলে কলকাতার দুই প্রধানই নামবে তিন জন বিদেশি নিয়ে।
বহু দিন পর আই এম বিজয়ন, জো পলদের রাজ্যে ফুটবলের বড় কোনও টুর্নামেন্ট হচ্ছে। কলকাতা, গোয়ার মতোই কেরলে ফুটবল প্রচণ্ড জনপ্রিয়। এখানকার সেভেন আ সাইড টুর্নামেন্টেই প্রচণ্ড ভিড় হয় এখনও। সংগঠকরা জানাচ্ছেন, মঞ্জেরিতে পঁচিশ হাজারের স্টেডিয়ামের কুড়ি হাজার সিজন টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অস্থায়ী আলোর ব্যবস্থা নিয়ে সামান্য সমস্যা থাকলেও মাঠ উপচে পড়বে মনে হচ্ছে। কোচির স্টেডিয়ামের ক্রিকেট পিচের শক্ত মাটি ছাড়া বাকি অংশটা খুশি করেছে সব দলকেই। এমনকী খুঁতখুঁতে করিমকেও। কোচি এবং মঞ্জেরি-- আজ থেকে দু’জায়গাতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ‘ক্লাব চ্যাম্পিয়ন অফ ইন্ডিয়া’ হওয়ার ধুন্ধুমার লড়াই।
উদ্বোধনী দিনেই নেমে পড়তে হচ্ছে র্যান্টি মার্টিন্স এবং জোসিমারদের। কোচিতে ইউনাইটেডের সঙ্গে লড়াই চার্চিল ব্রাদার্সের। দু’টো দলেই তীব্র আর্থিক সমস্যায়। মায়ের অসুস্থতার জন্য কলকাতা চলে গিয়েছেন কোচ সুভাষ ভৌমিক। কোচ-হীন চার্চিলকে তাই কিছুটা বেকায়দায় পেয়ে গিয়েছিলেন এলকো সতোরি। কিন্তু ইউনাইটেডের ডাচ কোচও তো কান্নাকাটি করছেন মাচের আগের দিন। “বেলো রজ্জাক নেই, হাসান নেই। যা পাব সেটাই বোনাস,” বলে দিয়েছেন র্যান্টিদের কোচ।
কলকাতার চার দলের মধ্যে সবথেকে ভাল জায়গায় মহমেডান। মঞ্জেরিতে তাদের আজকের প্রতিদ্বন্দ্বী সিকিম। ভবানীপুর আর ডেম্পো রয়েছে গ্রুপে। পরিস্থিতি যা, তাতে কলকাতার চার দলের মধ্যে সঞ্জয় সেনের টিমই শেষ চারে যাওয়ার প্রশ্নে সবথেকে সুবিধাজনক জায়গায়। স্টপার লুসিয়ানো সাব্রোসার সামান্য চোট আছে। সাদা-কালো শিবিরের শক্তি তাতে কমবে বলে মনে হচ্ছে না। মঞ্জেরিতে পেন-জোসিমাররা সমর্থকদের শব্দব্রহ্ম পাবেন মাঠে। যা তাদের বাড়তি সাহায্য করবে।
ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান কি শেষ চারে যেতে পারবে?
ইস্টবেঙ্গলের গ্রুপে আছে রাঙ্গদাজিদ এবং আই লিগের দুটো শক্তিশালী দল বেঙ্গালুরু এফ সি এবং স্পোর্টিং ক্লুব। বাগানের গ্রুপটা অবশ্য তুলনায় কম শক্তিশালী। মুম্বই এফ সি-র পর ক্রিস্টোফারদের খেলতে হবে লাজং এবং সালগাওকরের সঙ্গে।
গোয়ার ফুটবলে একটা প্রচলিত কথা আছে তা হলআর্মান্দো রিজার্ভ বেঞ্চে বসলেই সোনা ফলে। এমনই তার চওড়া কপাল! সেটা নতুন ক্লাবে কাজে লাগে কি না সেটাই দেখার।
আর করিম চাচার টিম? ডার্বিতে বাগান যা খেলেছে তার আশিভাগ খেলতে পারলে কিন্তু ওডাফারা পরের পর্বে চলে যাবেন। |