আমার বাবা সবার সেরা
চার বছর পরে ব্যালন ডি’অর জয় রোনাল্ডোর। মঞ্চেই বাবাকে আদর
ছেলে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রের। সোমবার জুরিখে। ছবি: এএফপি। |
২০০৮-এ স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে জীবনের প্রথম বার ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড ফুটবলার অব দ্য ইয়ার’ হয়েছিলেন রোনাল্ডো। তার পরেই ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারের নাম বদলে হয় ব্যালন ডি’অর। যা বার্সেলোনার মেসি ছাড়া সোমবার রাতের আগে এই গ্রহের অন্য কোনও ফুটবলার পাননি। ২০০৯ থেকে ২০১২টানা চার বার। যে কারণে রোনাল্ডোর জীবনের দ্বিতীয় ফিফা বর্ষসেরার ট্রফি জয়ের তাৎপর্য আরও বেশি। ২০০৯-এ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ছেড়ে স্প্যানিশ লিগে আসা ইস্তক রিয়াল মাদ্রিদের রোনাল্ডো আর বার্সেলোনার মেসি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। যে অসীম উচ্চতার রাইভ্যালরি বিশ্ব ফুটবল সম্ভবত আগে কখনও দেখেনি। কিন্তু চার বছর ধরে সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামান্যর জন্য (গত চার বারই ব্যালন ডি’অর-যুদ্ধে রোনাল্ডো দুই বা তিনে থেকেছেন) পিছিয়ে ছিলেন রোনাল্ডো। বিরক্ত হয়ে এ বার একটা সময় বলেই ফেলেছিলেন, “ফিফার বর্ষসেরা অনুষ্ঠানের জন্য জুরিখ যাব না।” অনুষ্ঠানের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও রোনাল্ডোর তীর্যক মন্তব্য ছিল, “আমি প্রতি বারই ব্যালন ডি’অর জেতার যোগ্য ছিলাম। প্রতি বারই জিততে পারতাম।” |
অভিনব ফ্রেম
একসঙ্গে তিন প্রজন্মের তিন কিংবদন্তি প্লাতিনি, পেলে, রোনাল্ডো।
সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র আর ব্যালন ডি’অর। |
সব বিরক্তি, সব হতাশার শেষ সিআর সেভেনের!
পেলে, বেকেনবাউয়ার, প্লাতিনি, জিদান, (বড়) রোনাল্ডো, বালাকদের সামনে সোমবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হাতে উঠল সোনার ফুটবল। যার আগে সদ্য প্রয়াত ইউসেবিও-র উপর ফিফার একটি ভিডিও প্রদর্শন রোনাল্ডোর ব্যালন ডি’অর জেতার মুহূর্তকে আরও আবেগময় করে তোলে। এ যেন পর্তুগালের এক কিংবদন্তি ফুটবলারের অদৃশ্য উপস্থিতিতে আরেক কিংবদন্তি পর্তুগিজ ফুটবলারের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি লাভ। সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের হাত থেকে ব্যালন ডি’অর নিয়ে কেঁদে ফেলেন রোনাল্ডো। মোচ ভোটের ২৭.৯৯ শতাংশ পান রোনাল্ডো। মেসি ২৪.৭২ শতাংশ। রিবেরি ২৩.৩৬ শতাংশ। |
মঞ্চেই কেঁদে ফেললেন পেলে। জুরিখে। |
যদিও রিয়াল কোচ আন্সেলোত্তি মনে করেছিলেন, এ বারের পুরস্কার নিয়ে এত সাসপেন্সের কিছু নেই। রোনাল্ডোর হাতে আগেই তা তুলে দেওয়া যেত। অনুষ্ঠান শুরুর আগে আন্সেলোত্তি বলেছিলেন, “গত বছরে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক রোনাল্ডো। সেরার পুরস্কারটা ও-ই পাবে।” রোনাল্ডোকে সেরার পুরস্কার পেতে দেখতে এতটাই মরিয়া ছিলেন তাঁর প্রাক্তন ম্যান ইউ সতীর্থ ফার্দিনান্দ, আগাম টুইট করেছিলেন, “রোনাল্ডো ব্যালন ডি’অর না পেলে আমি উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় দৌড়াব। সেটা কিন্তু খুব একটা ভাল দৃশ্য হবে না।” সুইৎজারল্যান্ড পৌঁছে অনুষ্ঠানের আগে পেলে-ও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, রোনাল্ডোই ব্যালন ডি’অর জিতবে।”
বায়ার্ন মিউনিখ কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার মনেই যা একটু কিন্তু সন্দেহ ছিল। তিনি বলেছিলেন, “মেসি, রোনাল্ডো আর আমার টিমের রিবেরি তিন জনই বিশ্বমানের প্রতিভা। ভাগ্যিস আমায় বাছতে বলা হয়নি। মুশকিল হয়ে যেত তা হলে।” তবে গোটা ফুটবল-বিশ্ব যখন ব্যালন ডি’অর জয়ীর অপেক্ষায় উদগ্রীব ছিল, তখন ফিফার বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত তোপ দেগেছিলেন আর্সেনাল ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার। “ব্যালন ডি’অর আমি বিশ্বাস করি না। আমি বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছি, এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হোক। ফুটবল দলগত খেলা। তা হলে কেন ব্যক্তিগত সাফল্যকে এত ঘটা করে পুরস্কৃত করা হবে? ব্যালন ডি’অরের জন্য ফুটবলারদের মধ্যে খারাপ সঙ্কেত পৌঁছায়। অনেকে ভাবতে শুরু করে, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।”
কিন্তু আজ আর রোনাল্ডোর ফুটবলের অস্কার-জয়ের রাতে কিংবদন্তি কোচের কথাও শুনছে কে!
|
ফিফা-র বর্ষসেরা
ফুটবলার: (ব্যালন ডি’অর) ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (রিয়াল মাদ্রিদ)
কোচ: জুপ হেইনকেস (বায়ার্ন মিউনিখ)
মহিলা ফুটবলার: নাদিন অ্যাঞ্জেরার (জার্মানি-গোলকিপার)
গোল: (পুসকাস ট্রফি) জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ (ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রপেলার কিক গোল)
বিশেষ পুরস্কার: পেলে |
বিশ্ব একাদশ
গোল: ম্যানুয়েল ন্যয়ার (বায়ার্ন মিউনিখ)
ডিফেন্স: ফিলিপ লাম (বার্য়ান মিউনিখ), সের্জিও র্যামোস (রিয়াল মাদ্রিদ), থিয়াগো সিলভা (প্যারিস সাঁ জাঁ), দানি আলভেজ (বার্সেলোনা)
মিডফিল্ড: আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (বার্সেলোনা), জাভি (বার্সেলোনা), ফ্রাঙ্ক রিবেরি (বায়ার্ন মিউনিখ)
ফরোয়ার্ড: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (রিয়াল মাদ্রিদ), লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা), জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ (প্যারিস সাঁ জাঁ) |
|