অ্যাকাডেমি দরকার, শিলিগুড়ি ফিরে জানিয়ে দিলেন অঙ্কিতা
ত্তরবঙ্গের টেবিল-টেনিস শহর বলে পরিচিত শিলিগুড়ি থেকে উঠে এসেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের একাধিক তারকা। দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও সেই শিলিগুড়িতেই তৈরি হয়নি কোনও টেবিল-টেনিস অ্যাকাডেমি। সদ্য জাতীয় খেতাব জয়ের পরে নিজের শহরে ফিরে একটি অ্যাকাডেমির প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন অঙ্কিতা দাস।
সোমবার শিলিগুড়িতে ফিরে অঙ্কিতা বলেন, “ভবিষ্যতে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের খেলোয়াড়দের বড় সাফল্য পেতে টেবল টেনিসের শহরে প্রশিক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামোর যাতে অভাব না হয় সে জন্য টেবল টেনিস অ্যাকাডেমি থাকা দরকার।” তিনি জানান, জাতীয় খেতাব জয়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অ্যাকাডেমির মতো পরিকাঠামো না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল তাঁকে। টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার তরফে শিলিগুড়িতে অ্যাকাডেমি তৈরির জন্য সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হলে সরকারের পক্ষেও উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানানো হয়েছিল। তবে এখনও সেই কাজ শুরু হয়নি। নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্মকর্তা মান্তু ঘোষও বলেন, “শিলিগুড়িতে অ্যাকাডেমি হলে উত্তরবঙ্গে টেবল টেনিসের প্রসারে তা সহায়ক হবে।”

জাতীয় টেবল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন শিলিগুড়ির অঙ্কিতা দাসকে সংবর্ধনা উত্তরবঙ্গ
উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের। সোমবার বাড়িতেও তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে ক্রীড়া
সংগঠনের প্রতিনিধিদের ভিড় উপচে পড়ে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শিলিগুড়িতে গত ৫ বছর ধরেই টেবল টেনিস অ্যাকাডেমির দাবি উঠেছে। বাম জমানায় তা গড়ার কথা হলেও সেই কাজ হয়নি। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানান, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ক্রীড়া মন্ত্রী থাকার সময় ২১০ সালে তারা টেবল টেনিস অ্যাকাডেমি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শিলিগুড়িতেই তা করার কথা ঠিক হয়েছিল। তবে এর পর তারা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ায় সেই কাজ করে উঠতে পারেননি। পাশাপাশি তাঁর দাবি, “রেলমন্ত্রী থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়িতে আন্তর্জাতিক মানের মাঠ এবং টেবল টেনিস অ্যাকাডেমি করার কথা জানিয়েছিলেন। অথচ সেই কাজ কী হয়েছে মানুষ ভালভাবেই জানেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “এই শহর থেকে অঙ্কিতাকে নিয়ে টেবল টেনিসে ৫ জন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেন। আমরা চাই এখানে টেবল টেনিসের অ্যাকাডেমি গড়তে। রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতর থেকে তা করা হবে। এ ব্যাপারে ক্রীড়া মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উৎসবের সময় মুখ্যমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী এলে তা নিয়ে আবার কথা বলব।” তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, অ্যাকাডেমি হতে সময় লাগবে। পুরসভার অধীনে বর্তমানে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মতো যে পরিকাঠামো রয়েছে তা ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রীর অভিযোগ, বেশিরভাগ সময়ই ওই স্টেডিয়াম বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। গৌতমবাবু বলেন, “বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের কোনও সুদূরপ্রসারী ভাবনা নেই। স্টেডিয়াম সংস্কারে আমরা ২২ লক্ষ টাকা খরচ করেছি। অনুশীলনের জন্য যাতে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হয় সে জন্য পুর কমিশনারের সঙ্গে কথা বলব।”
শিলিগুড়ি থেকে মান্তু ঘোষের পর কস্তুরী চক্রবর্তী, শুভজিৎ সাহা, সৌম্যজিৎ ঘোষ এবং অঙ্কিতা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেন। শিলিগুড়িতে যে সব ক্লাবে টেবল টেনিস অনুশীলন হয় সেখানে জায়গা ছোট। যে ওয়াইএমএ ক্লাবে মান্তু ঘোষের অধীনে যুব বিভাগ পর্যন্ত নিয়মিত অনুশীলন করতেন অঙ্কিতা সেখানেও একই অবস্থ। অঙ্কিতার কথায়, “ছোট ঘরে কথা জোরে শোনা যায়। বেশি ফুটওয়ার্ক করার জায়গা থাকে না। সেই মতো অভ্যাস হয়ে যায়। অথচ জাতীয়স্তরের প্রতিযোগিতায় বড় জায়গায় খেলতে হয়। সেখানে ফুটওয়ার্ক বেশি করতে হয়। অভ্যাস মতো কথা বললে বড় জায়গায় তা শোনা যায় না। এমন নানা সমস্যা হয়।”
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অঙ্কিতার চোখ এখন আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্যের দিকে। এ মাসের শেষ থেকে পাতিয়ালায় জাতীয় শিবির শুরু হচ্ছে। গোয়ায় লুসোফোনিয়া গেমস (১৭-২৪ জানুয়ারি)-এ অংশ নিয়ে শিবিরে যোগ দেবেন অঙ্কিতা। সেখানে বার্সেলোনা থেকে আসা বিদেশি কোচ পিটার এনগলের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে মুখিয়ে আছেন তিনি। পিটার এনগল ১৯৯৪ থেকে ৫ বছর নেদারল্যান্ডের প্রধান কোচ ছিলেন। এর পর ২০০০ সাল থেকে স্পেনের মহিলা দলের কোচ ছিলেন ২০১২ সাল পর্যন্ত। প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পিটার কার্লসনের কাছে অনুশীলনের সুযোগ পেলেও পরিবারের লোকেরা না-চাওয়ায় অঙ্কিতা যেতে পারেননি। এই প্রথম কোনও বিদেশি কোচের কাছে অনুশীলন করবেন তিনি। এ বছর জুলাই মাসে গ্লাসগোতে কমনওয়েলথ গেমস। তার প্রস্তুতি পিটার এনগলের কাছ থেকেই নেবে ভারতীয় টেবল টেনিস খেলোয়াড়রা। অঙ্কিতার কথায়, “শিলিগুড়ি থেকে বড় খেলোয়াড় উঠছে। আমাদের পরে যারা খেলবে তারা আরও ভাল ফল করুক। সে কারণে অ্যাকাডেমি দরকার। যেখানে সমস্ত পরিকাঠামো থাকবে। মাল্টিজিম, আলাদা করে অনুশীলন করানোর মতো কোচ, বিদেশি কোচ যা অ্যাকাডেমি না হলে অনেকের পক্ষে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।”
বর্তমানে শিলিগুড়ি পুরসভার ক্রীড়া বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বলেন, “পুরসভার চিন্তাভাবনা নেই বলে মন্ত্রীর কথা ঠিক নয়। কংগ্রেস পুরবোর্ড চালানোর আগে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরসভায় ছিল। সে সময় গৌতমবাবুর দলের কাউন্সিলরই ক্রীড়া বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা কেন করতে পারেননি? বরং আমরাই উদ্যোগী হয়েছি। টেবল টেনিসের একটি সংগঠন স্টেডিয়াম ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছে। বিশেষ কাউকে সুযোগ করে না দিয়ে সব খেলোয়াড়ই যাতে ব্যবহার করতে পারেন তার চিন্তা করা হয়েছে। শীঘ্রই কার্যকর করা হবে।” নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা সুব্রত রায় বলেন, “অ্যাকাডেমি গড়ার ব্যাপারে গত নভেম্বরে ক্রীড়া দফতরের লোকজন শিলিগুড়িতে এসে কী পরিকাঠামো দরকার তা জানতে চান। সেই মতো টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে বিস্তারিত পরিকল্পনা এনে তা দেওয়া হয়েছে।”
ভ্রম সংশোধন। সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকার উত্তরবঙ্গ সংস্করণে ‘অঙ্কিতার খেতাবে আপ্লুত শিলিগুড়ি’ শীর্ষক খবরে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষের বক্তব্যে লেখা হয় মহিলা হিসাবে মান্তু ঘোষের পরে শিলিগুড়ি থেকে অঙ্কিতা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেন। মান্তুর পরে কস্তুরী চক্রবর্তী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। অরূপবাবুর বক্তব্য থেকে কস্তুরীদেবীর কথা বাদ পড়ে যাওয়ায় আমরা দুঃখিত।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.