এক দিকে, উৎসবের রাজসূয় যজ্ঞ আয়োজন। অন্য দিকে, টিমে পাঁচ পেসার রেখে ইন্দৌরে সেমিফাইনাল-শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি।
লক্ষ্মীরতন শুক্লদের রঞ্জি সেমিফাইনাল-স্বপ্ন ছুয়ে ফেলার পর, দু’টো ব্যাপারই ঘটে থাকল বঙ্গ ক্রিকেটে।
আজ, মঙ্গলবার সব কিছু ঠিকঠাক চললে, সিএবি একই মঞ্চে হাজির করছে ময়দনের প্রথিতযশা দুই ফুটবল-কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমল দত্তকে! বাংলার ক্রিকেটারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য। প্রথম জন ‘ভোকাল টনিকে’র কারণে বিখ্যাত। দ্বিতীয় জন, বাংলা ফুটবলে ‘ডায়মন্ড’ সিস্টেম আমদানির জন্য। কোচিং নিয়ে যাঁদের আকচাআকচি, অতীত ‘বৈরিতা’ বঙ্গ ফুটবলে প্রায় লোকগাথার পর্যায়ে। শুধু এঁরাই নন, বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে আরও কয়েক জন ব্যক্তিত্বকে আনা হচ্ছে। যেমন হকির গুরবক্স সিংহ, টেনিসের নরেশ কুমার, দাবা-র দিব্যন্দু বড়ুয়া, অলিম্পিক শু্যটার জয়দীপ কর্মকার, প্রাক্তন সাঁতারু বুলা চৌধুরী, তিরন্দাজির দোলা ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অ্যাথলেটিক্সের কুন্তল রায়, ব্যাডমিন্টনের কৌশিক পাল কে নেই? কিন্তু আকর্ষণের ব্যারোমিটার চড়চড়িয়ে বাড়বে প্রথম দুই যদি শেষ পর্যন্ত আসেন। |
কোয়ার্টার-যুদ্ধ জয়ের পরের দিন অন্য মেজাজে বাংলার যোদ্ধারা।
শহরের শপিং মলে স্ত্রীর সঙ্গে অশোক দিন্দা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমল দত্ত।
যে দুইকে দিন দু’য়েক আগে কলকাতা ডার্বিতে কমেন্ট্রি করতে দেখা গিয়েছিল। বাংলার রঞ্জি টিমকে উদ্বুদ্ধ করতে অমলকে এর আগে আসতে শোনা যায়নি। কিন্তু পিকে আগে এসেছেন, প্রখ্যাত ‘ভোকাল টনিক’-ও দিয়ে গিয়েছেন। ’৮৯-৯০ রঞ্জি ফাইনালের আগের দিন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাকে তাতিয়ে গিয়েছিলেন পিকে।
আর লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র সঙ্গে দেখা হলে কী বলবেন?
“দেখা হলে বলব যে, তোমাদের সিনিয়ররা যেটা করতে পেরেছিল, সেটা তোমারাও পারবে। উল্টো দিকের টিমটা মহারাষ্ট্র না পঞ্জাব, কিছু যায় আসে না। বলব, তোমরা আগ্নেয়গিরি। যার সম্পূর্ণ বিস্ফোরণ এখনও হয়নি। ওদের বুঝিয়ে দিতে বলব যে, বাংলা পারে না সেটা ভুল প্রমাণ করে দিতে,” বলে দিচ্ছেন পিকে। অমল দত্ত আবার বেশি কথা বলতে চান না। আগে শুনতে চান লক্ষ্মীদের কী বক্তব্য? জ্যাংড়ার বাড়ি থেকে রাতে ফোনে বললেন, “নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছি যে পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না। সেটা বলব। আর বলব, যে মিশন নিয়ে খেলছ, সেটা থেকে হারিয়ে যেও না।”
কিন্তু এঁরা দুই শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে আসবেন তো? সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছেন, “কথা দিয়েছেন ওঁরা। গাড়ি পাঠিয়ে দিতেও বলেছেন।” এমনিতেই মঙ্গলবার সিএবি-তে একটা একশো ফুটের ফ্লেক্স থাকছে। যেখানে লক্ষ্মীদের জন্য শুভেচ্ছা-সই করে যেতে পারবেন শহরের মানুষ। সকাল দশটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত। যে ফ্লেক্সের স্ক্যান দিয়ে দেওয়া হবে লক্ষ্মীদের। বোঝাতে, যে টিম বাংলা ইন্দৌরে সেমিফাইনাল খেলতে গেলেও বঙ্গদেশ তাদের সঙ্গে আছে। ঠিক সে কারণেই শোনা গেল, এমন বিভিন্ন ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের দিয়ে উদ্বুদ্ধ করানোর চেষ্টা। কিন্তু অনুষ্ঠানে বাংলা ক্রিকেটাররা থাকবেন? কোয়ার্টার ফাইনালের আগে দশ প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ককে আনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বাংলা দলের কাউকে দেখা যায়নি। সিএবি জানাচ্ছে, বাংলা কোচ অশোক মলহোত্র ও অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল থাকবেন। আর থাকবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। |
অশোকনগর প্রিমিয়ার লিগ দেখতে অধিনায়ক লক্ষ্মীর সঙ্গে
সৌরাশিস লাহিড়ী এবং শিবশঙ্কর পাল। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র। |
উৎসবের এমন অভূতপূর্ব আয়োজনের পাশাপাশি এ দিন আবার মহারাষ্ট্র নিয়েও স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা শুরু হয়ে গেল। হোলকারে যে পিচে সেমিফাইনালে নামতে চলেছে বাংলা, তা গ্রিন টপ। ইন্দৌর থেকে ফোনে পিচ কিউরেটর তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেও দিলেন, “বোর্ড এখন স্পোর্টিং উইকেট করতে বলছে। তাই ঘাস থাকবে।” যে খবরে উৎসাহিত বঙ্গ শিবির। মনে করা হচ্ছে যে, বাংলার শক্তি পেস বোলিং। ঘাস থাকা মানে পেসারদের সুবিধে। সোমবার যে দল নির্বাচন হল সেমিফাইনালের জন্য তাতে তাই পাঁচ জন পেসারকে নেওয়া হল। অশোক দিন্দা, শিবশঙ্কর পাল, সৌরভ সরকারের সঙ্গে সৌরভ মণ্ডল এবং বীরপ্রতাপ সিংহ। আঠারো জনের টিম করা হয়েছে। স্পিরিট বজায় রাখতে কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। আরও দু’জন পরে ঢুকতে পারেন। সায়নশেখর মণ্ডল ও মনোজ তিওয়ারি। দু’জনেরই চোট। মাঝে সেরে উঠলে তাঁরা ঢুকে যাবেন। |