দিল্লির মসনদ জয়ে আগে থেকেই রাজধানীকে নজরবন্দি রাখতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী! কঠিন যুদ্ধ জেতার লক্ষ্যে ঘুঁটি সাজাতে চান লাল কেল্লার শহরে বসে। দলে তার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘনঘন আসবেন, বেশি সময় থাকবেন বলে তৈরি হচ্ছে ক্যাম্প অফিস। সেই সঙ্গে অশোক রোডে দলের সদর দফতরে হচ্ছে ‘ওয়ার রুম’। যার দায়িত্ব সামলাবেন মূলত মোদীর দুই প্রধান সেনাপতি, অরুণ জেটলি ও অমিত শাহ।
লোকসভা নির্বাচনের মাত্র মাস তিনেক বাকি। বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই প্রাসঙ্গিক হচ্ছে রাজধানীর রাজনৈতিক গতিবিধি। চলতি সপ্তাহের শেষে দিল্লিতে দলের কর্মসমিতি ও পরিষদের বৈঠক। মোদী এখন থেকেই দিল্লিতে যথাসম্ভব বেশি সময় থাকতে পারলে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর নিরন্তর নজর রাখতে ও সেই অনুযায়ী রণকৌশল স্থির করতে তাঁর সুবিধা হবে বলে মনে করছে সঙ্ঘও। এ ছাড়া, গুজরাতের বদলে দিল্লিতে সময় দিলে প্রচারের আলোও বেশি মিলবে বলে মনে করছে মোদী শিবির।
গত লোকসভা নির্বাচনে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে যখন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়, সেই সময় ‘ওয়ার রুম’ তৈরি করা হয়েছিল সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ নেতা অনন্ত কুমারের তুঘলক রোডের বাড়িতে। তার আগের নির্বাচনে এই ভার সামলেছিলেন প্রমোদ মহাজন। মোদী কিন্তু আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও নেতার বাড়িতে নয়, ‘ওয়ার রুম’ হবে দলের সদর দফতরে। সঙ্ঘ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, লোকসভার রণনীতির ভার এমন কারও হাতে ছাড়া যাবে না, যাঁদের উপরে তাঁর অতটা আস্থা নেই। তাই জেটলি ও অমিতকেই বেছে নিয়েছেন মোদী। এর আগের ভোটে আডবাণী-সুষমাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকায় জেটলি সে ভাবে সক্রিয় হননি। কিন্তু এ বারে পরিবর্তিত সমীকরণে জেটলি প্রায় প্রতি দিন ‘ওয়ার-রুম’-এ বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সঙ্ঘ সূত্রের মতে, মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গড়াই এখন সকলের লক্ষ্য। তার জন্য মোদী যাঁদের উপরে আস্থা রেখে এই কার্যসিদ্ধি করতে পারবেন, সেই পথে হাঁটাই বাঞ্ছনীয়।
জেটলি-অমিত জুটি লোকসভা নির্বাচনে সফল হলে নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে বিজেপি নেতৃত্বের এক নতুন ধারাও তৈরি হয়ে যাবে এরই মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে দলের বাকিরা অনেক বেশি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারেন। গত সপ্তাহেই হায়দরাবাদে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের নেতৃত্বে সঙ্ঘের বৈঠক হয়। প্রথা অনুযায়ী, সেই বৈঠকে বিজেপি থেকে সভাপতি হিসেবে শুধু রাজনাথ সিংহেরই থাকার কথা। তিনি ছিলেনও। কিন্তু ভাগবত সেই বৈঠকে নিজের ঘনিষ্ঠ নেতা ও দলের প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ীকেও হাজির থাকতে বলেন। যা থেকে এই বার্তাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, গডকড়ীকে সরিয়ে রাজনাথ সভাপতি হলেও তিনি ভাগবতের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পারেননি। এবং সভাপতির পদ থেকে সরতে হলেও গডকড়ীর উপরে ভাগবতের আস্থা এখনও অটুট।
সঙ্ঘ নেতাদের মতে, লোকসভার আগে মোদীর যাবতীয় গতিবিধি এখন আরএসএস-এর সম্মতিতেই হয়। আরএসএস-ও মনে করছে, দিল্লির রাজনীতি দিল্লিতে বসে করাই শ্রেয়। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, দিল্লি থেকে কাজ করার একটি বাড়তি সুবিধাও রয়েছে। তা হল, প্রচারে থাকা। আম আদমি পার্টির গতিবিধি যদি দিল্লির বদলে অন্য কোনও রাজ্যে হত, তা হলে এত প্রচার পেতেন না অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গোয়ায় কাল নিজেই এ কথা বলেন মোদী। পরোক্ষে কেজরিওয়ালের সঙ্গে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্করের সহজ-সরল জীবনযাপনের তুলনা টেনে তিনি বলেছেন, “পারিক্কর দিল্লিতে নেই বলেই সংবাদমাধ্যমের নজর তাঁর উপরে নেই।”
মোদী তাই দিল্লিকে দূর অস্ত্ বলতে চাইছেন না কোনও মতেই। |