আপকে প্রতিপক্ষ মেনে এ বার মুখ খুললেন মোদীও

১২ জানুয়ারি
ই সেই গোয়া।
সাত মাস আগে এখান থেকেই সাত রেস কোর্স জয়ের লক্ষ্যে দৌড় শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। লালকৃষ্ণ আডবাণীর আপত্তি উপেক্ষা করে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার প্রথম ধাপটি পেরিয়েছিলেন এখানেই।
এই সেই গোয়া।
২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পর ইস্তফার জন্য প্রবল চাপ। এই গোয়াতেই জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আডবাণী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদ টিকে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর। আজ গুজরাতের সাফল্যে ভর করেই দেশ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন মোদী।
সেই গোয়াতেই আজ ফের এলেন নরেন্দ্র মোদী।
এলেন এমন একটা সময়ে, যখন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দিল্লি বিধানসভা ভোটের নয়া তারকা, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। দিল্লিতে সরকার গড়ার পর যাদের নজর এখন লোকসভা ভোটের দিকে। মাস দুয়েক আগেও সব প্রচারমাধ্যমে যখন কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে শুধু মোদীর নামই উঠে আসছিল, এখন সেখানে ভাগ বসিয়েছেন কেজরিওয়ালও।
জনসভায় বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার পানজিমে পিটিআইয়ের ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে এই আপ যে গেরুয়া শিবিরের রক্তচাপ বাড়িয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। এত দিন দলের নেতারা রোজ অরবিন্দের বিরুদ্ধে সরব হলেও মোদী নিজে টুঁ শব্দ করেননি। আজ করলেন। আর সে জন্য বেছে নিলেন গোয়াকেই। কারণ, কেজরিওয়ালের সাদামাটা জীবনযাত্রার সঙ্গে টক্কর দিতে বিজেপির এক মাত্র ‘পোস্টার বয়’ যে গোয়ারই মুখ্যমন্ত্রী। মনোহর পারিক্কর। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, মনোহর এই ব্যাপারটায় পাল্লা দিতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গেও।
গোয়ায় এসে মোদী আজ একবারও আপ বা কেজরিওয়ালের নাম না করলেও প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় বারেবারেই নিশানা করলেন দেশের রাজনীতিতে এই নতুন শক্তিকে। এই প্রথম বার। যার ফলে স্পষ্ট হয়ে গেল, এ বার আপ-কেও প্রতিপক্ষ হিসেবে মেনে নিল বিজেপি। মানলেন নরেন্দ্র মোদীও। তাই মোদীর নিশানায় আপ। মনোহর পারিক্করের প্রসঙ্গ টেনে মোদী বললেন, “টেলিভিশন-সংবাদমাধ্যমের নজর গোয়ায় যায় না। তাঁর সরল জীবনযাত্রা, সততা, আর তার মধ্যেই রাজ্যের এমন উন্নয়ন কারও নজরে আসে না। অথচ পারিক্কর যদি দিল্লিতে হতেন, তা হলে এত দিনে তোলপাড় হয়ে যেত! এক জন এতো পড়াশোনা করা ব্যক্তি কেমন রাজ্য চালাচ্ছেন, দিল্লির বাইরে মিডিয়া কিছু দেখে না!” সততার প্রশ্নে কেজরিওয়ালকে টক্কর দিতে মোদী টেনে আনলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রমন সিংহ এমনকী হিমাচলের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমলের নামও।
কেজরিওয়ালের মোকাবিলায় দলের একগুচ্ছ নেতার তুলনা টানায় স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি যাঁর কাঁধে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি নিজে আম আদমির কষ্টিপাথরে কতটা উত্তীর্ণ হলেন? মোদী এই বিষয়েও সচেতন। তাই পারিক্করের সঙ্গে নিজেকেও একই সারিতে রেখে বললেন, “আমার মতো ছোটোবেলায় গরিব পরিবারের চা বিক্রি করা বাচ্চাটিকেও আজ
নেতা বানিয়েছেন এই জনতা।” থামলেন না এখানেই। নিজেকে শহিদের উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে মন্তব্য করলেন, “১২ বছর গুজরাতের সেবা করার পরেও আমি টেলিভিশনের সঙ্গে লড়াইয়ে সব সময়ই হেরেছি! সেখানে জায়গা করে নিতে পারিনি। জিততেও পারিনি। কিন্তু একটি
বিষয় নিশ্চিত, জনতার হৃদয়ে আমি জায়গা করে নিয়েছি। দেশকে তৈরি করতে হলে টেলিভিশনে প্রচার হলেই হবে না, মাটির উপরে ‘ভিশন’ দেখাতে হবে।”
বিজেপি নেতারা কবুল করছেন, কেজরিওয়াল নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার প্রচার ও তাঁকে ঘিরে মানুষের আবেগে নড়েচড়ে বসতে হয়েছে তাঁদের। মোদীর কৌশল রচনার অন্যতম রূপকার অরুণ জেটলি আজ বলেন, “সুশাসন করে প্রচার করলে তার মানে দাঁড়ায়। কিন্তু বিনা সুশাসনে শুধুই প্রচার, চমক ছাড়া কিছুই নয়।” বিজেপির আশঙ্কা, কংগ্রেস নিজে দুর্বল হয়েও আপ-এর পিঠে সওয়ার হয়ে মোদীকে আরও দুর্বল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই মূল নিশানা আপ-ই। তবে আজ কংগ্রেসকে যে একেবারেই আক্রমণ করেননি মোদী, তা নয়। রাজীব গাঁধী থেকে মনমোহন সিংহ, কাউকেই ছাড়েননি। এমনকী পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন। সংখ্যালঘুদের গ্রেফতারের সময় সতর্ক থাকার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকেও এক হাত নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। ঠারেঠোরে আক্রমণ করেছেন নীতশ কুমারকেও, যিনি নাকি বিহারের বিশেষ মর্যাদার নাম করে কেন্দ্রের কাছ থেকে শুধু বাড়তি টাকা চান!
এ দিনের সভায় পরোক্ষে কংগ্রেসের সঙ্গে আপ-এর আঁতাতের অভিযোগও তুলেছেন মোদী। তিন দিন আগে হায়দরাবাদে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতও এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজ মোদী বললেন, “কংগ্রেসের কিছু রক্ষক দল আমাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে! আমাদের দলের সব কর্মী সততার সঙ্গেই ভারতমাতার সেবা করেন। কংগ্রেসের দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারির বিরুদ্ধে এই রক্ষাকবচরা কোনও মন্তব্য করে না!”
মোদীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে অরুণ জেটলি বলেন, “কেজরিওয়াল দিল্লি বিধানসভায় লড়াই করেছেন কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। অথচ ক্ষমতায় আসার পর শুধু মাত্র আমলাস্তরের ছোটোখাটো দুর্নীতির কথা বলতেই তিনি ব্যস্ত!” একই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, “দিল্লির কুর্সিতে বসার পর লোকসভায় শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলেও কেজরিওয়ালের মধ্যে দেশ চালানোর জন্য কোনও বড় ভাবনা নেই। সেই বড় ভাবনা রয়েছে এক মাত্র মোদীর মধ্যেই।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.