কনকনে ঠান্ডা, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তবু কোচবিহারের রাসমেলা ময়দান ছাপিয়ে গেল ভিড়ে। বামফ্রন্টের নেতাদের দাবি, হাজার তিরিশেক মানুষ এসেছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয়ন গুহ প্রমুখ নেতাদের সভায়। অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পুলিশের হিসেবে অবশ্য লোকের সংখ্যা হাজার পনেরো ছাড়ায়নি।
শনিবার জেলা বামফ্রন্টের সমাবেশে ভিড় দেখে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, “সন্ত্রাস সত্ত্বেও যেভাবে বামেদের সমাবেশে সামিল হয়েছেন কোচবিহারবাসী, তাতে মানুষ যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন তা স্পষ্ট।” প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে মানিকবাবু বারেবারেই এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন। তৃণমূলের শাসনকে “জঙ্গলের রাজত্ব” বলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল এমন পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে তারা ভাবছে চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে। কারও প্রতিবাদ করার সাহস থাকবে না। কিন্তু যাঁরা গণতন্ত্রে কুঠারাঘাত করেন, তাঁরা শেষ কথা বলেন না।” |
এ রাজ্যের পরিস্থিতি তৃণমূলের একাংশও মানতে পারছেন না বলে দাবি করেন মানিকবাবু। তাঁর বক্তব্য, “শুধু বামফ্রন্ট নয়, তৃণমূলের পুরনো দিনের লোকেরাও অনেক কিছু মানতে পারছেন না।” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যব্যাপী প্রচারের কথা ঘোষণা করেন। সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি করেন উদয়ন গুহ।
এ দিনের সভায় কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক ছিলেন মানিকবাবু। তিনি বলেন, “কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গড়তে হবে।” সুযোগ থাকলে মানুষ যে কংগ্রেস-বিজেপিকে বাদ দিতে পারেন, তা বোঝাতে ‘আম আদমি পার্টি’র সাফল্যের কথা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, “গত লোকসভা ভোটের আগে বছরে ১ কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে প্রায় ৪২ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ করছে না কেন?” এই প্রসঙ্গে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর কথায়, “সরকার কয়েক হাজার চাকরি দিলেও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার চাকরি দিয়েছেন।” কেএলও দৌরাত্ম্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে মানিকবাবু উন্নয়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বলেন।
এ দিন সভায় বিমান বসু ছিটমহল বিনিময়ের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, “ছিটমহল সমস্যার সমাধান হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি হতে পারে। ওখানে মৌলবাদীরা শক্তিসঞ্চয় করছে।” |