ডাক্তার দেখাতে হলে সোজা চলে যান থানায়
রোগীর ঢল নেমেছে বলাগড় থানায়!
ব্লকের এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক মেলে না, অন্যটিতে যাতায়াতে বিস্তর হ্যাপা এমন অভিযোগ বলাগড়ের অধিকাংশ বাসিন্দারই। আর এমন অভিযোগ এক বছর ধরে শুনতে শুনতে এ বার হেস্তনেস্তই করে ফেলেছেন বলাগড় থানার ওসি তাপস চট্টোপাধ্যায়। থানার একটি ঘরে খুলে দিয়েছেন চিকিৎসকের চেম্বার। প্রতি রবিবার সেখানে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। মিলছে ওষুধও। দু’সপ্তাহ আগে চালু হওয়া এই ব্যবস্থায় খুশি গ্রামবাসীরাও।
জনসংযোগ বাড়াতে এ রাজ্যে ফুটবল-ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, রক্তদান শিবির বা পুজোর পুরস্কারের আয়োজন করে পুলিশ। জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য শিবিরও হয় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু থানায় চিকিৎসার ব্যবস্থা এই প্রথম বলে দাবি রাজ্যের এক পুলিশকর্তার।
গত দু’টি রবিবারেই রোগীর ভিড় উপচে পড়ে থানায়। জিরাট, গুপ্তিপাড়া, সোমড়াবাজার, কুন্তীঘাট ব্লকের নানা এলাকা থেকে বহু রোগী এসেছিলেন। খবর ছড়িয়েছে গঙ্গার ও পারে নদিয়ার চাকদহেও। সেখানকার গঙ্গাতীরবর্তী এলাকার রোগীরাও নৌকা করে চলে আসেন। বেলা ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত চলে চিকিৎসা। দুই রবিবারেই ৮০ জনেরও বেশি রোগী আসেন বলে থানার দাবি।
যাঁর উদ্যোগে এই আয়োজন, সেই ওসি তাপসবাবু রোগীদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুশি। তাঁর কথায়, “থানার দায়িত্বে আসার পর নানা গ্রামে ঘুরতে হয়েছে। মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে হয়রানির কথা জানাতেন। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে এখানকারই এক চিকিৎসককে থানায় চিকিৎসা করার প্রস্তাব দিই। তিনি রাজি হওয়ায় কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছে।”
হুগলি জেলার প্রত্যন্ত ব্লকগুলির মধ্যে একটি বলাগড়। গ্রামবাসীদের অধিকাংশই দিনমজুরি করে সংসার চালান। ব্লকে রয়েছে দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। একটি জিরাট, অন্যটি গুপ্তিপাড়া। জিরাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক সময়ে চিকিৎসকের দেখা মেলে না বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। অন্য দিকে, গুপ্তিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হলে গ্রামবাসীদের ভরসা করতে হয় ট্রেকার বা মোটরভ্যানের উপরে। তা-ও অনেক সময়ে পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় ব্লকের বেশির ভাগ বাসিন্দাই চিকিৎসা পরিষেবার জন্য দ্বারস্থ হন প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের বর্ধমান জেলার কালনা হাসপাতালে। ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁদের ফিরতে বিকেল গড়িয়ে যায়। কেউ কেউ আবার যান চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। সেখানে যেতেও পাড়ি দিতে হয় প্রায় একই দূরত্ব।
কিন্তু এ বার থানাতেই নিখরচায় ডাক্তার দেখানোর সুযোগ মেলায় গ্রামবাসীদের সেই কষ্ট দূর হয়েছে। জিরাটের বাসিন্দা কালীপদ হালদারের কথায়, “থানার বড়বাবু পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে চিকিৎসার যে ব্যবস্থা করেছেন তাতে আমাদের যথেষ্ট উপকার হচ্ছে।” বলাগড়ের বাসিন্দা নন্দদেবী বিশ্বাস বলেন, “অনেক দিন ধরে শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা। চুঁচুড়া হাসপাতালে যাতায়াতে সময় ও অর্থ দুই-ই লাগে। এখন থানাতেই দেখাচ্ছি।”
থানাতে গ্রামবাসীরা যাঁর কাছে ভিড় করছেন, সেই সত্যজিৎ ঘোষ জিরাটেরই বাসিন্দা। মধ্য চল্লিশের ওই চিকিৎসক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ব্লকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পর্যাপ্ত নয়। গরিব মানুষদের জন্য এই ব্যবস্থার খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হলে তিনি কেন সেই পরিষেবা দিতে আগে এগিয়ে আসেননি? তিনি বললেন, “সপ্তাহের নানা দিনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় রোগী দেখি। কিন্তু আমি গ্রামের ডাক্তার। আলাদা চেম্বার করে নিখরচায় চিকিৎসা করা বা ওষুধ দেওয়া আমার পক্ষে সহজ নয়। তাই সরকারের তরফে যখন প্রস্তাব এল, না করিনি। রবিবারেও রোগী দেখতে রাজি হই।” সরকারের যে দফতরের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কথা, তারা তা পর্যাপ্ত দিতে পারছেন না?
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুপ্রিয় সাধুখাঁ সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, “গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যতটা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, আমাদের দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ততটা দেওয়া হয়। সদর হাসপাতালের মতো সব পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।” তবে, থানার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনিও। প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.