দিন কয়েক আগেই লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে পাখার ব্যবস্থা করে বন্দিদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার শুধু স্বস্তি নয়, মারণ রোগের হাত থেকে বন্দিদের রক্ষা করতে এক অভিনব পদক্ষেপ করল কারা দফতর। সংশোধনাগারের মহিলা আবাসিকদের মধ্যে শুরু হল ক্যানসার নির্ণয় প্রকল্প। প্রথমেই আলিপুর মহিলা জেলে এ কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেখানকার রোগ নির্ণয় কর্মসূচিতে বেশ কয়েক জন মহিলার স্তন ক্যানসার ধরাও পড়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে তাঁদের অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা করা হবে বলে কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
দেশ জুড়ে মহিলাদের স্তন ক্যানসার বাড়তে থাকায় চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের নিয়মিত চেক-আপের উপরে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সংশোধনাগারে বন্দি মহিলারাও যাতে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন, তাই জেলের ভিতরে গিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাঁদের পরীক্ষা করার প্রসঙ্গটি ওঠে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সে নিয়ে প্রথমে কিছু সংশয় দেখা দেয়। পরে তা কেটেও যায়। প্রথম দফার পরিদর্শন এবং চিকিৎসার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করবেন মহিলা বন্দিরা, চলছে সে প্রশিক্ষণও।
এ ব্যাপারে কারা দফতরকে পথ দেখিয়েছে স্তন ক্যানসার চিকিৎসকদের এক সংগঠন। আলিপুর মহিলা জেলের বন্দিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন তাঁরা। সংগঠনের তরফে চিকিৎসক তাপ্তি সেন বলেন, “হু হু করে বাড়ছে স্তন ক্যানসার। কেন বাড়ছে, তার ঠিক কারণ এখনও অজানা। প্রথম দফায় রোগ নির্ণয় হলে অনেককে বাঁচানো সম্ভব। সচেতনতা না বাড়ালে তা সম্ভব নয়। যাঁরা আড়ালে থাকেন, তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হবে কী করে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা চলছিল। কারা কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ায় যৌথ ভাবে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে।”
মহিলাদের মধ্যে যে ধরনের ক্যানসারের প্রকোপ বেশি। তার একেবারে উপরেই রয়েছে স্তন ক্যানসার এবং জরায়ুমুখ ক্যানসার। চিকিৎসকদের মতে, এই দু’ধরনের ক্যানসারেরই মোকাবিলা সম্ভব। একমাত্র জরায়ুমুখ ক্যানসার হওয়ার আগেই আভাস পাওয়া সম্ভব। আর স্তন ক্যানসার হল এমন যে ক্ষেত্রে, মহিলারা নিজেরাই নিজেদের স্তন পরীক্ষা করে প্রাথমিক স্তরেই এর আঁচ পেতে পারেন। কারাকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দফায় তাঁরা স্তন ক্যানসারকে বেছে নিয়েছেন। পরে ধাপে ধাপে জরায়ুমুখ ক্যানসার নিয়েও কাজ হবে।
ক্যানসার চিকিৎসকদের ওই সংগঠন ইতিমধ্যেই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলকে ‘দত্তক’ নিয়েছে। সংগঠনের কর্তারা জানান, মহিলাদের এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করার পদক্ষেপ হিসেবে তাঁরা ইতিমধ্যেই কয়েকটি মেয়েদের স্কুল, কলেজকে ‘দত্তক’ নিয়েছেন। এ বারে তাঁদের লক্ষ্য জেলগুলি।
‘দত্তক’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? চিকিৎসকেরা জানান, দত্তক অর্থাৎ ওই জায়গাগুলির মহিলাদের নিয়মিত চেক আপ, রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। নিয়মিত ওই জায়গাগুলি তাঁরা পরিদর্শনে যান বলেও জানিয়েছেন।
রণবীর কুমার (আই জি কারা) বলেন, “ক্যানসার নিয়ে এখন চারপাশে এত আলোচনা। সকলেই বলছেন, সচেতনতা কর্মসূচি খুব জরুরি। আমরাও মনে করছি জেলে এর দরকার আছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে এই কাজ শুরু হয়েছে। পরে ধাপে ধাপে অন্য জেলগুলির কথাও ভাবব।” |