পরিকল্পনার ত্রিফলা, আঁধার ঘুচবে কি পরিবহণে
থে বেরিয়ে বাসের অভাবে নিত্য নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অথচ হাজারখানেক বাস রোজ স্রেফ পড়ে থাকছে রাজ্য সরকারি বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের হরেক ডিপোয়। বাস চালিয়ে যে রোজকার খরচই উঠছে না!
বছর বছর জ্বালানি-যন্ত্রাংশের দাম বাড়লেও সেই হারে বাসভাড়া বাড়েনি। উপরন্তু টাকার অভাবে রক্ষণাবেক্ষণ শিকেয়। লোকসানের বোঝা বইতে না-পেরে বেসরকারি বহু মালিক বাস বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারেরও কার্যত সেই দশা। আয় না-বাড়ায় ভর্তুকি দিয়ে নিগম টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। বাড়তি বোঝা হয়ে রয়েছে অতিরিক্ত কর্মীর ভার। বাসের সঙ্গে বহু কর্মীকেও বসিয়ে রেখে তাঁদের পিছনে মাইনে গুনে যেতে হচ্ছে ফি মাসে।
তবু ভাড়া বাড়ানোর চিন্তা সরকারের মাথায় নেই। পরিবর্তে স্বেচ্ছাবসর, চুক্তি নিয়োগ ও নতুন বাস কেনা এই ত্রিমুখী পরিকল্পনায় সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে চাইছে রাজ্য। যদিও তার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সরকারেরই অন্দরে।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, সিএসটিসি, এনবিএসটিসি, এসবিএসটিসি এবং সিটিসি এই চার নিগমে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চালু করার কথা ভাবা হয়েছে। সে খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা, যা মঞ্জুরও হয়েছে। “অর্থ দফতরে ফাইল পাঠিয়েছিলাম। সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। আশা করছি, টাকা পেতে বেশি সময় লাগবে না।” বলেছেন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু স্বেচ্ছাবসর নিতে রাজি ক’জন?
দফতর-সূত্রের খবর, পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রায় দশ হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছাবসরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। রাজি হয়েছেন সাকুল্যে সাড়ে আটশোর মতো। অর্থাৎ দশ শতাংশও নয়! কর্মীদের তরফে এ হেন অনাগ্রহের প্রেক্ষাপটে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে আদৌ লাভ হবে কতটা? এবং এই পরিস্থিতিতে অন্তত সাড়ে হাজার নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা শুনেও ভুরু কুঁচকেছে সরকারি কর্তাদের একাংশের। কী রকম?
পরিবহণ দফতরের পরিকল্পনা, স্বেচ্ছাবসরের পাশাপাশি নিগমগুলোয় চুক্তির ভিত্তিতে এই সব নতুন কর্মী নেওয়া হবে। স্থায়ীকরণের দাবি তুলবেন না এই মর্মে শুরুতেই তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে রাখা হবে। ওঁরা মাসে ছ’হাজার টাকা করে পাবেন। এর পিছনে বছরে রাজ্যের কোষাগার থেকে বোরোবে প্রায় ২৬ কোটি। এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গিয়েছে, বিভিন্ন নিগমে অস্থায়ী চাকরির আবেদনপত্রও জমা পড়ছে। কিন্তু সরকার যেখানে পঞ্চাশোর্ধ্বদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে বিদায় করে কর্মীর ভার কমাতে চাইছে, সেখানে নতুন ভাবে লোক নেওয়ার কারণ কী? তা-ও একেবারে সাড়ে চার হাজার জন?
পরিবহণ-কর্তাদের যুক্তি, “কাজ না-করতে করতে আর বয়সের ভারে অনেক কর্মীর দক্ষতা কমে গিয়েছে। এ দিকে সরকার নতুন নতুন বাস কিনছে। সেগুলো চালানো ও দেখভালের জন্য কর্মনিষ্ঠ লোক দরকার। তাই এ বার চুক্তিতে নিয়োগ।” তবে যত কর্মী আগাম অবসর নিতে রাজি হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ করলে সরকারের কী লাভ হবে, কর্তারা সেই ধন্ধর কাটাতে পারেননি।
যেমন মেলেনি নতুন ন’শো বাস খরিদের পরিকল্পনার যৌক্তিকতা। স্থির হয়েছে, জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম)-এর আওতায় তা কেনা হবে, যার দামের ৩৫% মেটাবে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য দেবে ৬৫%। এতে রাজ্যের খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এ-ও কথা হয়ে রয়েছে যে, জেএনএনইউআরএমের ওই সব নতুন বাস সরকারই চালাবে।
এখানেও উঠছে প্রশ্ন। দফতরের একাধিক অফিসাররের বক্তব্য: আগের বার জেএনএনইউআরএমের বহু বাস কিনে তা বেসরকারি মালিকদের চালাতে দেওয়া হয়েছিল। সরকার ছিল ব্যাঙ্ক-গ্যারান্টার। কিন্তু মালিকেরা ব্যাঙ্ক-ঋণের কিস্তি পরিশোধ না-করায় পুরো আর্থিক দায় এখন রাজ্যের ঘাড়ে চেপে বসেছে। তার উপরে রয়েছে নিগমের বসিয়ে রাখা বাস-বহরের বোঝা। পরিবহণ দফতরের তথ্য বলছে, রাজ্য সরকারি নিগমগুলির হাতে এখন মোট যে ২২০০ বাস রয়েছে, গড়ে তার হাজারখানেকই রোজ বসে থাকে।
এমতাবস্থায় আরও ন’শো বাস এলে কে, কী ভাবে সেগুলো চালাবে, চালানোর খরচই বা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন সরকারি কর্তাদের অনেকেও। তাঁদের হিসেবে, আয়ের তুলনায় ব্যয় বহু গুণ বেড়ে যাওয়ায় এখনই সরকারি পরিবহণের পিছনের রাজ্যকে বছরে ছ’শো কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হয়। নয়া পরিকল্পনায় আর্থিক বোঝা বাড়ারই প্রভূত সম্ভাবনা দেখছেন পরিবহণ-কর্তাদের এই মহলটি। সরকার কী বলে? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য এ সব প্রশ্ন বা সংশয় কানে তুলতেই নারাজ। বরং তাঁর দাবি, “দীর্ঘ কাল ধরে লোকসানে চলা বিভিন্ন নিগমকে চাঙ্গা করতে রূপরেখা তৈরি হয়েছে। নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হলে আখেরে লাভই হবে।” মন্ত্রী অগ্রগতির উদাহরণও দিয়েছেন। “দেরিতে বেতন দেওয়ার সমস্যা মিটেছে। এখন মাসের গোড়াতেই মাইনে পাচ্ছেন নিগমের কর্মীরা।” বলছেন মদনবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.