দমদম অঞ্চলে বাসে করে গেলে কন্ডাক্টর স্টপেজগুলোর নাম হাঁকে ছাতাকল, দড়িকল, ম্যাচকল, রডকল, সুতোকল...। কোনও কলের অস্তিত্বই আজ আর নেই। রডকলে এখন ডায়মন্ড প্লাজা। ওখানে চমকিত আবাসন, সামনে কে এফ সি। চিকেনভাজা খেতে আসে ফ্যাশানি মানুষ। ওখানে শপিং মল, দু-তিনশো টাকা টিকিটের সিনেমা হল। সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম সস্ত্রীক, রিকশায়। রিকশাওয়ালার বয়স হয়েছে। প্যাডেল পারছিল না, তবু হাঁপাতে হাঁপাতে শো-এর আগেই ঠিক পৌঁছে দিল। ফেরার সময় আবার ওকেই পেলাম। বসলাম। ঝাঁ-চকচকে বিদেশি খাবারের দোকানটার সামনে দিয়ে প্যাডেল করার সময় বলল, এখানেই ছিল আমার দোকান।
কীসের দোকান? বলল, তেলেভাজার।
ওরা উঠিয়ে দিয়েছিল বুঝি? মৃদু ঘাড় নাড়ল। শীত পড়েছে, গায়ে গরম জামা নেই। চাদর জড়ানো। চাদরটাও ফুটোময়। আমার স্ত্রী আমায় বলল ঘরে তো পুরনো সোয়েটার সব পড়ে আছে, হালকা করলে পারো তো। আলমারি হালকা করার জন্য বাড়ি ফিরে ওকে দুটো পুরনো সোয়েটার দিই। ও অঞ্জলি পেতে নেয়। আমাদের এলাকাতেই রিকশা চালায় বলে ওর সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখাও হয়ে যাচ্ছিল। গায়ে আমার দেওয়া সোয়েটার। ওর মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি।
এক দিন দেখি, রাস্তায় সিপিএমের একটা মিটিং হচ্ছে, সামনে গোটা পঞ্চাশ লাল রঙের প্লাস্টিক চেয়ার। অর্ধেকই খালি। আমার রিকশাওয়ালা বসে আছে। এখন তো প্রায় সব রিকশাওয়ালারা, অটোওয়ালারা তৃণমূলের ইউনিয়ন করে। ও মন দিয়ে গাঁকগাঁক শুনছে।
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
আর এক দিন দেখলাম, আমাদের এলাকার এক বৃদ্ধাকে রিকশায় চড়িয়ে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। ওদের দুজনার চলন্ত কথা শুনলাম। বৃদ্ধা বলছেন তুমি তো জানোই, তোমারে পয়সা দিতে পারতাম না। রিকশাওয়ালা বলছে তুমি দিতে চাইলেও নেব নাকি আমি...। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগল, যে দিন থ্যালাসেমিয়া ক্যাম্পে একটা ১০০ টাকার নোট বাড়িয়ে বলল এটা আমি দিলাম। তখনই নামটা জানলাম: দারোগা দাস। আমি অবাক তাকালাম।
এর মাসখানেক পর গতকালই দেখা। রিকশায় নয়, চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে। বলি, কী দারোগাবাবু, এত দিন ছিলে কোথায়?
দারোগা রিকশাওয়ালা বলল, একটা বড় কাজ সেরে ফেললাম। ছোট মেয়েটার বিয়ে ঠিক করে ফেললাম। জামাই সাইকেল মেকানিক, আর মেয়েটার কানে শোনার যন্তরটাও কিনে ফেললাম। ওটাই যৌতুক। কমুনিস্ কিনা, পণ দিয়ে বিয়ে দেব না।
ইন্টারেস্টিং। ওর জীবনকাহিনি শুনলাম।
ও ছিল শ্রমিক। রডকলে নয়, রডকলের অনুসারী একটা কারখানায় কাজ করত। রডকল বন্ধ হয়ে যাবার কিছু দিন পর ওর ছোট কারখানাটাও বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ কারখানার গেটে ঝান্ডা বেঁধে অনেক দিন বসে রইল, তার পর তেলেভাজার দোকান। তেলেভাজার দোকানটা উঠিয়ে দিতে হল, যখন রডকলে প্রোমোটিং শুরু হল। ২০০২ সাল। এর পর কমরেডরা বলল, পার্টি অফিসের সামনে দোকানটা তুলে নিয়ে এসো। দোকান মানে তো কড়াই, উনুন আর প্লাস্টিকের ছাউনি। কমরেডরা মুড়ি-তেলেভাজা খেত আর চিন-রাশিয়া-ইজরায়েল করত। দু-এক জন কমরেড বাইকে আসত।
ওরা প্রোমোটার। ওরা তেলেভাজা না আনিয়ে বার্গার, পেস্ট্রি, এ সব আনাত। মোহিনী মিলের শ্রমিকও শ্রমিক, আবার এয়ার ইন্ডিয়ার শ্রমিকও শ্রমিক। এই শ্রমিকের গায়ের গন্ধ আলাদা। এই সব শ্রমিকরা আইসক্রিম খায়। কিন্তু সবাই কমরেড। বড় বড় দুটো কেক-পেস্ট্রি-বার্গারের দোকান হয়ে গেল। আর ফুলুরি-মুড়ি নয়, ওসব সস্-ঢালা খাবার খেতে খেতে চিন-রাশিয়া-ইজরায়েল করত। ওরা বাবরিতেও ছিল, রাবড়িতেও ছিল। ও তবু ঘাড় গুঁজে তেলেভাজা ভাজত। খদ্দের রিকশাওয়ালারা, কাজ ফেরত ঝি-রা, কখনও পুরনো দিনের কমরেডরা। একটা মেয়ের বিয়ে দিল। ছোট মেয়েটা তখন ১৪ বছরের। ওর বউ আলু সেদ্ধ করে, মশলা দিয়ে আলুর চপের লেচি করত, আর ছোট মেয়েটা থালায় করে কাপড় চাপা দিয়ে দোকানের সামনে নিয়ে আসত।
একদিন টিপ টিপ বৃষ্টি, ছোট মেয়েটা চপের থালাটা এনেছে লাল ঝান্ডাটা দিয়ে ঢেকে। ঝান্ডার কাপড়ে চপ ঢেকেছিস? মাথা গরম হয়ে গেল। ঠাটিয়ে চড় মারল মেয়েটার কানের গোড়ায়। মেয়েটা বলেছিল, আমার কী দোষ? লাল কাপড়টা তো এমনি এমনি পড়ে ছিল ঘরের কোনায়। তখন ২০০৭। ‘ওর কানের পরদাটা গেল ফেটে। একটা মেশিন কেনার পয়সা জোগাড় হচ্ছিল না। ইতিমধ্যে বিয়েটাও ঠিক করে ফেললাম। খরচা তো আছে। বেচে দিলাম একটা কিডনি। এ বার মেয়েটা সুখে থাক।’
ঝপ করে দু’ফোঁটা জল বেরিয়ে এল ওর চোখ থেকে। পকেট থেকে একটা লাল কাপড়ের রুমাল বের করল। কোনায় সুতোর এমব্রয়ডারি করা কাস্তে হাতুড়ি। রুমালেও কাস্তে হাতুড়ি! জিজ্ঞাসা করলে ও বলে মেয়েটাই করে দিয়েছিল, সুতোয়-সুতোয়। ভালবাসি বলে। রুমালটা শুষে নেয় আঁখিজল।
২৩
৪৮০০০০০০০
২০১৪
১৭০০০০০০


২৫৮৩
৩১

১০১০

১০৬৭



সী


চৌ
ধু
রী
সমস্যা থাকবেই, সেটার দাওয়াই
একা দিদি জানে। আর তোমরাও তাই
ওতে মাথা ঘামিয়ো না। সকাল বিকাল
মন দিয়ে দেখো শুধু টিভি সিরিয়াল।
‘অভিযোগটাই আসল কথা। বিচার ছাড়াই শাস্তি হোক!’
সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠে একমত হয় সব শাসক।
সব্বাইকে চটিয়েছিলেন
তাই কি তিনি কমন ভিলেন?
কে বলবে আজ সত্যি তিনি ভণ্ডাশোক না ধর্মাশোক?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.